ক্রীড়া ডেস্ক: লিওনেল মেসির ওপর চার ম্যাচের নিষেধাজ্ঞা। এরপর প্রথম ম্যাচেই বলিভিয়ার কাছে ২-০ গোলে হেরে গেল আর্জেন্টিনা। রাশিয়া বিশ্বকাপ বাছাই পর্বে লাতিন আমেরিকা অঞ্চলে ১৪ ম্যাচ শেষে ২২ পয়েন্ট নিয়ে পঞ্চম স্থানে রয়েছে আর্জেন্টাইনরা। বিশ্বকাপে খেলতে হলে শীর্ষ চারের মধ্যে থাকতে হবে। পঞ্চম স্থানে থাকলেও একটা সম্ভাবনা থাকে। প্লে অফ খেলে বিশ্বকাপে খেলার যোগ্যতা অর্জনের সুযোগ পাবে তারা। তবে পরিস্থিতি যা দাঁড়িয়েছে তাতে আর্জেন্টিনা সেরা পাঁচে থাকতে পারবে কি না তা নিয়েও রয়েছে ঘোর সংশয়। লিওনেল মেসির চার ম্যাচের নিষেধাজ্ঞা যেন আর্জেন্টিনার বিশ্বকাপ থেকে ছিটকে পড়ারই বার্তা দিচ্ছে। চার ম্যাচ নিষেধাজ্ঞার মধ্যে একটি ইতোমধ্যে শেষ হয়ে গেছে। বাকি আরও তিন ম্যাচ। এ তিন ম্যাচের একটি কঠিন প্রতিপক্ষ উরুগুয়ের বিপক্ষে (৩১ আগস্ট, ২০১৭), তাদেরই মাঠে। অর্থাৎ অ্যাওয়ে ম্যাচ। বিশ্বকাপ বাছাই পর্বে অ্যাওয়ে ম্যাচে আর্জেন্টিনার কী অবস্থা হয়, সেটা ইতোমধ্যেই সবার জানা হয়ে গেছে। পেরু (৫ অক্টোবর, ২০১৭) আর ভেনেজুয়েলার (৫ সেপ্টেম্বর, ২০১৭) বিপক্ষে আর্জেন্টাইনরা খেলবে ঘরের মাঠে। এর মধ্যে ভেনেজুয়েলার বিশ্বকাপে খেলতে পারবে না যে তা নিশ্চিত হয়ে গেছে। ১৪ ম্যাচ শেষে পেরুর পয়েন্ট ১৮। বিশ্বকাপে খেলার সম্ভাবনা এখনও টিকে রয়েছে তাদের। ঘরের মাঠে এই দলটির মোকাবেলা করলেও মেসিহীন আর্জেন্টিনা মানসিকভাবেই থাকবে অনেক পিছিয়ে। হিগুয়াইন, ডি মারিয়া কিংবা আগুয়েরোদের এই দলটির বিপক্ষেও জেতা হবে খুব কঠিন। ধরা যাক, ঘরের মাঠে পেরু এবং ভেনেজুয়েলার বিপক্ষে সহজেই জয় পেল আর্জেন্টিনা। অপরদিকে পয়েন্ট টেবিলে তাদের ওপরে থাকা কলম্বিয়া, চিলি এবং উরুগুয়েও বসে থাকবে না। তাদেরও ম্যাচ আছে এর মধ্যে। চিলি নিজেদের মাঠে খেলবে প্যারাগুয়ে এবং ইকুয়েডরের বিপক্ষে। বলিভিয়ার মাঠে গিয়ে খেলবে এক ম্যাচ। এর মধ্যে দুই ম্যাচ জিতলেও তারা থাকবে আর্জেন্টিনার ওপরে।কলম্বিয়া এর মধ্যে নিজেদের মাঠে খেলবে ব্রাজিল এবং প্যারাগুয়ের বিপক্ষে। আবার ভেনেজুয়েলার বিপক্ষে খেলবে তাদের মাঠে গিয়ে। এর মধ্যে দুই ম্যাচ জিতলেও তারা থাকবে আর্জেন্টিনার ওপর। অন্যদিকে উরুগুয়ে তো এক ম্যাচে নিজেদের মাঠেই স্বাগত জানাবে আর্জেন্টিনাকে। আরও দুই ম্যাচে খেলবে তারা প্রতিপক্ষের মাঠে গিয়ে। একটি প্যারাগুয়ে এবং অন্যটি ভেনেজুয়েলার বিপক্ষে। আর্জেন্টিনা এই তিন ম্যাচে যদি অবস্থানের পরিবর্তন করতে না পারে তাহলে বিশ্বকাপে খেলার জন্য শেষ ম্যাচই হবে তাদের জন্য ভাগ্য নিয়ন্ত্রক। ওই ম্যাচেই হয়তো ফিরবেন মেসি; কিন্তু যে বলিভিয়ার লাপাজে গিয়ে, উচ্চতা সমস্যার কারণে হেরে এসেছে আর্জেন্টিনা, তেমনই আরেকটি শহর কুইটোতে গিয়ে খেলতে হবে মেসিদের। স্বাগতিক ইকুয়েডরের বিপক্ষে ওই ম্যাচটি বলিভিয়ার চেয়ে কোনো অংশেই কম কঠিন হবে না। এবার আসা যাক, মেসির উপস্থিতি এবং অনুপস্থিতিতে বিশ্বকাপ বাছাই পর্বে কেমন করেছিল আর্জেন্টিনা? বিশ্বকাপ বাছাই পর্বে মোট ৬টি ম্যাচ খেলেছিলেন মেসি। এর মধ্যে ৫টিতে জিতেছে আর্জেন্টিনা এবং হেরেছে একটিতে। তাকে ছাড়া আলবিসেলেস্তেরা খেলেছে আট ম্যাচ। এর মধ্যে জিতেছে মাত্র একটিতে। তিনটিতে ড্র করেছে। হেরেছে বাকি চারটিতে। টানা তিনটি বড় টুর্নামেন্টের ফাইনালে খেলা (২০১৪ বিশ্বকাপ ফাইনাল এবং টানা দুই বছরে দুটি কোপা আমেরিকা ফাইনাল) আর্জেন্টিনা কী তাহলে রাশিয়া বিশ্বকাপে খেলতেই পারবে না? পরিসংখ্যান বলছে মেসি যদি দলে থাকেন, তাহলে এই দলটিকে হারানো যে কারও পক্ষে কঠিন। মেসি থাকলে বিশ্বকাপ বাছাই পর্বে অন্তত তিনটিতে তো জিতবেই আর্জেন্টিনা, এটা চোখ বন্ধ করে বলা যেতো। তাহলে বিশ্বকাপে খেলার যোগ্যতা অর্জন নিয়ে প্রশ্নই ওঠার সুযোগ থাকতো না। কিন্তু মেসিছাড়া আর্জেন্টিনা দলটি যে পুরোপুরি ছন্নছাড়া, তা সাম্প্রতিক পরিসংখ্যান দেখলেই বোঝা যায়। চিলির বিপক্ষে ১-০ গোলে জয়ের পর দলটির কোচ এদগার্দো বাউজা বলেছিলেন, ‘আর্জেন্টিনা আর মেসি নির্ভর নয়।’ কিন্তু বলিভিয়া প্রমাণ করে দিল, আর্জেন্টিনা কতটা মেসি নির্ভর। চার ম্যাচের নিষেধাজ্ঞা এমন এক সময়ে এসেছিল, যখন আপিল করার সুযোগ ছিল না আর্জেন্টিনার সামনে। কারণ, একটু পরই বলিভিয়ার বিপক্ষে মাঠে নামতে হয়েছিল তাদেরকে। বাকি তিন ম্যাচ নিয়ে আপিল করবে আর্জেন্টাইন ফুটবল ফেডারেশন। এই আপিলে যদি মেসির শাস্তি কমানো না হয়, তাহলে ভবিষ্যৎবাণী করাই যায়, আর্জেন্টিনার বিশ্বকাপ খেলা গভীর শঙ্কায়।
পূর্ববর্তী পোস্ট