ভিন্ন স্বাদের খবর : চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা শেষে ঢাকায় এসেছিলেন চাকরির খোঁজে। অফিস এক্সিকিউটিভ হিসেবে যোগদান করেন প্রশান্ত কুমার ওরফে পি কে হালদারের প্রতিষ্ঠান রিলায়েন্স ফিন্যান্স লিমিটেডে। এই চাকরিই ‘কপাল খুলে’ দিয়েছিল নাহিদা রুনাইয়ের।
দিনে দিনে প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক পি কে হালদারের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা বাড়ে নাহিদার। অফিসের এক্সিকিউটিভ হয়ে যান এমডি’র বান্ধবী। এই সুযোগে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন নাহিদা রুনাই। বিপরীতে পি কে হালদারও বান্ধবীকে ব্যবহার করেছেন হাজার হাজার কোটি টাকা অর্থপাচারের জন্য।
সম্পর্কিত খবর
মঙ্গলবার (১৬ মার্চ) পি কে হালদারের আলোচিত এই বান্ধবী নাহিদা রুনাইকে গ্রেফতার করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন- দুদক। এর আগে চলতি বছরের ১৩ জানুয়ারি পি কে হালদারের আরেক বান্ধবী অবন্তিকা বড়ালকে গ্রেফতার করেছিল দুদক।
দুদক সূত্র জানায়, নাহিদা রুনাইয়ের সঙ্গে পি কে হালদারের পরিচয় হয় ২০১২ সালে। তখন পি কে হালদার ছিলেন রিলায়েন্স ফিন্যান্স লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক। অফিস এক্সিকিউটিভ হিসেবে রিলায়েন্স ফিন্যান্সে যোগদান করেন নাহিদা। এরপর কাজের সূত্র ধরেই তাদের মধ্যে ঘনিষ্ঠতা হয়। এসএমই পলান শাখার অফিস এক্সিকিউটিভ থেকে পি কে হালদারের কল্যাণে ক্ষমতাধর ‘বড় আপা’ বনে যান নাহিদা। রিলায়েন্স ফিন্যান্স থেকে নাহিদাকে ইন্টারন্যাশনাল লিজিংয়ে নিয়ে আসেন পি কে হালদার। দ্রুততম সময়ে চারটি পদোন্নতি দিয়ে তাকে ভাইস প্রেসিডেন্টও করা হয়।
সূত্র জানায়, পি কে হালদারের অর্থ পাচারের বিষয়গুলো দেখভাল করতেন নাহিদা। এছাড়া বাংলাদেশ ব্যাংকসহ অন্যান্য আর্থিক প্রতিষ্ঠান ও সরকারের ওপর মহলকে ম্যানেজ করতেন তিনি। এসব কাজের প্রাইজ হিসেবে নাহিদাকে শূন্য থেকে কোটিপতি বানিয়েছেন পি কে হালদার। দুদকের অনুসন্ধান দল রুনাইয়ের প্রায় ২৮ কোটি টাকার স্থাবর সম্পদের সন্ধান পেয়েছে। এছাড়া তার ব্যাংক হিসেবে প্রায় ৭০ কোটি টাকা লেনদেন হয়েছে বলে জানা গেছে।
দুদক সূত্র জানায়, নাহিদা রুনাই ছাড়াও পি কে হালদারের ঘনিষ্ঠ আরেকজন বান্ধবী ছিলেন অবন্তিকা বড়াল। গত ১৩ জানুয়ারি অবন্তিকাকে গ্রেফতারের পর কয়েক দফা রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। সর্বশেষ তিন দিনের রিমান্ড শেষে মঙ্গলবার (১৬ মার্চ) অবন্তিকা ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মাসুদ-উর-রহমানের আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। অবন্তিকার জবানবন্দিতে নাহিদা রুনাইসহ অন্য যারা পি কে হালদারকে অর্থ পাচারে সহযোগিতা করেছে তাদের বর্ণনা উঠে এসেছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, পি কে হালদার তার ঘনিষ্ঠ দুই বান্ধবী নাহিদা রুনাই ও অবন্তিকা বড়ালকে নিয়ে অন্তত ২০-২৫ বার বিভিন্ন দেশে ভ্রমণ করেছেন। দুজনের মধ্যে কে পি কে হালদারের সঙ্গে বেশি সময় কাটাবে তা নিয়ে প্রতিযোগিতাও চলতো। এ নিয়ে বিভিন্ন সময়ে পি কে হালদারের নিয়ন্ত্রণাধীন আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোতে নানা গুঞ্জনও ছিল।
দুদকের একজন কর্মকর্তা জানান, নাহিদা রুনাই আনান কেমিক্যাল লিমিটেড নামে একটি নামসর্বস্ব প্রতিষ্ঠানের কাগজপত্র তৈরি করে ইন্টারন্যাশনাল লিজিং অ্যান্ড ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস লিমিটেড থেকে ৭০ কোটি টাকা উত্তোলন করে আত্মসাৎ করেছেন। এ ঘটনায় জানুয়ারি মাসে দায়ের করা একটি মামলায় নাহিদাকে গ্রেফতার দেখানো হয়েছে। এছাড়া নাহিদার বিরুদ্ধে পি কে হালদার সংশ্লিষ্ট আরও ১০ টি মামলার অনুমোদন রয়েছেন। এসব মামলায়ও তাকে গ্রেফতার দেখানো হবে।
গত বছরের জানুয়ারিতে ২৭৫ কোটি টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জন ও পাচারের অভিযোগে পি কে হালদারের বিরুদ্ধে একটি মামলা করে দুদক। সেই মামলার তদন্তে এখন পর্যন্ত প্রায় তিন হাজার কোটি টাকা আত্মসাৎ ও পাচারের তথ্য পেয়েছে মামলার তদন্ত সংস্থা। তবে মামলা দায়েরের আগেই পি কে হালদার পালিয়ে কানাডা চলে যান। পালিয়ে যাওয়ার আগে এনআরবি গ্লোবাল ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ছিলেন তিনি। একই সময়ে তিনি চারটি আর্থিক প্রতিষ্ঠান ইন্টারন্যাশনাল লিজিং অ্যান্ড ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস (আইএলএফএসএল), পিপলস লিজিং অ্যান্ড ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস, এফএএস ফিন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেড এবং বাংলাদেশ ইন্ডাস্ট্রিয়াল ফিন্যান্স কোম্পানি (বিআইএফসি) নিজের নিয়ন্ত্রণে ধরে রাখেন। এসব প্রতিষ্ঠান থেকে গ্রাহকের কাছ থেকে টাকা তুলে তা আত্মসাৎ ও বিদেশে পাচার করেন। পি কে হালদারের বিষয়ে অনুসন্ধান করতে গিয়ে তার ৬২ জন সহযোগীর খোঁজ পায় দুদক। সহযোগীদের মধ্যে দুই বান্ধবী নাহিদা রুনাই ও অবন্তিকা বড়াল অন্যতম।