আইরিশদের বিপক্ষে ৮ উইকেটের জয় দেখে হাথুরুসিংহে কী ভাবছেন তা কে জানে। একটা ভাবনা নিশ্চয়ই তার মনে দাগ কাটছে। সেই ভাবনা জুড়ে হয়তো থাকছে সৌম্য সরকারকে আগলে রাখার সেইসব দিনের কথা। আয়ারল্যান্ডের মতো কন্ডিশনে কিউইদের বিপক্ষে ৬১, আর শুক্রবার অপরাজিত ৮৭। আহামরি কোনও কিছু নয়। তবে হাথুরুর জন্য স্বস্তির। চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিকে সামনে রেখে সৌম্যকে ঘিরে যে পরিকল্পনা তিনি করেছিলেন, তার বাস্তবায়ন হচ্ছে। স্বস্তি তিনি পেতেই পারেন।
দলটা আয়ারল্যান্ড বলে বাংলাদেশের জন্য অলিখিত একটা মর্যাদার লড়াই পর্দার আড়ালে ছিলই। সেই লড়াইয়ে বাড়তি মাত্রা যোগ করে র্যাঙ্কিং ভাবনা। নিচের সারির দলের বিপক্ষে হারলে রেটিং কমে যাবে। তাতে শঙ্কায় পড়তে পারে সরাসরি বিশ্বকাপ খেলা! টস জিতে ফিল্ডিং নিয়ে মাশরাফি-মোস্তাফিজরা সব শঙ্কা দূরে পাঠান। ১৮১ রানে প্রতিপক্ষকে আটকাতে ৪ উইকেট নেন মোস্তাফিজ। ইনজুরি থেকে ফেরার পর ছন্দ হারিয়ে ফেলেছিলেন। কাটারে সেই ধার ছিল না। মোস্তাফিজ এদিন নিজের রূপে ফিরলেন। ৯ ওভারে মাত্র ২৩ রান দিয়ে আইরিশদের বুঝিয়ে দিলেন অভিষেকের দিনগুলোতে কেন তাকে নিয়ে এত আলোচনা হয়েছিল।
বাংলাদেশ দলে কারও অভিষেক হলে চারদিকে একটা হৈ-চৈ পড়ে যায়। সাঞ্জামুল ইসলামকে নিয়ে সেই অর্থে কোনও উত্তেজনা ছিল না। আড়ালে থেকে সিনিয়র বোলারদের সাফল্যের দিনে তিনিও বলে গেলেন, ‘আমি ছিলাম’। ৫ ওভারে ২২ রান দিয়ে দুই উইকেট তার। মাশরাফি ৬.৩ ওভার বল করে ১৮ রানে ২ উইকেট নিয়েছেন। সাকিব আল হাসান ৯ ওভারে ৩৮ দিয়ে নিয়েছেন এক উইকেট।
ইংল্যান্ডে প্রস্তুতি ম্যাচে রুবেল নিজের ছায়া হয়েছিলেন। আয়ারল্যান্ডে তার গতি আর নব্য সুইংয়ে ভরসা রাখেন হাথুরুসিংহে। রুবেল এদিন উইকেট পাননি ঠিকই, কিন্তু শুরুতে মেডেন নিয়ে আইরিশ শিবিরে ত্রাস ছড়িয়েছেন। তাকে অনুসরণ করে মোস্তাফিজ আরও ভয়ঙ্কর হয়ে ওঠেন। দ্বিতীয় ওভারে মেডেনসহ উইকেট নিয়ে বেরিয়ে যান। এই উইকেট দেখে আঁচ করা গিয়েছিল, আজ জমবে। দুই ইনসুইঙ্গার করার পর তৃতীয় ডেলিভারির ব্যাক অব লেন্থে লাফিয়ে ওঠা বল ডিফেন্স করতে যান পল স্টার্লিং। ব্যাটের কানা নিয়ে চলে যায় শর্ট থার্ডম্যানে সাব্বিরের হাতে।
সাব্বির আগের ম্যাচে এসেই ফিরেছিলেন। এদিন সৌম্যর সঙ্গে দেখে দেখে ব্যাট করার আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়েছেন। শুরুতে বল ছেড়েছেন, ডিফেন্স করেছেন আর সিঙ্গেল নিয়েছেন। যতক্ষণে বড় শটের দিকে যান, ততক্ষণে ম্যাচ প্রায় শেষের দিকে। কিন্তু শুরুর শারীরিক ভাষা দেখে আঁচ করা গেছে একাদশে টিকে থাকতে বদ্ধপরিকর। শেষ পর্যন্ত দলকে জয় থেকে ১১ রান দূরে রেখে ফিরতে হয় তাকে। যাওয়ার আগে ৩৪ বলে করে যান ৩৫ রান।
সাব্বিরের কাজটা মূলত সহজ করেন তামিম আর সৌম্য। তামিম আউট হলেও দেখতে ভালো লাগে। আগের ম্যাচের কথা স্মরণ করুন না। অফস্টাম্পের বাইরের বাউন্সারে যেভাবে তুলে মারেন, তা দেখার মতো ছিল। কিন্তু টাইমিংয়ের অভাবে সীমানার কাছে ধরা পড়ে যান। এদিন এতটুকু পাল্টাননি। যতক্ষণ ছিলেন, ততক্ষণ বেশি বেশি স্ট্রাইক নিয়ে খেলেছেন। ৫৪ বল মোকাবিলা করে ৪৭ রানে যখন বিদায় নেন সৌম্য তখন ২৯টি বল খেলেছেন।
তামিম চলে যাওয়ার পর সৌম্য বেশি স্ট্রাইক নিতে থাকেন। এই সময়ে একটু খোলসের ভেতর ঢোকেন ঠিকই, কিন্তু বের হতে সময় নেননি। ২৫তম ওভারে উইকেটরক্ষকের মাথার উপর দিয়ে যে চারটি মারেন, তা অনেক দিন মনে থাকার কথা ম্যাকার্থির!