নিজস্ব প্রতিনিধি : টিআরএম পদ্ধতি সংযুক্ত করে বেতনা -মরিচ্চাপসহ সকল সংযোগ খাল পূণঃখনন ও দক্ষিণ-পশ্চিম উপকুলীয় অঞ্চলের স্থায়ী জলাবদ্ধতা নিরসনের দাবিতে মানববন্ধন ও প্রধানমন্ত্রি বরাবর স্মারকলিপি পেশ করা হয়েছে। বাংলাদেশ ওয়ার্কার্স পার্টির সাতক্ষীরা জেলা শাখার উদ্যোগে রোববার সকাল ১১টায় সাতক্ষীরা কালেক্টরেট চত্বরে এ মানববন্ধন কর্মসুচি পালিত হয়।
মানববন্ধন কর্মসুচি চলাকালে বাংলাদেশ ওয়ার্কার্স পার্টির সাতক্ষীরা জেলা শাখার সভাপতি সাংসদ অ্যাড. মোস্তফা লুৎফুল্লাহ এর সভাপতিত্বে বক্তব্য দেন সংগঠণের জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক অ্যাড. ফাহিমুল হক কিসলু, সদর শাখার সভাপতি স্বপন কুমার শীল, কলারোয়া উপজেলা শাখার সভাপতি আব্দুর রউফ, কমঃ প্রকৌশলী আবিদুর রহমান, কমঃ ময়নুল ইসলাম, হিরন্ময় মণ্ডল প্রমুখ। উপস্থিত ছিলেন, কমরেড মহিবুল্লাহ মোড়ল, অধ্যাপক সাবীর হোসেন।
এসময় বক্তারা বলেন, বছরের ৬ মাসেরও বেশি সময় ধরে সাতক্ষীরা জেলা বেশিরভাগ এলাকা পানি নীচে থাকে। বেতনা নদী কোনরকমে টিকে রয়েছে। অপরদিকে মরিচ্চাপ নদী মৃত্যুর প্রহর গুনছে। এছাড়া গোয়াললঘেশিয়া নদীর অকাল মৃত্যু ঘটেছে এবং খোলপেটুয়া নদীও পড়েছে মৃত্যুর মুখে। সম্প্রতি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ৪৭৫ কোটি টাকার বেতনা-মরিচ্চাসহ নদী খননের জন্য বরাদ্দ দিয়েছেন। এ খনন কাজে যদি টিআরএম সংযুক্ত করা না হয় তাহলে খনন করে এ অঞ্চলের মানুষের আশা আকাঙ্খার প্রতিফলন হবে না।
উল্লেখিত বরাদ্দে জলাধার প্রকল্প না থাকায় এই প্রকল্প বাস্তবায়ন করলে সরকারের প্রত্যাশা কতটুকু অর্জিত হবে এবং নদীর ভবিষ্যত কি হবে তা নিয়ে বিশেষজ্ঞরা প্রশ্ন তুলেছেন। এই প্রসঙ্গে তারা জলাধার প্রকল্প (টিআরএম বা টাইডাল রিভার ম্যানেজমেন্ট) বাস্তবায়নের দাবি জানান।
আলোচনায় উঠে আসে প্রকল্পের আওতায় ইছামতি নদীর সাথে লাবন্যবতী ও সাপমারা নদীর পুনঃসংযোগ করানো হলে মরিচ্চাপ, সালখালী, হাবড়া ও গুটিয়াখালী নদী সজীব হয়ে উঠবে। একইসাথে খোলপেটুয়ার নাব্যতারও সংকট দূর হবে। তারা জানান, দেশের দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চল সাতক্ষীরা-যশোর-খুলনা জেলার এই অঞ্চলজুড়ে ৬০ লাখ লোকের বসবাস। অপরিকল্পিত চিংড়ী চাষের কারণে জলাবদ্ধতা বৃদ্ধির সাথে সাথে তাদের জীবন বিপন্ন হয়ে পড়ছে। তবে পাানি বন্টনের জন্য ভারত সরকারকে আরো বেশি আন্তরিক হওয়ার আহবান জানান তারা।
পরে তারা জেলা প্রশাসক এসএম মোস্তফা কামালের মাধ্যমে ৭ দফা দাবি জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী ও পানি সম্পদ মন্ত্রী বরবার পৃথক দু’টি স্মারকলিপি পেশ করেন।
দাবি সমূহ: বেতনা মরিচ্চাপ অববাহিকায় নদীবাহিত অবক্ষেপনের জন্য বিল চিহ্নিত করে টিআরএম পদ্ধতি অন্তর্ভূক্তিকরা। নদী ও খালের সকল ইজারা বাতিল, অবৈধ দখল ও স্থাপনা উচ্ছেদ করতে হবে। পানি নিস্কাশনের উপযোগী করে নদীসহ সকল সংযোগ খাল পুন:খনন ও স্লুইস গেইট সংস্কার করতে হবে। উপকূলীয় এলাকা বিশেষ করে শ্যামনগর, আশাশুনি ও দেবহাটা উপজেলা স্থায়ী এবং টেকসই বেঁড়ীবাধ নির্মাণ করতে হবে। নদী, খাল খনন ও জলাবদ্ধতা নিরসনে জনগনের সক্রিয় অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে হবে। আবদ্ধ শালিখা নদী উন্মুক্ত করে বেতনার সাথে সংযোগ, পাকুড়িয়া নদীকে কপোতাক্ষ ও বেতনার সাথে সংযোগ, আমতলী নদীর সাথে শালতা নদীর সাথে সংযোগ প্রদান করতে হবে। কোমরপুর শাখরা স্লুইসগেটের পাশে উকূলীয় বাঁধ কেটে লাবণ্যবতী এবং ভাতশাল স্লুইসগেটের পাশ দিয়ে সাপমারা নদীর সাথে ইছামতি নদীর সরাসরি সংযোগ প্রদান করা হলে মরিচ্চাপ, শালখালি, হাবড়া, গুতিয়াখালী প্রভৃতি নদী সজীব হয়ে উঠবে এবং খোলপেটুয়া নদীর নাব্যতার কোন সংকট হবে না। অবিলম্বে তিস্তা নদী মহাপরিকল্পনার বাস্তবায়ন চাই ও আন্ত:নদী সংযোগ স্থাপন করতে হবে।
পূর্ববর্তী পোস্ট