দেশের খবর : করোনা ভাইরাসের ভ্যাকসিনের (টিকা) দ্বিতীয় ডোজ দেওয়ার কার্যক্রম সারাদেশে শুরু করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার (৮ এপ্রিল) সকালে রাজধানীসহ সারাদেশে বিভিন্ন কেন্দ্রে দ্বিতীয় ডোজের টিকাদান শুরু হয়।।
সরকারঘোষিত কঠোর বিধিনিষেধের মধ্যেও যাদের দ্বিতীয় ডোজ দেয়ার তারিখ নির্ধারিত ছিলো, তারা টিকা নিতে কেন্দ্রে আসছেন। তবে এখন পর্যন্ত যারা টিকা নেননি তাদেরকে প্রথম ডোজ দেয়ার কার্যক্রমও চলছে।
করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ে দেশে প্রতিদিন সর্বোচ্চ আক্রান্ত ও মৃত্যুর রেকর্ডের মধ্যেই টিকার দ্বিতীয় ডোজ প্রদানের কার্যক্রম শুরু হলো। সবশেষ বুধবারও (৭ এপ্রিল) ২৪ ঘণ্টায় এখন পর্যন্ত দেশে সর্বোচ্চ ৭ হাজার ৬২৬ জন শনাক্ত হয়েছেন। এনিয়ে টানা চারদিন ৭ হাজারের বেশি রোগী শনাক্তের তথ্য জানিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, প্রথম ডোজ নেয়া প্রায় সবার কাছে এসএমএস-এর মাধ্যমে দ্বিতীয় ডোজ নেয়ার তারিখ ও কেন্দ্র জানিয়ে দেয়া হয়েছে। তবে কোনো কারণে কেউ যদি প্রথম ডোজ নেয়ার পরও দ্বিতীয় ডোজের সময় ও কেন্দ্রের তথ্য এসএমএস-এ না পান, সেক্ষেত্রে প্রথম ডোজ নেয়ার ঠিক দুই মাস পর আগের কেন্দ্রে গিয়ে টিকা কার্ড দেখিয়ে দ্বিতীয় ডোজ নিতে পারবেন।
এদিকে, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) কেন্দ্রে বৃহস্পতিবার আটটি বুথে টিকা দেয়া হচ্ছে। এরমধ্যে সাতটি বুথে দ্বিতীয় ডোজের টিকা এবং একটি বুথে প্রথম ডোজের টিকা দেয়া হচ্ছে। বৃহস্পতিবার সর্বমোট দুই হাজার টিকা দেয়া হতে পারে বলে জানিয়েছেন বিএসএমএমইউ-এর কর্মকর্তারা। এর আগে স্বাস্থ্যসচিব লোকমান হোসেন মিয়া জানান, টিকা নিলেও আমাদের মাস্ক ব্যবহার করতে হবে। আমরা যতো বেশি সচেতন হবো তত বেশি সুরক্ষিত থাকতে পারবো।
তিনি বলেন, আমরা চেষ্টা করবো ডাক্তার-নার্সসহ সব পর্যায়ের মানুষকে নিয়ে করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব সুষ্ঠু ও সুন্দরভাবে মোকাবিলা করতে পারি।
মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, ২য় ডোজ টিকা নিয়ে অনেক ধরনের আলোচনা ছিল। আমাদের প্রধানমন্ত্রী পরিষ্কার করে বলে দিয়েছেন ৮ এপ্রিল থেকে যে দ্বিতীয় ডোজ শুরু হওয়ার কথা, এটা যথারীতি চলবে।
এদিকে টিকা গ্রহণ নিয়ে দেশের বিভিন্ন জেলার সিভিল সার্জন কার্যালয় থেকে জনসাধারণের উদ্দেশে বেশ কিছু নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এতে বলা হয়,
১. বৃহস্পতিবার (৮ এপ্রিল) থেকে এসএমএস পাওয়া সাপেক্ষে দ্বিতীয় ডোজের ভ্যাকসিন নেওয়া যাবে।
২. যারা যোগ্য হবেন তাদের মোবাইল ফোনে এসএমএস চলে যাবে, যাদের ভ্যাকসিন দেওয়ার পর দুই মাস অতিবাহিত হয়েছে কিন্তু এসএমএস পাননি তারা অবশ্যই টিকা কার্ড এবং টিকা কার্ডের ফটোকপি নিয়ে টিকা কেন্দ্রে আসবেন।
৩. দ্বিতীয় ডোজের জন্য আগত সবাইকে টিকা কার্ড এবং জাতীয় পরিচয়পত্র নিয়ে আসতে হবে। কারও টিকা কার্ড হারিয়ে গেলে কিংবা কোনও কারণে নষ্ট হয়ে গেলে অনলাইন থেকে পুনরায় কার্ড ওঠানো যাবে।
৪. দুই মাস পূরণের আগে ২য় ডোজের ভ্যাকসিন নেওয়া যাবে না, তবে পরে নেওয়া যাবে (১২ সপ্তাহ পর্যন্ত)।
৫. রেজিস্ট্রেশনকৃত হজ যাত্রীদের বয়স ১৮ বছরের বেশি হলেই রেজিস্ট্রেশন করে ভ্যাকসিন নিতে পারবেন। (এমন হজযাত্রীর সংখ্যা প্রায় ৬০ হাজার। তাদের দ্রুত রেজিস্ট্রেশন করে ভ্যাকসিন নিতে বলা হয়েছে। সৌদি আরবের হজ কর্তৃপক্ষও জানিয়েছে, ভ্যাকসিন গ্রহণের প্রমাণপত্র ছাড়া এবছর হজে অংশ নিতে দেওয়া হবে না)।
৬. প্রথম ডোজের টিকা দেওয়ার কর্মসূচি আগের মতোই এমনকি রমজান মাসেও অব্যাহত থাকবে তাই প্রথম ডোজের টিকা নেওয়ার জন্য অনলাইনে রেজিস্ট্রেশন করে নির্ধারিত দিনে নির্ধারিত কেন্দ্রে গিয়ে টিকা নেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
৭. পর্যাপ্ত ভ্যাকসিন আছে, শেষ হওয়ার ভয়ে কেউ ভীত হবেন না, গুজবে বিশ্বাস করবেন না, রোজা রেখে ভ্যাকসিন নেওয়া যাবে।
৮. কেন্দ্র পরিবর্তন করে আপাতত দ্বিতীয় ডোজের ভ্যাকসিন নেওয়া যাবে না।
৯. টিকা কেন্দ্রে বাধ্যতামূলকভাবে মাস্ক পরে আসতে হবে এবং প্রত্যেক টিকা গ্রহণকারীকে অন্তত ৩ ফুট দূরত্ব বজায় রাখার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
নির্দেশনায় আরো বলা হয়েছে, টিকাদাতা এবং স্বেচ্ছাসেবীদের সহযোগিতা করলে গ্রহীতার কাজ দ্রুত এবং সহজ হবে।
এছাড়াও স্বাস্থ্যবিধি মানার জন্যে বাইরে গেলেই ঘরে ফেরার পর বা যেখানে সুবিধা আছে সেখানে সাবান-পানি দিয়ে ২০ সেকেন্ড ধরে হাত ধোয়ার পরামর্শ দিয়েছেন চিকিৎসকরা। সঠিক তথ্যের প্রয়োজনে ৩৩৩, ৯৯৯ অথবা ১৬২৬৩ হেল্প লাইনে ফোন করার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
গত ২৭ জানুয়ারি কুর্মিটোলা হাসপাতালে একজন নার্সকে অক্সফোর্ডের ভ্যাকসিন দেওয়ার মধ্যে দিয়ে বাংলাদেশে করোনার টিকাদান কার্যক্রম শুরু হলেও আনুষ্ঠানিকভাবে তা শুরু হয় ৭ ফেব্রুয়ারি। একজন ব্যক্তিকে দুই ডোজ ভ্যাকসিন নিতে হবে।