শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে প্রথম ও ক্যারিয়ারের পঞ্চম সেঞ্চুরি করেছেন সাকিব আল হাসান। তার সেঞ্চুরির সঙ্গে সৌম্য সরকার, মুশফিকুর রহিম ও মোসাদ্দেকের হাফসেঞ্চুরিতে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে এগিয়ে গেল বাংলাদেশ। এ গুরুত্বপূর্ণ ইনিংসগুলোয় ভর করে প্রথম ইনিংসে ১১৬ রানের লিড নিয়েছে সফরকারীরা।
১৮ রানে দিন শুরু করে মুশফিকের সঙ্গে ৯২ ও মোসাদ্দেককে নিয়ে ১৩১ রানের জুটি গড়েন সাকিব। ১৪৩তম বলে নবম বাউন্ডারি মেরে তিন অঙ্কের ঘরে পৌঁছান এ অলরাউন্ডার। তবে সেঞ্চুরির পর বেশিদূর এগোতে পারেননি সাকিব। ১১৬ রানে লাকশান সান্দাকানের বলে দিনেশ চান্ডিমালের ক্যাচ হন। ১৫৯ বলে ১০ চারে সাজানো তার ইনিংসটি থামে। এরপরে অষ্টম উইকেটে দলকে এগিয়ে নেন অভিষিক্ত মোসাদ্দেক। মিরাজকে সঙ্গে নিয়ে অষ্টম উইকেটে জুটি গড়তে থাকেন। এই জুটি যখন ৩৩ রানে দাঁড়িয়ে তখনই আঘাত হানেন রঙ্গনা হেরাথ। তার জোড়া আঘাতে পর পর ফেরেন মিরাজ (২৪) ও মুস্তাফিজুর (০)। প্রথমে মিরাজকে এলবিডব্লুতে রিভিউতে ফেরান। এরপর মুস্তাফিজকেও লেগ বিফোরের ফাঁদে ফেলেন লঙ্কান এই স্পিনার। এরমধ্য দিয়ে প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে হাজার উইকেট পূরণ করলেন লঙ্কান অধিনায়ক। বাংলাদেশের সংগ্রহ ১২৯ ওভারে ৯ উইকেটে ৪৫৪ রান করেছে বাংলাদেশ।
শুক্রবার তৃতীয় দিনের প্রথম সেশনেও বেশ সন্তোষজনক ব্যাটিং করে বাংলাদেশ, ২৮ ওভারে মাত্র ১ উইকেট হারিয়ে ১০২ রান যোগ হয়। ২২ রানে পিছিয়ে থেকে লাঞ্চে যায় সফরকারীরা। ফিরে এসে সাকিব ও মোসাদ্দেকের জুটিতে লিড নেয় মুশফিক বাহিনী।
সাকিব আউট হওয়ার পর মোসাদ্দেককে (৫৯*) সঙ্গ দিতে নেমেছেন মেহেদী হাসান মিরাজ (৫*)। এর আগে টেস্ট ক্যারিয়ারের প্রথম ম্যাচে সুরাঙ্গা লাকমলকে চার মেরে দলকে লিড এনে দেন মোসাদ্দেক। প্রথম শ্রেণীর ক্রিকেটে তিনটি ডাবল ও দুটি দেড়শ রানের ইনিংসসহ ৭ সেঞ্চুরি হাঁকানো এ ডানহাতি ৮৪ বলে ক্যারিয়ারের প্রথম টেস্টে পঞ্চাশ ছোঁন ৬ চার ও ১ ছয় মেরে। অভিষেক ম্যাচে ৮ নম্বর ব্যাটসম্যান হিসেবে সেরা ইনিংসের মালিকও হন তিনি।
শ্রীলঙ্কার ৩৩৮ রানের জবাব দিতে নেমে বৃহস্পতিবার দ্বিতীয় দিন দারুণ শুরু করেছিল বাংলাদেশ। কিন্তু শেষ সেশনে মাত্র ৬ রানের ব্যবধানে তিন উইকেট হারিয়ে বিপদে পড়ে তারা। সেই বিপদ থেকে তৃতীয় দিন দলকে টেনে তুলেছেন অধিনায়ক মুশফিক ও সাকিব। শতাধিক রানের জুটি গড়ার পথে ছিলেন তারা। কিন্তু মুশফিক আউট হওয়ায় সেটা আর হয়নি।
শতক ছুঁই ছুঁই জুটি গড়ার পথে মুশফিক ক্যারিয়ারের ১৭তম ফিফটি পান। ৬৬তম বলে একটি বাউন্ডারি মেরে পঞ্চাশ ছোঁন অধিনায়ক। এর পর আর দুটি রান যোগ করেই সুরাঙ্গা লাকমলের বলে বোল্ড হন মুশফিক (৫২)। তার ইনিংস সাজানো ৮১ বলে ৬টি চারে। সাকিবের সঙ্গে তার জুটিটি ছিল ৯২ রানের।
মুশফিক মাঠ থেকে চলে যাওয়ার কিছুক্ষণ পর সাকিব ফিফটি পান। ৬৯ বলে হাফসেঞ্চুরি করেন এ অলরাউন্ডার। পরের পঞ্চাশ রান করতে তিনি আরও ৭৪ বল খেলেন।
মূলত মুশফিক ও সাকিবের ব্যাটেই স্বস্তিতে ফিরেছে বাংলাদেশ। ১৯৮ রানের মধ্যে ৫ উইকেট হারিয়েছিল তারা। শুক্রবার ৫ উইকেটে ২১৪ রানে তৃতীয় দিনের খেলা শুরু করে সফরকারীরা। প্রথম সেশন শেষে স্কোরবোর্ড বলছে, দুই অভিজ্ঞ ব্যাটসম্যানের নৈপুণ্যে কিছুটা হলেও চাপ কমেছে।
এর আগে দ্বিতীয় দিন দ্বিতীয় সেশনে শ্রীলঙ্কাকে জবাব দিতে গিয়ে দারুণ শুরু করেছিল বাংলাদেশ। তামিম ইকবাল ও সৌম্য সরকারের ব্যাটে বেশ স্বতঃস্ফূর্ত মনে হয়েছিল তাদের। শ্রীলঙ্কার তিনশতাধিক রানের জবাবে শতরানের জুটি গড়ার পথে ছিলেন তারা। কিন্তু হয়নি। বরং দিন শেষে উল্টো হতাশার গ্লানি নিয়ে মাঠ ছাড়ে সফরকারীরা।
মাত্র ৬ রান যোগ করতেই ইমরুল কায়েস, তাইজুল ইসলাম ও সাব্বির রহমানের আউটে ভুগতে হয়েছে বাংলাদেশকে। শেষ সেশনে দ্রুত তিন উইকেট পড়ে যাওয়ায় আশার আলো নিভু নিভু হতে শুরু করেছে। কিন্তু সব হতাশা কেটে গেছে সাকিব, মুশফিক ও মোসাদ্দেকের ব্যাটে।