দেশের খবর: এইডিস মশার আবাসস্থল ধ্বংস করা ও ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে ঢাকাসহ সারা দেশে ব্যাপকভাবে মশার ওষুধ ছিটাতে সরকারকে নির্দেশ দিয়েছে হাই কোর্ট।
বিচারপতি তারিক উল হাকিম ও বিচারপতি মো. সোহরাওয়ার্দীর হাই কোর্ট বেঞ্চ বুধবার এ আদেশ দেয়।
রাষ্ট্রপক্ষ ও দুই সিটি কর্পোরেশনের আইনজীবীর আবেদনে ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে সরকার বা ঢাকার দুই সিটি কর্পোরেশনের অবহেলা আছে কি না, অবহেলা থাকলে তার দায় কার, মশা নিয়ন্ত্রনে কার কী দায়িত্ব তা তদন্তে কমিটি গঠন বিষয়ে কোনো আদেশ দেয়নি হাই কোর্ট।
আগামী ১৬ অক্টোবর পরবর্তী আদেশের জন্য দিন রেখে এ সময়ের মধ্যে ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে সরকারের নেওয়া পদক্ষেপের অগ্রগতি জানাতে নির্দেশ দেয় আদালত।
ডেঙ্গু নিয়ে শুনানির মধ্যে বেঞ্চের জ্যেষ্ঠ বিচারক বলেন, “লোক মারা যাচ্ছে। মিডিয়ায় প্রতিদিন মৃত্যুর খবর আসছে। শিশু, বৃদ্ধসহ সাধারণ মানুষ অপ্রত্যাশিত যন্ত্রণার শিকার। সরকার ও সিটি কর্পোরেশনের অবহেলার কারণেই এটা হয়েছে। তাই বিষয়টি তদন্ত হতে হবে। তবে আপনারা (আইনজীবী) যেহেতু বলছেন, বন্ধের পরে তদন্তের বিষয়ে আদেশ দিতে। তাই এ বিষয়ে আদেশ প্রদান স্থগিত রাখা হল।”
আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে আইনজীবী ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল কাজী মাঈনুল হাসান। ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের (ডিএসসিসি) পক্ষে ছিলেন আইনজীবী বারেক চৌধুরী এবং ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) পক্ষে ছিলেন আইনজীবী তৌফিক ইনাম টিপু
শুনানিতে আদালত বলেছে, “প্রয়োজন হলে সারা দেশে এক বা দুই দিনের জন্য স্কুল-কলেজ, অফিস-আদালত ছুটি ঘোষণা করে সর্বস্তরের মানুষকে সঙ্গে নিয়ে একযোগে অভিযান পরিচালনা করতে হবে।”
এদিকে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর এক প্রতিবেদন দিয়ে হাই কোর্টকে জানিয়েছে, গত পহেলা জানুয়ারি থেকে গত ২১ অগাস্ট পর্যন্ত সারা দেশে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে ৪৭ জন মারা গেছে। এ সময় সারা দেশে ৫৭ হাজার ৯৯৫ জন ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছে।
গত ২৬ অগাস্ট ডিএসসিসির আইনজীবীর মৌখিক প্রস্তাবের ভিত্তিতে ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থতার দায় নির্ধারণে তদন্ত কমিটি গঠন বিষয়ে আদেশের জন্য বুধবার দিন রেখেছিল আদালত।
তবে দুই সিটি কর্পোরেশন ও রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীরা এখন আদেশ না দেওয়া পক্ষে যুক্তি দেখিয়ে আদালতে বলেন, এই মুহূর্তে তদন্ত কমিটি গঠন করা হলে মশা নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রম বাধাগ্রস্ত হবে। যেসব কর্মকর্তারা মাঠে নেমে কাজ করছেন তাদের টেবিলে ফিরে যেতে হবে।
ডিএনসিসির আইনজীবী বলেন, “ঢাকা উত্তর সিটিতে চিরুনি অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে। একদিনে ছত্রিশ কর্মচারীর সমন্বয়ে ৭০টি টিম করে ৯ হাজার ৬০০ বাড়িতে অভিযান পরিচালনা করা হয়েছে। এই অভিযানে অনেকের বাড়িতেই এইডিস মশার লার্ভা পাওয়া গেছে।”
এ সময় বেঞ্চের কনিষ্ঠ বিচারক জানতে চান, এই অভিযানে কোনো লাভ হচ্ছে কি না।
জবাবে আইনজীবী তৌফিক ইনাম টিপু বলেন, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর প্রতিবেদন দিয়েছে। তাতে দেখা যায়, আগের চেয়ে কমেছে।
এ সময় বিচারক মো. সোহরাওয়ার্দী বলেন, “ঢাকার বাইরেতো বাড়ছে। তাই মালয়েশিয়ার মতো আমাদেরও সারা দেশে একদিন বা দুইদিনের জন্য স্কুল, কলেজ, অফিস, আদালত বন্ধ রেখে সর্বস্তরের জনগণকে সঙ্গে নিয়ে একযোগে কাজ করতে হবে। এটা করা গেলে হয়ত এইডিস মশা নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হবে।”
এ সময় জ্যেষ্ঠ বিচারক বলেন, “সরকার নিজেই ফেব্রুয়ারি থেকে বলছে, ডেঙ্গু বাড়বে। কিন্তু তা বন্ধে কোনো পদক্ষেপ নেয়নি। এ কারণে সারা দেশে ডেঙ্গু ছড়িয়ে পড়েছে। এ কারণেই দায় নির্ধারণে তদন্ত কমিটি করা প্রয়োজন।”
তখন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, বন্ধের পরে এ বিষয়ে আদালত সিদ্ধান্ত নিলে ভালো হয়।
বিচারক বলেন, “সংবাদ মাধ্যমে দেখছি, প্রতিদিন ৩ থেকে ৪ জন করে মানুষ মারা যাচ্ছে।”
রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী বলেন, “এই পরিসংখ্যান ঠিক না। শুধুই ডেঙ্গুতে মরছে না। অন্য রোগেও মারা যাচ্ছে।”
জ্যেষ্ঠ বিচারক প্রশ্ন করেন, সংবাদ মাধ্যম ভুল রিপোর্ট করলে সরকার প্রতিবাদ জানায় না কেন?
জবাবে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল সংবাদ মাধ্যমের প্রশংসা করে বলেন, “সংবাদ মাধ্যম রিপোর্ট করার কারণেই সচেতনতা বেড়েছে। সরকারও পদক্ষেপ নিচ্ছে।”
বেঞ্চের কনিষ্ঠ বিচারক তখন বলেন, “আমরা গণমাধ্যমে দেখেছি যে, স্বাস্থ্য কর্মীরা কারও কারও বাড়িতে ঢুকতে পারেনি।”
ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল কাজী মাঈনুল হাসান বলেন, “হয়ত ব্যক্তিগত কারণে এটা হতে পারে। তবে সকলেরই ঢুকতে দেওয়া উচিত নিজের স্বার্থেই। কারণ স্বাস্থ্য কর্মীরা যাচ্ছে তাদেরই (জনগণ) সুবিধার জন্য।
এরপর আদালত আদেশ দেয়।