নিজস্ব প্রতিনিধি :
নারী এবং যুবদের দক্ষতা বৃদ্ধিছাড়া প্রকৃত উন্নয়ন সম্ভব নয়। অথচ নারী ও যুবদের বাদ দিয়েই স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানে কোটি কোটি টাকার বাজেট করা হয়। নারী এবং যুবদের দক্ষতা বৃদ্ধিতে স্থানীয় সরকারের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা থাকা প্রয়োজন বলে মনে করেন সচেতন মহলের নেতৃবৃন্দ।
এক সমীক্ষায় দেখা গেছে, বর্তমানে গ্রামীণ নারীর সংখ্যা ৫ কোটি ৩০ লাখ। গ্রামীণ নারীর বড় অংশই প্রান্তিক,দরিদ্র ও ভূমিহীন।
অন্যদিকে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর সূত্রে ৫২ মিলিয়ন জনগণ যুব যা মোট জনসংখ্যার ৩৩% এর বেশি। বর্তমান বাংলাদেশের মোট জনসংখ্যার ৪২.৫ ভাগ অর্থ্যাৎ প্রায় ৬ কোটি যুবক রয়েছে। সমাজের এতবড় একটি অংশের জনগোষ্ঠীর জন্য কোন বাজেট না রাখাটা নিশ্চয় উন্নয়নের জন্য বড় বাধা বলে মন্তব্য করেন অনেকে।
জানা গেছে, সাতক্ষীরা পৌরসভায় ২০২২-২০২৩ বছরে অর্থবছরে এডিপি, রাজস্ব এবং উন্নয়ন খাতে(প্রোজেক্ট) মোট ৭১ কোটি ৯৭ লক্ষ ১৪৩৮১ টাকার বাজেট ঘোষণা করা হয়েছিল। কিন্তু দু:খজনক হলেও সত্য এত বড় বাজেটে যেটি বেশি দরকার ছিলো নারী ও যুবদের উন্নয়নের বরাদ্ধ রাখা। সেটি করা হয়নি। যদিও পৌরসভা কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, মন্ত্রণালয় থেকে বাজেটে এধরনের কোন ফরমেট না থাকায় ইচ্ছা থাকলেও বরাদ্দ রাখা হয়নি। তবে আগামী বাজেটে অবশ্যই নারী ও যুবদের দক্ষতা উন্নয়নে একটি বড় বরাদ্ধ রাখা হবে।
স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানে নারী ও যুব বান্ধব বাজেট বিষয়ে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবস্থাপনা স্টাডিজ বিভাগের অধ্যাপক মোঃ মিজানুর রহমান রহমান সম্প্রতি এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন, দেশে উন্নয়ন হলেও বৈষম্য বাড়ছে। বৈষম্য কমাতে হলে স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠান অর্থাৎ ইউনিয়ন পরিষদ,পৌরসভা,উপজেলাপরিষদ, সিটি কর্পোরেশন ও জেলা পরিষদে বরাদ্দ বাড়ানোর বিকল্প নেই। এ বরাদ্দ কমপক্ষে উন্নয়ন বাজেটের ৫ শতাংশ হওয়া উচিত। পাশাপাশি বিকেন্দ্রীকরণ নীতি প্রণয়ন ও তার আলোকে স্থানীয় সরকারের জন্য সমন্বিত আইন প্রণয়নে উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে।
যুব সংগঠক, জাগো যুব ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক শেখ ফারুক হোসেন বলেন, বাংলাদেশের মোট জনসংখ্যার ৪২.৫ ভাগ যুবক। অর্থাৎ প্রায় ৬ কোটি যুবক রয়েছে। এই যুবকরা উন্নয়নশীল বাংলাদেশের অর্থনীতি তৈরিতে ভূমিকা রাখতে পারবে। কিন্তু আমরা দেখি স্থানীয় সরকার অর্থাৎ ইউনিয়ন পরিষদ, পৌরসভায় তাদের জন্য কোন বাজেট থাকে না। যুবদের মান উন্নয়নে বা কর্মসংস্থার সৃষ্টিতে ইউনিয়ন পরিষদ কোন ভূমিকা রাখে না। যুবদের কোন কর্মপরিকল্পনা বা যুব বান্ধব কোন কর্মসূচিও নেই। ফলে কি হয় যুবকরা কর্মহীন হয়ে পড়ছে। অথচ বাংলাদেশের যুবরা ড্রোন তৈরি করছে, ব্যাটারি চালিত যন্ত্র, হেলিকপ্ট্যার তৈরি করছে। ট্রেন অটোমেটিক থেকে যাবে। কিন্তু অর্থনৈতিক সহযোগিতা না পাওয়ায় যুবরা থেকে যাচ্ছে। ফলে যুবকদের শক্তিক্রমশ ছিটকে পড়ছে। দেশের উন্নয়নে যুবদের সম্পৃক্ত করতে হলে অবশ্যই তাদের জন্য বাজেট রাখতে হবে।
সাতক্ষীরার বিশিষ্ট নাগরিক নেতা এ্যাড. ফাহিমুল হক কিসলু বলেন, আমরা দীর্ঘদিন ধরে নারী ও যুবদের দক্ষতা ও ক্ষমতায়নের জন্য আন্দোলন করে আসছি। বর্তমান সময়ে এসে সকলেরই সেই উপলদ্ধি হয়েছে দেশের উন্নয়নে সবার আগে নারী ও যুবদের জন্য কাজ করতে হবে। তাদের জন্য স্থানীয় সরকারসহ বিভিন্ন দপ্তরে বরাদ্ধ দিতে হবে। সরকার টিটিসি, যুব উন্নয়ন অধিদপ্তরের মাধ্যমে যুবদের দক্ষতা বৃদ্ধিতে কাজ করছেন। কিন্তু প্রতিষ্ঠানগুলো শহর কেন্দ্রিক হওয়ার কারনে প্রত্যন্ত অঞ্চলের নারী ও যুবরা সকল ধরনের সুযোগ সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।
যদি ইউনিয়ন পরিষদগুলোতে নারী ও যুবদের দক্ষতার জন্য প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়। তাহলেই প্রকৃত অর্থে উন্নয়ন সম্ভব। তবে এক্ষেত্রে অবশ্যই ইউনিয়ন পরিষদের বাজেটে এই খাতে বেশি পরিমাণে বরাদ্দ রাখতে হবে। অথবা কারিগরি প্রশিক্ষণের মত কর্মমূখি প্রতিষ্ঠানগুলোকে প্রত্যন্ত এলাকায় প্রতিষ্ঠা করতে হবে।
সাতক্ষীরা পৌর মেয়র তাজকিন আহমেদ চিশতী বলেন, যুবদের জন্য বাজেটের কোন ফরমেট মন্ত্রনালয় থেকে দেওয়া হয়নি। তবে নারী ও যুবদের উন্নয়ন প্রয়োজন। সেকারনে আগামী বাজেটে অবশ্যই নারী এবং যুবদের জন্য বরাদ্ধ রাখা হবে।