অনলাইন ডেস্ক : কাতার বিশ্বকাপের প্রস্তুতিতে গত ১০ বছরে বাংলাদেশি ১০১৮ শ্রমিকের মৃত্যু হয়েছে। পাশাপাশি বাংলাদেশসহ দক্ষিণ এশিয়ার ৬ হাজার ৫০০ শ্রমিকের মৃত্যু হয়েছে। এসব দেশগুলোর মধ্যে রয়েছে বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তান, নেপাল ও শ্রীলংকা। মৃত্যুর বিষয়টি নিয়ে অনুসন্ধানী প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে দ্য গার্ডিয়ান।
প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছে, বিশ্বকাপ আয়োজনের গৌরব অর্জনের পর থেকে কাতারে প্রতি সপ্তাহে গড়ে বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তান, নেপাল ও শ্রীলঙ্কার ১২ জনের মৃত্যু হয়েছে।
ইংলিশ পত্রিকাটিতে ২০১১ সাল থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত তথ্য উপস্থাপন করা হয়েছে। এতে পাকিস্তান বাদে ৪টি দেশে গার্ডিয়ানের নির্ভরযোগ্য সূত্র ও দেশগুলোর সরকারি অনুযায়ী দশ বছরে ৫ হাজার ৯২৭ জন প্রবাসী শ্রমিকের মৃত্যু হয়েছে।
এর মধ্যে মৃত বাংলাদেশি শ্রমিকের সংখ্যা ১ হাজার ১৮। কাতারে পাকিস্তানের দূতাবাসের তথ্যানুযায়ী ৮২৪ জন পাকিস্তানি শ্রমিক মারা গেছেন। পাকিস্তানের এ হিসাবটি ২০১০ সাল থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত।
২০২০ সালের শেষের দিকের তথ্য এ হিসাবে নেই। তবে কাতারে সবচেয়ে বেশি শ্রমিক কাজ করে ফিলিপাইন ও কেনিয়ার। যদিও এই দুটি দেশের নাগরিকদের মৃতের সংখ্যা অবশ্য জানা যায়নি। এর ফলে কাতারে প্রবাসী শ্রমিকের মৃত্যুর সঠিক সংখ্যাটি আরও অনেক বড় বলেই ধারণা করছে গার্ডিয়ান।
গত ১০ বছরে বিশ্বকাপ আয়োজনের জন্য অভাবনীয় সব প্রকল্প হাতে নিয়েছে কাতার।
কাতার ২০২২ সালের বিশ্বকাপ প্রস্তুতির আয়োজন শুরু করেছে। সেখানে ব্যাপকহারে দালান নির্মাণ করা হচ্ছে। নতুন করে ৭টি স্টেডিয়াম বানানো হচ্ছে। এ ছাড়া কয়েকটি বিমানবন্দর ও সড়কের কাজ চলমান রয়েছে। পাশাপাশি যাত্রী সেবা নিশ্চিত করতে সড়কগুলো মেরামত ও নতুন সড়ক তৈরি করা হচ্ছে। হোটেলগুলো ঢেলে সাজানো হচ্ছে। বিভিন্ন দেশের আমন্ত্রিত অতিথি ও দর্শকদের সমাগম ঘটবে কাতার বিশ্বকাপ ঘিরে।
মধ্যপ্রাচ্যে শ্রমিকদের অধিকার নিয়ে কাজ করা ফেয়ারস্কোয়ার প্রজেক্টস এর পরিচালক নিক ম্যাকগিহান বিশ্বকাপের প্রকল্পের সঙ্গে প্রবাসী শ্রমিকদের মৃত্যুর সম্পর্কটা এভাবেই দেখালেন, ২০১১ সাল থেকে কাতারে যেসব প্রবাসী শ্রমিক মারা গেছেন, তাদের অধিকাংশই কাতার বিশ্বকাপ আয়োজনের সুযোগ পাওয়ার পর সেখানে গেছেন।
বিশ্বকাপের স্টেডিয়াম বানানোর কাজ করছেন এমন অবস্থাতেই ৩৭ জন শ্রমিক মৃত্যুবরণ করেছেন। যদিও বিশ্বকাপ আয়োজন কমিটি এর মধ্যে ৩৪ জনের মৃত্যুকেই কাজের বাইরের ঘটনায় মৃত্যু বলে চালিয়ে দিয়েছে। যদিও বিশেষজ্ঞরা এসব দাবি নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন।
স্টেডিয়ামের জায়গায় কাজ করতে করতেই মৃত্যুবরণ করেছেন কিছু শ্রমিক, এমন ঘটনাও ঘটেছে বেশ কিছু। গত ১০ বছরে যত মৃত্যু হয়েছে, তার অধিকাংশকেই স্বাভাবিক মৃত্যু বলে দাবি করেছে কাতার।
গার্ডিয়ানের তথ্যে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ, ভারত ও নেপালের যতজন মারা গেছেন, তার ৬৯ ভাগকে স্বাভাবিক মৃত্যু বলা হয়েছে। ১২ ভাগের মৃত্যু সড়ক দুর্ঘটনায়। শুধু ৭ ভাগের মৃত্যুর সঙ্গে কাজের পরিবেশ জড়িত। আর ৭ ভাগ কর্মী আত্মহত্যা করেছেন। ভারতীয়দের ক্ষেত্রে ৮০ ভাগই নাকি স্বাভাবিক মৃত্যু।
সংবাদ মাধ্যমটির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই লাশের ময়নাতদন্ত করতে দেওয়া হয় না। ২০১৪ সালে কাতার সরকারের নিজস্ব আইনজীবীরাও প্রবাসী শ্রমিকদের মধ্যে হৃদ্রোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর সংখ্যা বাড়ায় ময়নাতদন্ত করানোর পরামর্শ দিয়েছিল। কিন্তু সরকার সে পরামর্শকে পাত্তা দেয়নি।
২০১৯ সালে এটা জানা গেছে, কাতারের তীব্র তাপমাত্রা শ্রমিকদের মৃত্যুতে বড় প্রভাব রাখছে। জাতিসংঘের আন্তর্জাতিক শ্রমিক সংঘটনের গবেষণায় পাওয়া গেছে, বছরের অন্তত চার মাস তীব্র দাবদাহের মধ্যে কাজ করতে হয় শ্রমিকদের।