সরেজমিনে গেলে দেখা যায়, ইউনিয়ন পরিষদটির সচিবের রুমসহ অন্যান্য রুমে তালা ঝুলানো। বেলা গড়িয়ে বিকাল হলেও পরিষদটির সচিব মহসিন কবির, উদ্যোক্তা শহিদুল ইসলামসহ গ্রাম পুলিশের সদস্যরা পরিষদে আসেননি। এসময় সেবা প্রত্যাশীরা মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করলেও সচিব, উদ্যোক্তার নাম্বারটি বন্ধ পান। এতেকরে, চরম ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন এলাকাবাসী। প্রতিদিন অফিস টাইমে দূর-দূরান্ত থেকে এসে নির্ধারিত স্থানে সচিব, উদ্যোক্তাসহ সংশ্লিষ্টদের না পেয়ে ফিরে যেতে হচ্ছে তাদের। দীর্ঘদিন ধরে এমন অবস্থা চলতে থাকায় বর্তমানে এলাকাবাসীরা চরম দুর্ভোগে পড়েছেন।
ভূক্তভোগি সেবা প্রত্যাশীরা জানান, পরিষদের সকল ভবন বন্ধ থাকলেও উদ্যোক্তার রুমটি খোলা ছিল। দুইজন উদ্যোক্তার ভিতরে শহিদুল পরিষদে না থাকলেও মহিলা উদ্যোক্তা ইয়াসমিন ইউনিয়ন পরিষদে ছিলেন। তবে, তিনি সেবাপ্রত্যাশীদের কোন কাজ না করেই তাদেরকে ফিরিয়ে দেন। আর ৪-৫ দিন পর পরিষদে আসার কথা বলেন। এসময় আমরা তাকে প্রশ্ন করলে তিনি জানান উপর মহলের চাপ আছে।
খোজঁ নিয়ে জানা যায়, ভোমরা ইউনিয়নের পরিষদের ইউপি চেয়ারম্যান ইসরাইল গাজী গুরুত্বর অসুস্থ হওয়াতে গত ৩০ নভেম্বর সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসকের কার্যালয় স্থানীয় সরকার শাখার ৮৭০০.০২৭.২৩.০০৩.২১-১১৮৭ নং স্মারকের সূত্রে ১ ডিসেম্বর সদর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা ফতেমা-তুহ-জোহরা স্বাক্ষরিত ০৫.৪৪.৮৭৮২,০০০.১০.০০৫.২১-১৪১৬ নং স্মারকে স্থানীয় সরকার (ইউনিয়ন পরিষদ) আইন, ২০০৯ এর ৩৩(৫) ধারা অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ সংক্রান্ত একটি পত্রে জানান, ভোমরা ইউপি চেয়ারম্যানের অসুস্থ্যতাজনিত ছুটিকালীন সময়ে দায়িত্ব পালনের জন্য প্যানেল চেয়ারম্যান গঠনের লক্ষ্যে নির্দেশনা পাওয়া গেছে। উক্ত ইউনিয়নের সদস্যদের মধ্যে ১০ জন প্যানেল চেয়ারম্যান হতে ইচ্ছুক নয় মর্মে লিখিত বক্তব্য পেশ করেছেন। একারনে, স্থানীয় সরকার (ইউনিয়ন পরিষদ) আইন, ২০০৯ এর ৩৩(৫) ধারা অনুযায়ী সকল ইউপি সদস্যের মতামত ও সংখ্যা গরিষ্ঠতার
ভিত্তিতে ইউপি সদস্য জি.এম. আব্দুর রহিম ও কবির হোসেনকে প্যানেল চেয়ারম্যান করা হলো। এবং এ বিষয়ে পরবর্তী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য পরিষদটির সচিব মহসিন কবিরকে নির্দেশনা দেন।
এব্যাপারে ভোমরা ইউনিয়ন পরিষদের ইউপি সদস্যরা বলেন, নির্দেশনা মোতাবেক পরিষদটির সচিব মহসিন কবির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান হিসেবে প্যানেল চেয়ারম্যান আব্দুর রহিমকে দায়িত্ব বুঝিয়ে দেওয়ার পর থেকে নিয়মিত পরিষদে আসেননা সচিব মহসিন কবির। এবং তার কথাতেই পরিষদটির উদ্যোক্তা ও গ্রাম পুলিশ সদস্যরা পরিষদে আসেননা। এতেকরে সেবা প্রত্যাশী সাধারণ জনগণ চরম হয়রানির শিকার হচ্ছে বলে জানান তারা।
এপ্রসঙ্গে ভোমরা ইউনিয়ন পরিষদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান আব্দুর রহিম বলেন, এভাবে একটা পরিষদ চলতে পারেনা। একটা মহলের কথামত পরিষদটির সচিব, গ্রাম পুলিশসহ উদ্যোক্তা পরিষদে আসতেছেন না। এতেকরে জনগণ চরমভাবে হয়রানী ও ভোগান্তির শিকার হচ্ছে বলে জানান তিনি। ক্ষোভ প্রকাশ করে তিনি বলেন, মানুষ মাত্র সমস্যাই থাকতে পারে। তবে ইউনিয়ন পরিষদের অভিভাবক হিসেবে সেটা জানা আমার অধিকার। অথচ কোন প্রকার সমস্যা না থাকা সত্ত্বেও মুঠোফোন বন্ধ করে রেখেছেন পরিষদটির সচিব- উদ্যোক্তাসহ গ্রাম পুলিশরা। এসময় দ্রুত এ সমস্যা সমাধান ও অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সংশ্লিষ্টদের হস্তক্ষেপ কামনা করেন তিনি।
এব্যাপারে ভোমরা ইউনিয়ন পরিষদের মহিলা উদ্যোক্তা ইয়াসমিন বলেন, সচিব-গ্রামপুলিশসহ সংশ্লিষ্টরা কেন পরিষদে আসেননি সেটা আমি জানিনা। সেবাপ্রত্যাশীদের কাজ না করে ফিরিয়ে দেওয়ার কারন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, তারা যে কাজে আসছে সেটা আমি করিনা। উদ্যোক্তা শহিদুল ইসলাম করেন। এজন্য তাদেরকে ফিরিয়ে দিয়েছি বলে জানান তিনি।
এব্যাপারে পরিষদটির সচিব মহসিন কবির ও উদ্যোক্তা শহিদুল ইসলামের সাথে একাধিক বার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তাদের নাম্বার বন্ধ পাওয়া যায়।