নিজস্ব প্রতিনিধি : মুখে জনকল্যানের বুলি আওড়ালেও আদতে জনগণের ক্ষতি করে গোপনে পকেট ভরছেন ১৩নং লাবসা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও সাতক্ষীরা জেলা বিএনপির সদস্য সচিব আবদুল আলীম। সাতক্ষীরা সদর উপজেলার লাবসা ইউনিয়নের খেজুরডাঙ্গা গ্রামে নির্মাণাধীন একটি রাস্তায় ব্যবহারের জন্য জনবসতি এলাকার মধ্য দিয়ে প্রবাহিত বেতনা নদী থেকে বালি উঠিয়ে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের কাছে বিক্রি করছেন তিনি। এতে করে নদীর দুই ধারে বসবাসরত প্রায় শতাধিক পরিবার মারাত্মাক ঝুঁকির মধ্যে পড়বেন বলে দাবি করেছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। চেয়ারম্যান তাদের কোন কথা না শুনে পুরো দমে চালিয়ে যাচ্ছেন বালু উত্তোলন।
স্থানীয়দের অভিযোগের প্রেক্ষিতে গত বৃহস্পতিবার (০১ জুলাই) সকালে সরেজমিনে সাতক্ষীরা সদর উপজেলার লাবসা ইউনিয়নের খেজুরডাঙ্গা গ্রামে গিয়ে দেখা যায় খেজুরডাঙ্গা আর.কে মাধ্যমিক বিদ্যালয় মোড় থেকে খেজুরডাঙ্গা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় পর্যন্ত ২.২ কিলোমিটার রাস্তার নির্মাণ কাজ চলছে। এই রাস্তায় ব্যবহারের জন্য জনবসতি এলাকার মধ্যদিয়ে প্রবাহিত বেতনা নদীতে পৃথক দুটি ড্রেজার মেশিন দিয়ে ‘বালুমহাল ও মাটি ব্যবস্থাপনা আইন-২০১০’ এর তোয়াক্কা না করে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করা হচ্ছে।
স্থানীয়দের কাছে এ বিষয়ে জানতে চাইলে সংখ্যালঘু হওয়ায় প্রথমে গণমাধ্যমকর্মীদের সামনে মুখ খুলতে দ্বিধা করলেও পরে শোনান আশঙ্কার কথা। তারা জানিয়েছেন, বাড়ির মাত্র কয়েকফুট সামনেই নদী। এ নদী থেকে বালু উত্তোলন করায় আমাদের ঘরবাড়ি, বাড়ির সামনের রাস্তা ধ্বসে পড়ার শঙ্কা রয়েছে। আবার নদীর পাড় ভেঙ্গে চলতি বর্ষা মৌসুমে বন্যার কবলে পড়ার ভয়ও কাজ করছে তাদের মনে।
খেজুরডাঙ্গা পূর্বপাড়া গ্রামের গৃহবধূ সুচিত্রা রানী সরকার বলেন, এভাবে নদী থেকে বালি উত্তোলন করার ফলে আমদের ঘরবাড়ি নদীগর্ভে বিলীন হওয়ার শঙ্কা রয়েছে। আমরা এর প্রতিকার চাই।
একই এলাকার কণ্ঠরাম সরকার বলেন, আমাদের বাড়ির সামনে থেকে বালু উঠানো হচ্ছে আমরা খুব বিপাকে পড়েছি। চেয়ারম্যান সাহেবকে বলেছি যে, আপনার নাম করে এখান থেকে বালি উত্তোলন করা হচ্ছে, আপনি একটা ব্যবস্থা নিন। কিন্তু তিনি এখনো কোন ব্যবস্থা নেননি।
এদিকে বালু উত্তোলন কাজে নিয়োজিত শ্রমিকদের কাছে জানতে চাইলে তারা বলেন, এ ব্যাপারে আমাদের সাথে কথা বলে লাভ নাই। আমরা শ্রমিক, শ্রম দিতে এসেছি। আপনারা চেয়ারম্যান সাহেবের সাথে কথা বলেন তার নির্দেশনায় এখান থেকে বালু উত্তোলন করা হচ্ছে।
এ বিষয়ে লাবসা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও জেলা বিএনপির সদস্য সচিব আবদুল আলিম ‘রাস্তা দীর্ঘমেয়াদী এবং জনগণের কল্যাণের কথা চিন্তা করে নদী থেকে বালি উঠিয়ে বরাদ্দের চেয়ে বেশি বালি দেওয়া হচ্ছে’ দাবি করলেও নদী থেকে বালি উত্তোলন করায় নদী তীরবর্তী মানুষেরা যে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছেন তার তোয়াক্কা করছেন না। একই সাথে জনসম্মুখে জনকল্যাণের বুলি আওড়ালেও পরোক্ষভাবে নদী থেকে বালি উঠিয়ে বিক্রি করছেন ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের কাছে।
এ প্রসঙ্গে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধি মো. বেনজির আহমেদ বলেন, আমরা যদি অন্যত্র থেকে বালু কিনে নিয়ে আসি সে ক্ষেত্রে প্রতি ফুট বালুর দাম পড়বে ০৭টাকা। নদী থেকে বালু তুলতেও আমাদের প্রতি ফুটে ০৭টাকা বা তার বেশি খরচ হচ্ছে। শুধুমাত্র চেয়েরম্যানের চাপে পড়েই আমাদের নদী থেকে বালু তুলতে হচ্ছে।
নদী থেকে বালি উঠিয়ে রাস্তায় দিলে কার লাভ এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, রাস্তা উচু হলে লাভ জনগণের। আর নদী থেকে বালি উঠিয়ে লাভ আলিম চেয়ারম্যানের।
এ প্রসঙ্গে সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসক বলেন, বিষয়টি আমার জানা ছিল না। তদন্ত পূর্বক ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য ইউএনও কে বলে দিচ্ছি।