বিদেশের খবর: চীনে করোনা ভাইরাসে মৃতের সংখ্যা বেড়ে ৪১ জনে দাঁড়িয়েছে। মৃতদের মধ্যে বেশিরভাগই হুবেই প্রদেশের বাসিন্দা। শুক্রবার পর্যন্ত রাজ্যটিতে আক্রান্তের সংখ্যা ৭৫২ জনে দাঁড়িয়েছে। আর দুনিয়াজুড়ে আক্রান্তের সংখ্যা ইতোমধ্যেই এক হাজার ছাড়িয়েছে। ২৫ জানুয়ারি শনিবার কর্মকর্তাদের বরাত দিয়ে আল জাজিরা ও রয়টার্সের প্রতিবেদনে উঠে এসেছে এমন তথ্য।
এর আগে দেশটিতে এ ভাইরাসে ২৬ জনের মৃত্যুর খবর এসেছিল। এরমধ্যেই কর্তৃপক্ষ নতুন করে আরও ১৫ জনের মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করেছে। তার মধ্যে চারজনের মৃত্যু হয় শনিবার সকালে।
চীনের উহান শহর থেকে উৎপত্তি হওয়া এ ভাইরাস ইতোমধ্যেই রাজধানী বেইজিংসহ চীনের ২৯টি প্রদেশে ছড়িয়ে পড়েছে। গত ২০ বছরে চীন এবং বাকি বিশ্বের মধ্যে সরাসরি ফ্লাইট যোগাযোগ দ্রুত সম্প্রসারিত হয়েছে। উহানের এক কোটি ১০ লাখ বাসিন্দা এখন সরাসরি ইউরোপ ও যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন গন্তব্যের পাশাপাশি বাড়ির কাছের সিউল, ব্যাংকক, কুয়ালালামপুর ও সিঙ্গাপুরের মতো শহরে যেতে পারে। সে কারণেই ভাইরাসটি চীনের বাইরেও ছড়িয়ে পড়েছে। জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া, থাইল্যান্ড, যুক্তরাষ্ট্র, সিঙ্গাপুর, ভিয়েতনাম, তাইওয়ান, নেপাল, ফ্রান্স ও সৌদি আরবসহ অন্তত ১১টি দেশে এ ভাইরাসে আক্রান্ত রোগীর সন্ধান মিলেছে। আল জাজিরা জানিয়েছে, এখন পর্যন্ত দুনিয়াজুড়ে এ ভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা অন্তত এক হাজার ২৮৭ জন।
চীনে আক্রান্ত ও মৃতের বেশিরভাগ খবর মূলত হুবেই প্রদেশ থেকেই আসছে। শুক্রবার ন্যাশনাল হেলথ কমিশন দেশজুড়ে মোট ৮৩০টি সংক্রমণের কথা নিশ্চিত করে। তবে জাতীয় পর্যায়ে এ সংক্রান্ত বিশদ কোনও ডাটা প্রকাশ করেনি কর্তৃপক্ষ। অবশ্য সতর্কতামূলক ব্যবস্থা হিসেবে এ ভাইরাসের উৎপত্তিস্থল হুবেই প্রদেশের উহান শহরে গণপরিবহন বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। শহর থেকে বের হওয়ার অনুমতি মিলছে না বাসিন্দাদের।
এদিকে শনিবার থেকে শুরু হতে যাওয়া চান্দ্র নববর্ষের সপ্তাহব্যাপী ছুটিতে লাখ লাখ চীনা নাগরিকের ভ্রমণের পরিকল্পনা বা কর্মসূচি রয়েছে। এতে করে এ ভাইরাসে সংক্রমণের হার আরও ত্বরান্বিত হতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। তবে বিশ্বজুড়ে ভাইরাসটির ছড়িয়ে পড়া ঠেকাতে নজরদারি জোরদার করা হয়েছে। বিভিন্ন দেশের বিমানবন্দরগুলোতে যাত্রীদের পরীক্ষা করা হচ্ছে। বিশেষ করে চীন ফেরত যাত্রীদের প্রতি সজাগ দৃষ্টি রাখা হচ্ছে।
উহান থেকে আসা যাত্রীদের স্ক্রিনিং বা পরীক্ষা করা হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, জাপান, থাইল্যান্ড, সিঙ্গাপুর, দক্ষিণ কোরিয়া প্রভৃতি দেশে। ভারতের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, আগামী বুধবার পর্যন্ত কলকাতা, মুম্বাই, দিল্লি, চেন্নাইসহ সাতটি বিমানবন্দরে ৪৩টি ফ্লাইট এবং ১২ হাজার যাত্রীকে পরীক্ষা করে দেখা হবে।
ভাইরাসজনিত ঠাণ্ডা বা ফ্লু-র মতো হাঁচি-কাশির মাধ্যমে এ ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ে। আক্রান্ত ব্যক্তির শরীরে শ্বাসকষ্ট, জ্বর, কাশি বা নিউমোনিয়ার প্রাদুর্ভাব দেখা যাবে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে, ভাইরাসটির প্রাথমিক উৎস কোনও প্রাণী হতে পারে। তবে চীনা কর্মকর্তারা মনে করছেন, এর সঙ্গে উহানের একটি সামুদ্রিক খাবারের বাজারের সম্পর্ক রয়েছে। কেননা স্থানীয় ওই বাজারে যারা যাতায়াত করেছেন, তাদের মধ্যেই প্রথম এ ভাইরাস সংক্রমিত হয়েছে।
এখন পর্যন্ত এ ভাইরাসের কোনও ভ্যাকসিন আবিষ্কার না হওয়ায় এর সংক্রমণ থেকে বাঁচতে আক্রান্ত ব্যক্তিদের থেকে দূরে থাকার পরামর্শ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।