অনলাইন ডেস্ক: অবশেষে মঙ্গলবার (১৯ জুলাই) জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় উঠছে মেট্রোরেল মেগা প্রকল্পের সময় ও ব্যয় বাড়ানোর প্রস্তাব। প্রস্তাবনা অনুযায়ী, প্রকল্পের মেয়াদ বাড়ছে দেড় বছর। ব্যয় বাড়বে ১১ হাজার ৫১৪ কোটি টাকা। একইসঙ্গে দৈর্ঘ্য বাড়বে ১ দশমিক ১৬ কিলোমিটার। মোট ব্যয় দাঁড়াবে ৩৩ হাজার ৪৭১ কোটি ৯৯ লাখ টাকা। সর্বশেষ মেট্রোরেলের ব্যয় নির্ধারিত ছিল ২১ হাজার ৯৫৮ কোটি টাকা।
এজন্য বর্তমান উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাব (ডিপিপি) সংশোধন করছে মেট্রোরেল বাস্তবায়নকারী প্রতিষ্ঠান ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেড (ডিএমটিসিএল)। সংশ্লিষ্টদের প্রস্তাবনা যাচাই-বাছাই করা হয় পরিকল্পনা কমিশনে প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির বৈঠকে।
প্রকল্পের সময় ও ব্যয় বাড়ানো প্রসঙ্গে পরিকল্পনা কমিশনের ভৌত অবকাঠামো বিভাগের সদস্য (সচিব) মো. মামুন-আল-রশীদ বলেন, নানা কারণে নতুন করে চলমান মেট্রোরেল-৬-এ ব্যয় ও মেয়াদ বাড়ছে। মেট্রোরেলের দৈর্ঘ্য বাড়ার পাশাপাশি স্টেশন প্লাজা নির্মাণের জন্য ভূমি অধিগ্রহণ খাতেও ব্যয় বাড়ছে।
উত্তরার দিয়াবাড়ি থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত ১১ দশমিক ৭৩ কিলোমিটার অংশের কাজ বলতে গেলে শেষ। চলতি বছরের ডিসেম্বরে এ অংশে মেট্রোরেল চলাচল উদ্বোধন করা হবে। কাজ চলছে প্রকল্পের বাকি অংশেও। তবে মতিঝিল ছাড়িয়ে মেট্রোরেলের রুট কমলাপুর পর্যন্ত নেওয়ায় প্রকল্পের কাজ বেড়ে গেছে। মতিঝিল থেকে কমলাপুর পর্যন্ত দৈর্ঘ্য ১ দশমিক ১৬ কিলোমিটার ধরে মেট্রোরেলের রুট দাঁড়াচ্ছে ২১ দশমিক ২৬ কিলোমিটার। কাজ বাড়ার কারণে বেড়েছে ব্যয়ও। ডিপিপির দ্বিতীয় সংশোধন প্রস্তাবে প্রাক্কলিত ব্যয় ধরা হয়েছে ৩৩ হাজার ৪৭১ কোটি টাকা।
প্রকল্প সংশোধনের কারণ: ১৩ থেকে ১৭টি নতুন করে স্টেশন প্লাজার জন্য ভূমি অধিগ্রহণ, মতিঝিল থেকে কমলাপুর লাইনে সিভিল ওয়ার্কস ও রোলিং স্টকস মডিফিকেশন কাজ করা হবে। ভূমি অধিগ্রহণ খাতে ভূমির পরিমাণ ও ব্যয় বৃদ্ধি, জেনারেল পরামর্শক খাতে জন মাসের পরিমাণ ও ব্যয় বৃদ্ধি, পুনর্বাসন সহায়তা পরামর্শক, মেইন লাইনে সিভিল এবং স্টেশন ওয়ার্ক কাজ করা হবে।
ইনস্টিটিউশনাল ডেভেলপমেন্ট কন্সালটেন্সি , বৈদেশিক ঋণের সুদ, রোলিং স্টক অ্যান্ড ইক্যুইপমেন্ট, প্রাইস কন্টিনজেন্সি, সিভিল এবং বিল্ডিং ওয়ার্ক কাজ করা হবে। মেইন লাইনে সিভিল এবং স্টেশন ওয়ার্ক ইত্যাদি খাতের ব্যয় বাড়ানো এবং প্রকল্পের বাস্তবায়ন মেয়াদ ১ বছর ৬ মাস বাড়ানোর প্রস্তাব এসেছে।
আগের প্রকল্প প্রস্তাবনা অনুসারে, ২১ হাজার ৯৮৫ কোটি টাকা ব্যয়ের মধ্যে ১৬ হাজার ৫৯৫ কোটি টাকাই ছিল জাপান আন্তর্জাতিক সহযোগিতা সংস্থা-জাইকার ঋণের। বাকি টাকা সরকারি তহবিলের। নতুন করে যে ব্যয় বাড়ছে, সেখানে জোগানের জন্য জাইকা থেকে ঋণ চাওয়া হবে আরও তিন হাজার ৮১ কোটি ১১ লাখ টাকা। সরকারি তহবিল থেকে দেওয়া হবে আট হাজার ৪০৫ কোটি ৮১ লাখ টাকা। নতুন অর্থ জাইকা দিলে তাদের ঋণ দাঁড়াবে ১৯ হাজার ৭১৮ কোটি ৪৬ লাখ টাকা। এ প্রকল্পে সরকারি তহবিলের ব্যয় দাঁড়াবে ১৩ হাজার ৭৫৩ কোটি টাকা।
ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেডের (ডিএমটিসিএল) বাস্তবায়নাধীন প্রকল্পটির প্রাথমিক মেয়াদকাল ছিল ১ জুলাই ২০১২ থেকে ৩০ জুন ২০২৪। তবে কাজ বেড়ে যাওয়ায় প্রকল্প শেষ করতে সময় লাগবে আরও এক বছর ছয় মাস। সেক্ষেত্রে এটির মেয়াদ ২০২৫ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে।
সময় ও ব্যয় বাড়িয়ে প্রকল্প প্রস্তাবনা সংশোধন প্রসঙ্গে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, মতিঝিল থেকে কমলাপুর পর্যন্ত ১ দশমিক ১৬ কিলোমিটার বাড়তি অংশে ভূমি অধিগ্রহণ, নির্মাণ ও ইঅ্যান্ডএম সিস্টেম সংগ্রহ করা হবে। পাশাপাশি ট্রানজিট ওরিয়েন্টেড ডেভেলপমেন্টের (টিওডি) জন্য ভূমি বরাদ্দ ও নকশা তৈরি, ট্রেন পরিচালনার বিদ্যুৎ খরচ এবং এন্টারপ্রাইজ রিসোর্স ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম সংগ্রহ করা হবে। এছাড়া স্টেশনে যাত্রী ওঠানামার জন্য লিফট, এস্কেলেটর ও সিঁড়ি তৈরি, ফুটপাত নির্মাণ, পরামর্শক ব্যয় এবং আনুষঙ্গিক কার্যক্রম চলবে। এসবের কারণে প্রকল্প বাস্তবায়নে সময় ও ব্যয় বাড়ছে।