ভিন্নরকম খবর: করোনাবাইরাসের প্রাদুর্ভাবে উল্টে গেছে পুরো বিশ্বের চিত্র। প্রাণঘাতী ভাইরাস আতঙ্কে ঘরবন্দি হয়ে পড়েছে মানবজাতি। রাস্তাঘাটগুলো খাঁখাঁ করছে। আর সেখানে এখন দেখা মিলছে প্রাণীদের। বিপন্ন অনেক প্রাণীও রাস্তায় মুক্ত পরিবেশে চলে আসছে।
নাগরিক দৃশ্যপট থেকে যে পশুপাখি বহুদিন আগে হারিয়ে গিয়েছিল সেই পশুপাখি যেন আবার নিজেদের জায়গা ‘ফিরে পেতে’ হাজির হয়েছে। মানুষের মৃত্যু বিষাদের মধ্যে প্রকৃতিতে ফিরেছে প্রাণ।
পরিবেশে কমেছে দূষণের মাত্রা। সমুদ্রসৈকতে জলকেলি খেলছে ডলপিনের দল। সৈকতে নিশ্চিন্তে ডিম পাড়ছে লাখ লাখ অলিভ রিডলে কচ্ছপ। জনমানবশূন্য রাস্তায় দিব্যি ঘুরে বেড়াচ্ছে বুনো হরিণ, নীলগাই ও বিরল প্রজাতির সিভেট।
দ্য গার্ডিয়ান বলছে, করোনাভাইরাসে বিধ্বস্ত ইতালির ভেনিসের সমুদ্রতীরে বিশাল ক্রুজ শিপগুলো এখন আর এসে ভিড়ছে না। ফলে ভেনিসের ক্যানালগুলোতে আবার ডলফিন এসে খেলে বেড়াচ্ছে।
বিশ্বের সবচেয়ে বৃহত্তম কক্সবাজার সমুদ্রসৈকতও বন্ধ থাকায় সেখানে ডলপিন ঝাঁকে ঝাঁকে লাফালাফি করছে। জাপানের নারা শহরের জনশূন্য রাস্তায় বিরল শিখা হরিণের দেখা মিলেছে।
পানামার সান পেলিপে শহরের সমুদ্রসৈকতের তীরে দেখা গেছে মাংসাশী প্রাণী রিকনের একটি দলকে। এছাড়া যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়া রাজ্যের ওকল্যান্ডের একটি স্কুলের মাঠে ঘুরে বেড়াতে দেখা গেছে টার্কি মুরগির ঝাঁক। থাইল্যান্ডের লোপবুরি শহরে পর্যটকদের আনাগোনা নেই।
এই সুযোগে সাবওয়েগুলো দখলে নিয়েছে বানরের দল। ভারতের রাস্তায় গাড়িঘোড়া নেই, মানুষের চলাচল নেই, দোকানপাট বন্ধ। ফলে পশুপাখি বহু দিন পর আবার স্বমহিমায় ফিরে এসেছে। ভারতীয় ফরেস্ট সার্ভিসের এক তরুণ কর্মকর্তা সুশান্ত নন্দা
গত কয়েকদিন ধরে তার টুইটার থেকে অবিরত পোস্ট করে চলেছেন এমনই অসাধারণ সব ছবি, যা রীতিমতো সাড়া ফেলে দিয়েছে গোটা বিশ্বে। অনুপ্রাণিত হয়ে গৃহবন্দি অনেক ভারতীয়ও তাদের ফ্ল্যাটের ব্যালকনি থেকে দুষ্প্রাপ্য প্রাণীদের আনাগোনার ছবি পোস্ট করতে শুরু করেছেন।
সুশান্ত নন্দা জানাচ্ছেন, লকডাউনের কারণে উড়িষ্যার উপকূলে অলিভ রিডলে কচ্ছপগুলো মানুষের নজর এড়িয়ে অনেক শান্তিতে ডিম পাড়তে পারছে। গহিরমাথা আর ঋষিকুল্যা সৈকতজুড়ে এবার প্রায় আট লাখ কচ্ছপ এসেছে, যার অর্থ ভারতের সমুদ্রতটে প্রায় ছয় কোটি অলিভ রিডলের ডিম।
কেরালার ওয়েস্টার্ন ঘাট পর্বত এক বিশেষ ধরনের ভামের বাসভূমি, যাদের নাম মালাবার লার্জ স্পটেড সিভেট। প্রায় ৩০ বছর আগে ১৯৯০ সালে এ অতিবিপন্ন প্রজাতির প্রাণীটিকে শেষবার দেখা গিয়েছিল। ধারণা করা হয়, মাত্র আড়াইশ’র মতো পূর্ণবয়স্ক সিভেট এই মুহূর্তে জীবিত আছে।
২৬ মার্চ কেরালার কালিকটের বন্ধ বাজারের মধ্যে একটি সিভেটকে রাস্তার মাঝখানে দেখা গেছে। উত্তরাখন্ড রাজ্যের দুই ব্যস্ত শহর হরিদ্বার আর দেরাদুনের বেশ কাছেই রাজাজি ন্যাশনাল পার্ক।
লকাডাউনে সবকিছু যখন সুনসান, হাইওয়েগুলো স্তব্ধ তখন সেই অভয়ারণ্য থেকে হাঁটতে হাঁটতে একপাল বড় শিংওয়ালা হরিণ চলে এসেছিল হরিদ্বার শহরে।
দেরাদুনে বাচ্চাদের ক্রিকেট খেলার মাঝে ঢুকে পড়ে তারা। চন্ডিগড়েও এক হরিণ দলকে শহরের রাস্তা পেরোতে দেখা গেছে। দক্ষিণ ভারতের বিখ্যাত তিরুপতি মন্দিরে যাওয়ার পাহাড়ি রাস্তায় এখন অবাধে বিচরণ করছে স্পটেড ডিয়ার বা চিতল হরিণের পাল।
দিল্লির সীমানাঘেঁষা শহর নয়ডার ব্যস্ততম এলাকা জিআইপি মল ও তার সংলগ্ন রাস্তা। বৃহস্পতিবার ফাঁকা সেই রাস্তায় ভরদুপুরে দাপিয়ে বেড়াল একটা বিশালদেহী নীলগাই (অ্যান্টিলোপ)।
আসাম ও অরুণাচল সীমান্তে পাসিঘাট ফরেস্ট এলাকায় নিশ্চিন্তে ও দুলকি চালে রেললাইন পেরোতে দেখা গেছে দাঁতাল হাতির বিশাল এক পালকেও। সূত্র: যুগান্তর