কক্সবাজারের মহেশখালী উপজেলার মাতারবাড়ি কয়লা বিদ্যুৎকেন্দ্র প্রকল্পের অর্থ-আত্মসাতের অভিযোগে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) দায়ের করা মামলায় কক্সবাজারের সাবেক জেলা প্রশাসক মো. রুহুল আমিনকে জেল হাজতে পাঠিয়েছেন আদালত।
উচ্চ আদালতের নির্দেশে সোমবার দুপুরে কক্সবাজার চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে আত্মসমর্পণ করলে বিচারক মো. তৌফিক আজিজ এ আদেশ দেন বলে জানান দুদক কক্সবাজারের পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) মো. সিরাজ উল্লাহ।
তিনি জানান, অর্থ-আত্মসাতের অভিযোগে দুদকের দায়ের করা মামলায় কক্সবাজারের সাবেক জেলা প্রশাসক মো. রুহুল আমিন ৬ সপ্তাহের জামিনে ছিলেন। জামিনের মেয়াদ শেষ হলে উচ্চ আদালত দু’সপ্তাহের মধ্যে তাকে নিন্ম আদালতে আত্ম-সমর্পণের নির্দেশ দেন।
কিন্তু রুহুল আমিন উচ্চ আদালতের নির্দেশ অমান্য করে ৩ সপ্তাহ পর নিম্ন আদালতে আত্মসমর্পণ করায় বিচারক এ আদেশ দেন বলে জানান সিরাজ।
সিরাজ উল্লাহ বলেন, মহেশখালীতে ৩৬ হাজার কোটি টাকার বেশি ব্যয়ে মাতারবাড়ি কয়লা বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ভূমি অধিগ্রহণের জন্য ২০১৪ সালের নভেম্বরে ক্ষতিগ্রস্তদের জমির বিপরীতে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নির্ধারণ করা হয় ২৩৭ কোটি টাকা। এসব ক্ষতিপূরণ প্রদানের জন্য অনিয়মের মাধ্যমে ২৫টি অস্তিত্বহীন চিংড়ি ঘেরের বিপরীতে ৩৬ জনের একটি সিন্ডিকেট অন্তত ৪৬ কোটি ২৪ লাখ ৩ হাজার ৩২০ টাকা আত্মসাতের অপকৌশলের আশ্রয় নেন।
তিনি বলেন, ‘এর মধ্যে ১৯ কোটি ৮২ লাখ ৮ হাজার ৩১৫ টাকা কথিত ক্ষতিগ্রস্তদের নামে ভুয়া চেকের মাধ্যমে তোলা হয়। এছাড়া আরও ২৬ কোটি ৩১ লাখ ৯৫ হাজার ৫ টাকা চেকের মাধ্যমে উত্তোলনের প্রক্রিয়ায় ছিল। এসব টাকা তোলার জন্য চক্রটি ৫টি চেকও ইস্যু করেছিল।’
সিরাজ জানান, এ নিয়ে আদালতের কাছে অভিযোগ করা হলে ৫টি চেকের বিপরীতে ক্ষতিপূরণের নির্ধারিত ২৬ কোটি ৩১ লাখ ৯৫ হাজার ৫ টাকা উত্তোলনের কাজ আটকে দেয়া হয়। প্রাথমিক তদন্তে অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগের সত্যতা প্রমাণিত হলে নিজেরা বাঁচতে চিংড়ি ঘেরের মালিকানা দাবি করে ক্ষতিপূরণের টাকা উত্তোলনকারী বিরুদ্ধে ২০টি মামলা করেন সেই সময়কার ভূমি অধিগ্রহণ কর্মকর্তা (এলএও) মাহবুবর রহমান।
‘মামলাগুলো তদন্ত করতে গিয়ে ২০টি মামলাকে একটি মামলায় একীভূত করা হয়। পরে মামলাগুলোর অভিযোগপত্র তদন্ত আদালতের কাছে জমা দেয় দুদক। মামলায় কক্সবাজারের সাবেক জেলা প্রশাসক মো. রুহুল আমিন, সাবেক অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক জাফর আলম, ভূমি অধিগ্রহণ কর্মকর্তা (এলএও) মাহবুবর রহমান এবং ভূমি অধিগ্রহণ শাখার প্রধান হিসাব কর্মকর্তা আবুল কাশেম মজুমদারসহ ৩৬ জনের বিরুদ্ধে চার্জশীটে অভিযোগ তোলা হয় বলে জানান পাবলিক প্রসিকিউটর।
এর আগে দুদকের এ মামলায় পৃথকভাবে আদালত কক্সবাজারের সাবেক জেলা প্রশাসক জাফর আলম, ভূমি অধিগ্রহণ কর্মকর্তা (এলএও) মাহবুবর রহমান ও ভূমি অধিগ্রহণ শাখার প্রধান হিসাব কর্মকর্তা আবুল কাশেম মজুমদারসহ আরও ৪ জনকে জেল হাজতে পাঠিয়েছিলেন বলে জানান আইনজীবী সিরাজ উল্লাহ।