বিদেশ ডেস্ক: ভারতের বিতর্কিত নাগরিকত্ব আইনবিরোধী চলমান বিক্ষোভে উত্তর প্রদেশে ছয় জন নিহত হয়েছে। শুক্রবার বিক্ষোভের সময় এই নিহতের ঘটনা ঘটে বলে নিশ্চিত করেছে উত্তর প্রদেশ পুলিশ। তাদের দাবি, নিহতদের কেউই পুলিশের গুলিতে মারা যায়নি। পুলিশের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, বিজনর এলাকায় দুজন, সামবাল, ফিরোজাবাদ, মিরাট ও কানপুরে একজন করে নিহত হয়েছে। তবে টাইমস অব ইন্ডিয়ার খবরে বলা হয়েছে, মিরাট এলাকায় দুজন নিহত হয়েছে।
সম্প্রতি ভারতে নাগরিকত্ব সংশোধন আইন (সিএএ) পাস হয়েছে। আইনটিকে মুসলিমবিরোধী ও বৈষম্যমূলক উল্লেখ করে বিক্ষোভ চলছে দেশটির বিভিন্ন রাজ্যে। আইনটিতে বাংলাদেশ, আফগানিস্তান ও পাকিস্তান থেকে নিপীড়নের মুখে ভারতে পালিয়ে যাওয়া হিন্দু, বৌদ্ধ, শিখ, জৈন, পার্সি ও খ্রিস্টানদের নাগরিকত্ব দেওয়ার কথা বলা হয়েছে। শুরুতে উত্তর-পূর্ব ভারতে বিক্ষোভ হলেও দিল্লির জামিয়া মিলিয়া ইসলামিয়া বিশ্ববিদ্যালয় ও আলিগড় মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী-পুলিশ সংঘর্ষের পর তা বিভিন্ন রাজ্যেও ছড়িয়ে পড়েছে। বিক্ষোভ দমনে বিভিন্ন স্থানে ১৪৪ ধারা জারিসহ সভা-সমাবেশে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হলেও তা উপেক্ষা করে রাস্তায় নামছেন অনেকে। শুক্রবার উত্তর প্রদেশ, দিল্লিসহ বিভিন্ন স্থানে বিক্ষোভ আরও জোরালো হয়েছে।
বৃহস্পতিবার লক্ষ্ণৌ ও সামবালে বিক্ষোভের পর সহিংসতায় তিন জন মারা যাওয়ার পর শুক্রবার পুরো উত্তর প্রদেশই থমথমে হয়ে পড়ে। আগের দিনের সহিংসতায় জড়িত থাকার অভিযোগে প্রায় ৩৫০ জনকে আটক করে পুলিশ।
শুক্রবার সকাল থেকেই রাজ্যজুড়ে শুরু হয় বিক্ষোভ হলেও জুমার নামাজের তা ব্যাপক আকার ধারণ করে। কড়া নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হলেও নামাজের পর উত্তর প্রদেশের ১৩টি জেলায় বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে। হাজার হাজার বিক্ষোভকারী রাস্তায় নেমে আসে। বড় জমায়েত ও পাথর নিক্ষেপকারী বিক্ষোভকারীদের সামাল দিতে পুলিশ লাঠি চার্জ ও টিয়ার গ্যাস ব্যবহার করে।
পুলিশের অভিযোগ, বিক্ষোভকারীরা গাড়ি ভাঙচুর ও ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করেছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে কাঁদানে গ্যাস ছোড়া হয়েছে।
এনডিটিভির খবরে বলা হয়েছে, মিরাট, মুজাফফরনগর, বাহরাইচ, বুলন্দশহর, গোরক্ষপুর, ফিরোজাবাদ, আলিগড়, ফারাক্কাবাদে সংঘর্ষ ও সহিংসতার কথা জানা গেছে।
সংবাদ সংস্থা এএনআই’র প্রকাশিত এক ভিডিওতে দেখা গেছে, রায়ট গিয়ার পরিহিত অবস্থায় রয়েছে পুলিশ। তাদের লক্ষ্য করে বিক্ষোভকারীরা ইট-পাটকেল ছুড়ছে। পুলিশকে লক্ষ্য করে চিৎকার করতেও দেখা গিয়েছে। শুরুতে নীরব থাকলেও পরে পুলিশকেও পাল্টা পাথর ছুঁড়তে দেখা গিয়েছে।
দিনভর বিক্ষোভ শেষে রাজ্য পুলিশের তরফ থেকে ছয় জনের মৃত্যুর খবর জানানো হয়। তবে রাজ্য পুলিশের মহাপরিচালক ওপি সিং দাবি করেন, পুলিশের গুলিতে কেউ মারা যায়নি। তিনি বলেন, আমরা একটা গুলিও ছুড়িনি। যদি কোনও গুলি চলে থাকে তাহলে তা বিক্ষোভকারীদের দিক থেকেই হয়েছে।
এর আগে আসামে বিতর্কিত এই আইনের বিরুদ্ধে বিক্ষোভে ছয় জনের প্রাণহানির খবর পাওয়া গেছে। এদের মধ্যে চার জন পুলিশের গুলিতে নিহত হয়েছে। সব মিলিয়ে এখন পর্যন্ত ১৫ জন নিহতের খবর জানা গেলো।
দিল্লিতে জলকামান-লাঠিচার্জ, পুলিশের গাড়িতে আগুন
দিল্লির জামে মসজিদে ভীম আর্মি প্রধান চন্দ্রশেখর আজাদের নেতৃত্বে আইনটির বিরুদ্ধে জন সমাগমে নতুন করে উত্তাল হয় ভারতে রাজধানী। পুরনো দিল্লির জামে মসজিদ থেকে যন্তর মন্তরের দিকে যাত্রা করে হাজার হাজার বিক্ষোভকারী। দিল্লি গেটে তাদের পথ আটকায় পুলিশ। ব্যারিকেড দিয়ে আটকে দেওয়া হয় মিছিল। এরপরই ক্ষুব্ধ প্রতিবাদীরা পুলিশকে আক্রমণ করে। পুলিশ জলকামান চালিয়ে ও লাঠিচার্জ করে তাদের প্রতিহত করার চেষ্টা করে। এসময় দরিয়াগঞ্জ থানার বাইরে একটি গাড়িতে আগুন লাগিয়ে দেয় বিক্ষোভকারীরা।
শুক্রবারও দিল্লি মেট্রো তাদের ১৭টি স্টেশন বন্ধ করে রাখে। এর মধ্যে ছিল রাজিব চক, প্রগতি ময়দান ও খান মার্কেটের মতো ব্যস্ত স্টেশন। এর আগে বৃহস্পতিবার নিষেধাজ্ঞা জারি করে ইন্টারনেট সংযোগ বন্ধ করে দেওয়া হয় শহরের বিভিন্ন অঞ্চলে।
শুক্রবারের সংঘর্ষের বিষয়ে দিল্লি পুলিশের জনসংযোগ কর্মকর্তা বলেছেন, পুলিশ লাঠিচার্জ করেনি। কেবল কাঁদানে গ্যাসের শেল ছুড়েছে। আহত ১১ জনকে এলএনজেপি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।
এর আগে পুলিশ হেফাজত থেকে পালিয়ে যান চন্দ্রশেখর আজাদ। জামে মসজিদে এক বড় মিছিলে নেতৃত্ব দেওয়ার পরে তাকে গ্রেফতার করা হয়েছিল।