দেশের খবর: মধ্যরাতে মাদকবিরোধী টাস্কফোর্সের অভিযান চালিয়ে অনলাইন নিউজ পোর্টাল বাংলা ট্রিবিউনের কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি আরিফুল ইসলামকে মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে সাজার ঘটনায় রংপুরের বিভাগীয় কমিশনার কে এম তারিকুল ইসলামকে তদন্তের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে তাকে জবাব দিতে বলা হয়েছে। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের মাঠ প্রশাসন অনুবিভাগের অতিরিক্ত সচিব আবদুল গাফফার খান এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
রংপুরের বিভাগীয় কমিশনার কে এম তারিকুল ইসলাম বলেন, ‘ইতোমধ্যে একজন অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার কুড়িগ্রামে চলে গেছেন বিষয়টি তদন্ত করতে। অবশ্যই টাস্কফোর্স গঠন ও মোবাইল কোর্ট পরিচালনার একটি টাইম ফ্রেম দেওয়া আছে। সেটি অমান্য করা সরকার ও প্রশাসনের জন্য বিব্রতকর। আমি কথা দিচ্ছি, আরিফের ওপর কোনও অন্যায় অবিচার হবে না।’
এর আগে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়ে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের এক অতিরিক্ত সচিব ও একজন যুগ্ম-সচিব জানান, ‘কুড়িগ্রামের বিষয়টি আমাদের জন্য বিব্রতকর। কোনোভাবেই মধ্যরাতে টাস্কফোর্সের অভিযান আইনসম্মত নয়। অবশ্যই টাস্কফোর্সকে সকাল না হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে, তাই বিধান রয়েছে। মধ্য রাতে অভিযান ও সাজা দেওয়ার বিষয়টি প্রশাসনের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করেছে। এ ধরনের কর্মকাণ্ড মাঠ পর্যায়ে সরকার ও প্রশাসনের ওপর জনগণের আস্থা কমায় এবং পরিস্থিতি বিরূপ করে তোলে।’
তারা উভয়েই জানান, যেহেতু মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ এই বিষয়ে অবগত ও বিব্রত তাই বিষয়টি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে তদন্তের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন এ বিষয়ে বলেছেন, ‘সাংবাদিক আরিফুল ইসলামের ওপর যদি অন্যায় হয়ে থাকে, তবে অবশ্যই কুড়িগ্রামের জেলা প্রশাসককে প্রশ্নের মুখোমুখি হতে হবে। কেউই আইনের ঊর্ধ্বে নয়। আমি এখনি খোঁজ খবর নিচ্ছি।’
উল্লেখ্য, শুক্রবার (১৩ মার্চ) মধ্যরাতে বাড়িতে হানা দিয়ে ধরে নিয়ে সাংবাদিক আরিফুল ইসলামকে এক বছরের কারাদণ্ড দিয়েছেন জেলা প্রশাসনের মোবাইল কোর্ট। মধ্যরাতে ডিসি অফিসের দুই-তিন জন ম্যাজিস্ট্রেট ১৫-১৬ জন আনসার সদস্যকে নিয়ে দরজা ভেঙে তার বাসায় প্রবেশ করেন। তবে তারা কোনও তল্লাশি অভিযান চালাননি। পরে ডিসি অফিসে নেওয়ার পর তারা দাবি করেন, আরিফুলের বাসায় আধা বোতল মদ ও দেড়শ’ গ্রাম গাঁজা পাওয়া গেছে।
এর আগে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, জেলা প্রশাসক মোছা. সুলতানা পারভীন একটি পুকুর সংস্কার করে নিজের নামে নামকরণ করতে চেয়েছিলেন। আরিফুল এ বিষয়ে নিউজ করার পর থেকেই তার ওপর ক্ষুব্ধ ছিলেন ডিসি। এছাড়া, সম্প্রতি জেলা প্রশাসনের বিভিন্ন অনিয়ম ও মুজিববর্ষের টানা নয়-ছয় নিয়ে রিপোর্ট করতে চেয়েছিলেন সাংবাদিক আরিফ। এ বিষয়ে জানতে পেরে জেলা প্রশাসকের অফিস থেকে তাকে বেশ কয়েকবার ডেকে নিয়ে সতর্ক করা হয়। তবে জেলা প্রশাসক সুলতানা পারভীন সব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।