অনলাইন ডেস্ক :
ভারতের বসিরহাটের ঘোজাডাঙ্গায় গ্রেফতার বাংলাদেশি যুবক জাহাঙ্গীরকে ঘিরে শুরু হয়েছে নানান জল্পনা। ভারতীয় গোয়েন্দাদের দাবি, গ্রেফতার হওয়া জাহাঙ্গীরের সঙ্গে তালেবানের সম্পৃক্ততা পাওয়া গেছে। সে আরও কিছুসংখ্যক বাংলাদেশিকে নিয়ে একটি জোট গঠন করে বাংলাদেশে সাম্প্রদায়িক উসকানি দিচ্ছিল।
তবে সাতক্ষীরা পুলিশ বলছে, জাহাঙ্গীরের এমন কোনো ব্যাকগ্রাউন্ড খুঁজে পাওয়া যায়নি। গরিব পরিবারের এই জাহাঙ্গীর একজন খেটে খাওয়া মানুষ। ভারতের তামিলনাড়ুতে জাহাঙ্গীরের মতো অনেকেই রাজমিস্ত্রির কাজ করেন।
জাহাঙ্গীর হোসেন বিশ্বাস (২৭) সাতক্ষীরা জেলার কালীগঞ্জ উপজেলার নলতা ইউনিয়নের পূর্বনলতা গ্রামের ভ্যানচালক জোহর আলি বিশ্বাসের মেজো ছেলে। তার বড়ভাই আলম সবজি ব্যবসায়ী ও ছোটভাই জাকির তামিলনাড়ুতে জাহাঙ্গীরের সঙ্গে নির্মাণ শ্রমিকের কাজ করতেন। এখন কাঠমিস্ত্রির কাজ করেন বাড়িতে। তাদের মা অন্য সংসারে চলে যাওয়ায় বাড়িতে রয়েছেন বিমাতা। দরিদ্র এই পরিবারটির কোনো রাজনৈতিক পরিচয় নেই এবং তারা কোনো ধরনের অপরাধের সঙ্গে জড়িত এমন প্রমাণও নেই বলে জানায় পুলিশ।
পুলিশ জানায়, গত বৃহস্পতিবার বাংলাদেশে আসার সময় সাতক্ষীরার ভোমরা বন্দরের বিপরীতে ভারতের ঘোজাডাঙায় বিএসএফএর ১৫৩ ব্যাটালিয়ন সদস্যরা তাকে আটক করে। চেন্নাই থেকে গোয়েন্দাদের পাঠানো ছবি দেখে হুবহু মিল পাওয়ায় জাহাঙ্গীরকে আটক করে দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলার বসিরহাট থানায় সোপর্দ করা হয়। শুক্রবার থানায় বসে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করে ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থা সিবিআই।
জিজ্ঞাসাবাদে গোয়েন্দাদের দেওয়া তথ্যের বরাত দিয়ে ভারতীয় একাধিক গণমাধ্যম প্রচার করেছে যে, জাহাঙ্গীর ৬ থেকে ৭ বছর আগে নির্মাণ শ্রমিকের কাজের উদ্দেশ্যে তামিলনাড়ুর চেন্নাইয়ে আসেন। তার সঙ্গে আরও অনেক বাংলাদেশি নির্মাণ শ্রমিক রয়েছেন। চেন্নাইয়ের ইরোট জেলার পেল্লাই গ্রামে কাজ করেন তারা।
তিনি ভারতীয় নাগরিকত্ব গ্রহণ করে নিজের নাম রাখেন রাজু বিশ্বাস। এরপর পাসপোর্ট তৈরি করে বাংলাদেশে আসছিলেন তার আরও দুই সঙ্গীর সঙ্গে। কিন্তু ভারতীয় গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে তার ছবি শনাক্ত করে জাহাঙ্গীরকে আটক করে বিএসএফ। অন্য দুইজন ফিরে আসে বাংলাদেশে।
গোয়েন্দা তথ্যের বরাত দিয়ে ভারতীয় চ্যানেলগুলো আরও জানিয়েছে, সম্প্রতি তালেবানদের আফগানিস্তান দখলের ঘটনায় জাহাঙ্গীর উৎসাহ বোধ করেন। তিনি তার বাংলাদেশি সঙ্গীদের নিয়ে একটি জোট গঠন করেন। তালেবানি কায়দায় বাংলাদেশের ধর্মীয় স্থাপনায় হামলা ও লুটপাটের তাগিদ দিয়ে জাহাঙ্গীর তার জোটে আলোচনা করেন। কিন্তু বেশিরভাগ বাংলাদেশি এতে সম্মত না হওয়ায় হাতেগোনা ৭-৮ জনকে নিয়ে একটি জোট বানিয়ে বাংলাদেশে সাম্প্রদায়িকতা ছড়ানোর জন্য উৎসাহ জোগাচ্ছিলেন। মোবাইল ট্র্যাকিং করে ভারতীয় গোয়েন্দারা এ সম্পর্কে আরও কিছু তথ্য পেয়ে তাকে আটক করেন। আটকের পর থেকেই তাকে দফায় দফায় জিজ্ঞাসাবাদ করেছেন গোয়েন্দারা। এ ঘটনা ভারতীয় মিডিয়ায় প্রচার করা হয়েছে।
এদিকে জাহাঙ্গীরের বিষয় নিয়ে তদন্তে নেমেছেন সাতক্ষীরা পুলিশ ও একাধিক গোয়েন্দা কর্মকর্তা। তার বিরুদ্ধে এখন পর্যন্ত তেমন কোনো উল্লেখযোগ্য তথ্য মেলেনি বলে জানিয়েছেন তারা।
সাতক্ষীরা পুলিশ সুপার মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, জাহাঙ্গীরের বিষয়ে তদন্ত করে কোনো ধরনের আপত্তিকর ও অপরাধজনক কাজের সঙ্গে ওই পরিবারটির সম্পৃক্ততার প্রমাণ কেউ দিতে পারেননি।
স্থানীয় নলতা ইউপি চেয়ারম্যান আজিজুর রহমান একই কথা জানিয়ে বলেন, ওই পরিবারটি শ্রমিক শ্রেণির। তারা কাজকর্ম করে সংসার নির্বাহ করেন।
কালীগঞ্জ থানার ওসি গোলাম মোস্তফা জানান, জাহাঙ্গীরসহ তার পরিবারের কারও রাজনৈতিক পরিচয় নেই। তারা খেটে খাওয়া মানুষ।
তার পাসপোর্ট বাড়িতে রয়েছে জানিয়ে ওসি বলেন, জাহাঙ্গীর কয়েক বছর আগে ভারতের তামিলনাড়ুতে কাজ করতে যান। তার সঙ্গে আরও অনেকেই রয়েছেন। কোনো বিষয়ে জনগণকে সংগঠিত করতে নেতৃত্ব দেওয়ার মতো সক্ষমতা তার নেই।
তার কোনো খারাপ ব্যাকগ্রাউন্ড নেই উল্লেখ করে ওসি আরও বলেন, দুই তিন বছর আগে জাহাঙ্গীর একবার দেশে এসেছিলেন। পরে আবার চলে যান। আমরা তার সম্পর্কে আরও খোঁজখবর নিচ্ছি।
এদিকে জাহাঙ্গীরের বাবা জোহর আলী বিশ্বাস জানিয়েছেন, তাকে অজ্ঞাত পরিচয় এক ব্যক্তি ফোন করে ১ লাখ টাকা দিতে বলেছেন। তাহলে তার ছেলেকে ছেড়ে দেওয়া হবে।
জবাবে তিনি বলেছেন, আমার টাকা দেওয়ার কোনো ক্ষমতা নেই। আমার ছেলে কোনো অপরাধের সঙ্গে জড়িত হতে পারে না। তবে তিনি বিষয়টি নিয়ে উদ্বেগের মধ্যে আছেন।