সাতক্ষীরার তালা উপজেলার সদরে অবস্থিত তালা জেলেপাড়া বা মালো পল্লী। পাশ ঘেষেই কপোতাক্ষ নদ প্রবহমান। কিন্তু পানি নিস্কাশনের পথ না থাকায় প্রতিবছর জলাবদ্ধতার কবলে পতিত হয় মালোপাড়ার প্রায় ৮০টি পরিবারের ৪০০ মানুষ। ভারী বৃষ্টি, অতিবৃষ্টিতে পরিস্থিতি আরও নাজুক হয়ে পড়ে। এলাকার পরিবেশ জলাবদ্ধতায় রুপ নেয়। মানুষ, গবাদিপশুর একসাথে বসবাস করতে হয়।
এসময় ছেলে মেয়েদের স্কুলে যাওয়া-আসা কষ্টকর হয়ে পড়ে। পানিবাহিত রোগে আক্রান্ত হয়ে পড়ে অধিকাংশ মানুষ। জলাবদ্ধতা নিরসে স্থায়ী উদ্যোগ না নেয়ার দীর্ঘ বছর ধরে মালোপল্লীর বাসিন্দাদের যন্ত্রনার অবসান হয় না।
রিসার্চ ইনিশিয়েটিভস বাংলাদেশ (রিইব), নেটজ ও বিএমজেড এর সহায়তায় হোপ প্রকল্প কার্যক্রম বাস্তবায়নের শুরুতে অত্র গ্রামে গঠন করে গ্রাম নাগরিক সমাজ সংগঠন। সংগঠনের সকল কর্মী ঐক্যবদ্ধ ও সক্ষমতা বৃদ্ধি করতে থাকে। গ্রাম ভিত্তিক আলোচনায় উঠে আসে অত্র গ্রামের জলাবদ্ধতার কারন ও এর মারাত্মক প্রভাব। সমস্যা সমাধানের পথ হিসেবে সদস্যবৃন্দ সিদ্ধান্ত নেয় উক্ত বিষয়টি ইউনিয়ন এবং উপজেলা সিএসও গ্রুপে তুলে ধরার। ইতোমধ্যে উপজেলা সিএসও সভায় সদস্যবৃন্দ অগ্রাধিকারভিত্তিতে সমস্যাটি চিহ্নিত করে।
গত ২৩ জুন ২০২৫ দুুপরে তালা উপজেলা নির্বাহী অফিসার শেখ মো. রাসেল’র সাথে তাঁর কার্যালয়ে উপজেলা সিএসও সাধারণ সম্পাদক চন্দ্রশেখর দাস সামাজিক সমস্যা উপস্থাপনের সময় তালা মালোপাড়ার চিত্র তুলে ধরেন।
অতঃপর উপজেলা সদস্য ছায়া বিশ^াস তালা মালোপাড়ার পক্ষ থেকে সুনির্দিষ্টভাবে ইউএনও মহোদয়ের সরেজমিন পরিদর্শনপূর্বক একটি ড্রেন এর ব্যবস্থা করার জন্য অনুরোধ করেন। ইউনিয়ন সিএসও সদস্য নিলীমা দাস, জেলা সিএসও সদস্য জুলফিকার রায়হান জানান, নদীর পাশে প্রধান সড়কের প্রায় গা ঘেষে যাওয়ায় ড্রেন ছাড়া পানি নিস্কাশনের আর কোন বিকল্প উপায় নেই। তাই এখানে একটি মাত্র ৫০/৬০গজ একটি ড্রেন তৈরি করলে বর্ষার পানি নিস্কাসন হবে এবং পাড়ার বাসিন্দাদের দীর্ঘদিনের যন্ত্রণা অবসান ঘটবে।
তালা উপজেলা নির্বাহী অফিসার শেখ মো. রাসেল বিষয়টি গুরুত্বের সাথে গ্রহণ করেন এবং রিইব সংস্থাকে একটি রেজুলেশন তৈরি করে ইউএনও এর অনুমোদন গ্রহণ করে রাখতে বলেন। এসময় তিনি সরেজমিন পরিদর্শন করে চলতি বাজেটে উক্ত ড্রেন তৈরির বরাদ্দ নিশ্চিত করার প্রত্রিশ্রুতি প্রদান করেন।
২৭ জুন ২০২৫ বেলা দুপুরে জেলা সিএসও সদস্য সাংবাদিক জুলফিকার রায়হান’র উদ্যোগে উপজেলা নির্বাহী অফিসার শেখ মো. রাসেল তালা মালোপাড়া সরেজমিন পরিদর্শন করেন এবং মালো পল্লীবাসীদের জলাবদ্ধতার পরিস্থিতি অবলোকনপূর্বক এ সপ্তাহ থেকেই প্রাথমিকভাবে ড্রেন তৈরি করার কাজ শুরু করার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে নির্দেশনা প্রদান করেন।
এসময় ইউনিয়ন ভূমি অফিসার অসিম কুমার হালদার, অধ্যাপক প্রদীপ কুমার, শিক্ষক পূর্ণিমা রাণী ঘোষ, মানবাধিকার কর্মী ভবতোষ মন্ডল ও ইউপি সদস্য জাহাঙ্গীর হোসেন, উন্নয়ন কর্মী চন্দ্র শেখর, রামপ্রসাদ হালদার ছায়া বিশ^াস, রীতা সহ ভুক্তভোগী নারী-পুরুষ উপস্থিত ছিলেন। জলাবদ্ধতা মুক্ত করার তাৎক্ষণাত উদ্যোগ নেয়ায় গ্রামবাসী উপজেলা নির্বাহী অফিসার শেখ মো. রাসেলকেসহ রিইব এবং নেটজ বিডি কে ধন্যবাদ জানান।
লেখক : –বিকাশ কুমার দাশ. উন্নয়ন ও মানবাধিকার কর্মী!