নিজস্ব প্রতিনিধি : জমি নিয়ে বিরোধকে কেন্দ্র করে গত বছরের পহেলা মে আশাশুনির শোভনালী ইউনিয়নের লতাখালি বিলে সাতক্ষীরার সাবেক পৌর মেয়র আব্দুল জলিলের চিংড়ি ঘেরে মোনায়েম সানাকে কুপিয়ে হত্যা মামলায় পুলিশ আরো এক আসামীকে গ্রেপ্তার করেছে। রোববার সকালে তাকে দেবহাটার গাজীরহাট থেকে গ্রেপ্তার করা হয়।
গ্রেপ্তারকৃত আসামীর নাম সুশান্ত ঘোষ (৪০)। তিনি সাতক্ষীরার কালিগঞ্জ উপজেলার নলতা গ্রামের রবিন ঘোষের ছেলে।
ঘটনার বিবরনে জানা যায়, বালিয়াপুর মৌজার খোলচক বিলে ১৩ একর জমি সাবেক ইউপি সদস্য হারুন অর রশিদ ও তার শরীকরা গত বছরের ফেব্র“য়ারি মাসের প্রথম সপ্তাহে আশাশুনির গোদাড়া গ্রামের আব্দুস সাত্তার সানার ছেলে শোভনালী ইউনিয়ন যুবলীগের সভাপতি নাজমুল কবীর লিটন সানা ও ৬নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি হাবিবুর রহমানের কাছে এক বছরের জন্য লিজ দেন। ওই জমির মধ্যে নজরুল গাইনের জবরদখলে থাকা ১২ বিঘা জমি তারা মাত্র এক লাখ ২০ হাজার টাকায় লিজ দেন। শ্রীকলস গ্রামের আপিলউদ্দিন ও গোদাড়া গ্রামের খালেকসহ কয়েকজনের কাছ থেকে ২৫ বছর আগে শহীদুল ইসলাম গাইন ও নজরুল ইসলাম গাইনরা কিনেছেন দাবি করায় আব্দুল হাকিমসহ তাদের শরীকরা আশাশুনি সহকারি জজ আদালতে মামলা করে(দেঃ ৫১/২০০১) বিবাদী গাইনদের বিরুদ্ধে স্থায়ী নিষেধাজ্ঞা পান। ওই নিষেধাজ্ঞা আদেশের বিরুদ্ধে নজরুল গাইন ও তার শরীকগণ জেলা ও দায়রা জজ আদালতে আপিল করলে অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ দ্বিতীয় আদালত নিম্ন আদালতের আদেশ বহাল রাখেন। এরপরও গাইন পরিবারের কাছ থেকে জমি দখলে নিতে পারেননি মোল্লা পরিবার। ওই জমি হারি বাবদ চাচাত ভাই রুহুল আমিনের কাছ থেকে এক লাখ ৯৫ হাজার টাকা বার্ষিক ইজারা নিয়ে আসছিলেন নজরুল ও তার শরীকরা।
বেদখল থাকা জমি কম টাকায় লিজ নিয়ে যুবলীগ নেতা লিটন ও আওয়ামী লীগ নেতা হাবিবুর দু’ লাখ টাকায় হস্তান্তর করেন চাপড়ার রাজুর কাছে। রাজু ওই জমি দখলে দেওয়ার জন্য যুবলীগ নেতা লিটনকে বলেন। সে অনুযায়ি আশাশুনি উপজেলার বসুখালি গ্রামের সামছুর রহমানের ছেলে নুরুজ্জামান ও কালিগঞ্জের নলতার আনছিুরের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হন লিটনের চাচা শোভনালী ইউপি চেয়ারম্যান মোনায়েম সানা। বিষয়টি জানতে পেরে নজরুল গাইন গত বছরের ২৮ এপ্রিল নুরুজ্জামান ও আনিছকে ১০ হাজার টাকা দেন। এরপর গত বছরের ৩০ এপ্রিল মঙ্গলবার রাত সাড়ে ১২টার দিকে নুরুজ্জামান ও আনিছের নেতৃত্বে ১৬ জন সন্ত্রাসী খোলচক বিলে রুহুল আমিনের ইজারা নেওয়া ১২ বিঘা চিংড়ি ঘেরের দখল নেয়। পর দিন সকাল সাড়ে ৮টার দিকে নজরুল ইসলাম, মোনায়েম গাইন, নয়ন গাইনের নেতৃত্বে ৪০/৪৫জন সশস্ত্র সন্ত্রাসী বেদখল হওয়া ঘেরে হামলা চালায়। নুরুজ্জামান ও আনিছ বাহিনীর সদস্যরা বারআনি পার হয়ে লতাখালি আব্দুল জলিলের ঘেরের মধ্য দিয়ে পালিয়ে যাওয়ার সময় আত্মরক্ষার্থে কালিগঞ্জের চম্পাফুল কালিবাড়ি এলাকার মোনায়েম গাইনকে পিটিয়ে ও কুপিয়ে মৃত ভেবে পানিতে ফেলে রেখে যায়। পহেলা মে দুপুর ১২টার দিকে মোনায়েম গাইন খুলনা মেডিকেল কলেজ এণ্ড হাসপাতালে মারা যান। মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়ার সাথে সাথে পুলিশ আশাশুনির শোভনালী ইউপি চেয়ারম্যান গোদাড়া গ্রামের বদরউদ্দিন সানার ছেলে মোনায়েম সানা (৫৫), তার ভাই আশরাফ সানা(৬২) ও একই গ্রামের নুর আলী সরদার ওরফে আশু সরদারের ছেলে টুটুল ওরফে বাবুকে(৩৮) গ্রেফতার করে। এ ঘটনায় পহেলা মে রাতেই রুহুল আমিন বাদি হয়ে ঘটনাস্থল খোলচক উল্লেখ করে শোভনালী ইউপি চেয়ারম্যান মোনায়েম সানাসহ ১৯জনের নাম উল্লেখ করে আশাশুনি থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। গ্রেপ্তারকৃত আসামী ও এজাহারভুক্ত আসামীরা সকলে জামিনে মুক্তি পেয়েছেন। তবে নিহতের স্ত্রী সাংবাদিকদের কাছে অভিযোগ করেন নজরুল গাইন প্রকৃত হত্যাকারিদের বাদ দিয়ে তার প্রতিপক্ষদের বিরুদ্ধে মামলা করিয়েছেন। মামলাটির তদন্তভার আশাশুনি থানার উপপরিদর্শক ইসমাইল হোসেনের কাছ থেকে সাতক্ষীরা গোয়েন্দা পুলিশের পরিদর্শক হারান পালের উপর বর্তায়। হারান পাল সম্প্রতি কালিগঞ্জ সার্কেল অফিসে বদলী হয়ে গেলে গত ২৪ জুলাই তদন্তভার পান গোয়েন্দা পুলিশের পরিদর্শক বাবুল আক্তার।
মামলার তদন্তকারি কর্মকর্তা গোয়েন্দা পুলিশের পরিদর্শক বাবুল আক্তার দাবি করেন, রোববার সকালে দেবহাটার গাজীরহাট থেকে সুশান্ত ঘোষকে গ্রেপ্তার করা হয়। সোমবার আদালতের মাধ্যমে জেল হাজতে পাঠানো হয়েছে। তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করে চাঞ্চল্যকর তথ্য পাওয়া গেছে।
তবে গ্রেপ্তারকৃতের মামা নিরঞ্জন ঘোষ জানান, তার ভাগ্নে সুশান্তকে শনিবার রাত ১২টার দিকে নিজ বাড়ি থেকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। #
পূর্ববর্তী পোস্ট