নিজস্ব প্রতিবেদক: আগামী ১২ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিতব্য জেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলনে সাতক্ষীরা জেলা সভাপতি পদে যেসব নেতাদের নাম আলোচিত হচ্ছে তার শীর্ষে আছেন সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী ডা. আ ফ ম রুহুল হক এমপি। আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ঘনিষ্ঠ, উচ্চ শিক্ষিত, জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে সুখ্যাতি সম্পন্ন সর্বোপরি সফল ও বর্ণাঢ্য ক্যারিয়ারের কারণে তার মত ব্যক্তি সাতক্ষীরা জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি হলে সাতক্ষীরা জেলা আওয়ামী লীগ এক অনন্য উচ্চতায় পৌঁছতে পারবে বলে মনে করেন দলটির তৃণমূলের নেতা-কর্মীবৃন্দ এবং শুভাকাঙ্খীরা।সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রী ভিডিও কন্ফারেন্সের মাধ্যমে সাতক্ষীরা বাইপাস সড়ক উদ্বোধন করার সময় ডা. আ ফ ম রুহুল হককে ডেকে নিয়ে পাশে বসান এবং তাকে দেশবাসীর সামনে পরিচয় করিয়ে দেন। লাইভে এমন দৃশ্য দেখে সাতক্ষীরাবাসীও আশান্বিত হয়েছে এই ভেবে যে, তাদের অন্তত এমন একজন নেতা আছেন যিনি দেশের প্রধানমন্ত্রীর আস্থাভাজন।
একটি জেলার সার্বিক উন্নয়নের জন্য সেই জেলা জাতীয়ভাবে পরিচিতি থাকা প্রভাবশালী নেতৃত্ব থাকা জরুরি। এসকল বিবেচনায় সাতক্ষীরা জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি পদে এই মূহূর্তে সবচেয়ে আলোচিত নাম দলটির কেন্দ্রীয় উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য, কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য ও জনসংখ্যা বিষয়ক উপ-কমিটির চেয়ারম্যান এবং জাতীয় সংসদের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি ডা. আ ফ ম রহুল হক এমপি। তিনি বর্তমানে সাতক্ষীরা-৩ আসনের টানা তিনবারের সংসদ সদস্য এবং দেশের ইতিহাসের সফলতম স্বাস্থ্যমন্ত্রী ছিলেন।
অধ্যাপক ডাঃ আ ফ ম রুহুল হক সাতক্ষীরা জেলার কালিগঞ্জ উপজেলার নলতায় ১৯৪৪ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতার নাম মরহুম নজির আহমদ ও মাতার নাম মরহুমা আছিয়া খাতুন।
তাঁর শৈশব কেটেছে খানবাহাদুর আহ্ছানউল্লা (রঃ) এর পূণ্যভূমি নলতাতে। তিনি নলতা মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে ১৯৫৯ সালে এসএসসি এবং ১৯৬১ সালে ঢাকার নটরডেম কলেজ থেকে এইচএসসি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। তিনি ১৯৬৮ সালে ঢাকা মেডিকেল কলেজ থেকে এমবিবিএস পাস করেন। তিনি ঢাকা মেডিকেল কলেজ ছাত্র সংসদের নির্বাচিত ভিপি ছিলেন। মজার ব্যাপার হচ্ছে তিনি যখন ঢাকা মেডিকেল কলেজের ভিপি তখন বর্তমান প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা ইডেন কলেজের ভিপি ছিলেন। তখন থেকেই বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ডা. রুহুল হককে ভালোভাবে চিনতেন। পরবর্তীতে ১৯৭১ সালে ২৫ মার্চ কালো রাতে পাক হানাদার বাহিনী ঢাকায় গণহত্যা শুরু করলে ডা. রুহুল হক সেসময় ঢাকা হলি ফ্যামিলি হাসপাতালে আবাসিক চিকিৎসক হিসেবে আহতদের চিকিৎসায় অসামান্য ভূমিকা রাখেন। পাকিস্তানি বাহিনী ও তাদের দোসররা মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে একাধিকবার ডা. রুহুল হককে আটক করার চেষ্টা করে। কারণ দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে ঢাকায় আসা শিক্ষাবিদ, চিকিৎসক ও বুদ্ধিজীবীদের সাথে তিনি নিবিড় সম্পর্ক রাখতেন এবং অনেকেই গোপনে তার কাছে আসতেন। ২০০৪ সালে বিএনপি-জামাত জোট সরকারের সময় ২১ অগাস্টের নৃশংস গ্রেনেড হামলায় আহতদের চিকিৎসায় ডা. রুহুলহেকের প্রশংসনীয় ভূমিকার কথা সবারই জানা।
ডা. রুহুল হক লন্ডন, আমেরিকা ও বাংলাদেশ থেকে এফআরসিএস, এফআইসিএস এবং এফসিপিএস ডিগ্রী অর্জন করে মানব সেবায় নিজেকে নিয়োজিত করেন। এবং চিকিৎসক হিসেবে তাঁর সুনাম ছড়িয়ে পড়ে বাংলাদেশসহ দেশের বাইরে। পরবর্তীতে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রী হিসেবে বাংলাদেশের স্বাস্থ্য ব্যবস্থাকে ঢেলে সাজিয়ে তিনি এক অনন্য উচ্চতায় পৌঁছে দেন।
কর্মজীবনের শুরুতে তিনি ১৯৭০ থেকে ১৯৭১ সাল পর্যন্ত ঢাকা হলি ফ্যামিলি হাসপাতালে আবাসিক সার্জন হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। মহান মুক্তিযুদ্ধে পাকিস্তানি বাহিনীর বর্বরতার শিকার শত শত মানুষকে এসময় তিনি চিকিৎসা সেবা প্রদান করেন। ১৯৭২ থেকে ১৯৮১ সাল পর্যন্ত লন্ডনের “এসএইও এন্ড রেজিস্ট্রার ইন অর্থোপেডিক্স অক্সফোর্ড” হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৮১ থেকে ১৯৯৬ সাল পর্যন্ত তিনি ঢাকার পঙ্গু ও পুনর্বাসন হাসপাতাল এবং ঢাকা মেডিকেল কলেজে অর্থোপেডিক্সের বিভাগীয় প্রধান এবং সহযোগী অধ্যাপক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৯৬ থেকে ১৯৯৯ সাল পর্যন্ত পঙ্গু ও পুনর্বাসন হাসপাতালের পরিচালক ও অধ্যাপক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৯৯ থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থোপেডিক্স বিভাগের চেয়ারম্যান ও বিভাগীয় প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। এবং পরবর্তীতে সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে কনস্যালট্যান্ট (অর্থোপেডিক্স) হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
অধ্যাপক ডাঃ আ ফ ম রুহুল হক রাজনৈতিক জীবনে সর্বপ্রথম ১৯৬৭ সালে ঢাকা মেডিকেল কলেজ ছাত্র সংসদের ভিপি নির্বাচিত হন। ২০০১ সালে তিনি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগে যোগদান করেন এবং জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নৌকা প্রতীকে নির্বাচন করেন। ২০০৮, ২০১৪ ও ২০১৯ সালের জাতীয় নির্বাচনে নৌকা প্রতীক নিয়ে অংশগ্রহণ করেন এবং এমপি নির্বাচিত হন। ২০০৯ সাল থেকে তিনি বাংলাদেশ সরকারের স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের পূর্ণ মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পান। এবং ২০০৩ থেকে স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি নির্বাচিত হয়ে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেন ও বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের সাতক্ষীরা জেলার সিনিয়র সহ-সভাপতি হিসেবে সততা ও নিষ্ঠার সাথে দায়িত্ব পালন করছেন। তিনি একাধারে আওয়ামীলীগের উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য এবং কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য ও জনসংখ্যা বিষয়ক উপ-কমিটির সম্মানিত সভাপতিও। ২০০৪ সালের ভয়াবহ গ্রেনেড হামলায় আহত আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীদের চিকিৎসায় তার অনবদ্য অবদানের জন্য তিনি আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অত্যন্ত আস্থাভাজন।
বঙ্গবন্ধুর আদর্শকে বুকে ধারণ করে তিনি স্বাস্থ্যখাতে অভাবনীয় উন্নয়নে অবদান রাখায় দেশ ও দেশের বাইরে থেকে বঙ্গবন্ধু স্মৃতি স্বর্ণপদক, জাতিসংঘ মিলেনিয়াম ডেভেলপমেন্ট গোল অ্যাওয়ার্ড, শিশুদের টিকাদান কর্মসূচির সাফল্যের জন্য গ্যাভি বোর্ড’র পুরষ্কারসহ অসংখ্য পদক ও পুরষ্কার পেয়েছেন। নিজ নির্বাচনী এলাকায় শক্ত হাতে নৌকার হাল ধরে এগিয়ে নিয়েছেন জেলা আওয়ামী লীগকে। স্বপ্নের মেডিকেল কলেজ গড়ে তুলে আধুনিক রূপে রূপ দিয়েছেন সাতক্ষীরাকে। জেলার স্কুল, কলেজ, মাদরাসা, এতিখানা, পাঠাগারসহ বিভিন্ন সামাজিক-সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠা ও সংস্কার করে সাতক্ষীরাকে করেছেন আলোকিত। আর শিক্ষা-সংস্কৃতি, ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রসারে তিনি হাট-বাজার, রাস্তা-ঘাটসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানকে সংস্কার করেছেন। অবহেলিত সাতক্ষীরাকে উন্নয়নের মডেল হিসেবে গড়ে তুলতে তিনি সচেষ্ট আছেন। উন্নত সাতক্ষীরা বিনির্মাণে তার অবদান অপরিসীম।
বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাতক্ষীরা জেলার সাধারণ নেতা-কর্মীরা মনে করেন, ডা. রুহুল হকের মত হাইপ্রোফাইল ব্যক্তিএজলা আওয়ামী লীগের সভাপতি হলে সাতক্ষীরা আওয়ামী লীগ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ‘উন্নত বাংলাদেশ’ গড়ার অভিযাত্রায় যথাযথ ভূমিকা পালন করতে পারবে।