‘নিখোঁজ’ থাকার ১৯ ঘণ্টা পর যশোরের অভয়নগর থেকে উদ্ধার হওয়া কবি ও কলামিস্ট ফরহাদ মজহারের জবানবন্দি গ্রহণের জন্য ঢাকা মুখ্য মহানগর হাকিমের আদালতে নেয়া হচ্ছে। ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের যুগ্ম কমিশনার আব্দুল বাতেন বিষয়টি জানিয়েছেন।
মঙ্গলবার ডিবি কার্যালয়ের মিডিয়া সেন্টারে উপস্থিত সাংবাদিকদের তিনি জানান, ফরহাদ মজহারকে উদ্ধারের পর ডিবি কার্যালয়ে নিয়ে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। তিনি স্বেচ্ছায় বাসা থেকে বের হয়েছিলেন নাকি তাকে অপহরণ করা হয়েছিল- এসব বিষয়ে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়।
‘তিনি আমাদের জানিয়েছেন, বাসার গেট থেকে চোখ বেঁধে একটি সাদা মাইক্রোতে করে তাকে নিয়ে যাওয়া হয়।’
এসব বিষয়ে তিনি আদালতে ২২ ধারায় জবানবন্দি দেবেন। এ কারণে তাকে আদালতে নেয়া হচ্ছে বলেও জানান ডিবির যুগ্ম কমিশনার আব্দুল বাতেন।
তিনি কি স্বাভাবিকভাবে বাসা থেকে বের হয়েছিলেন, না কি তাকে কেউ ফোন করে বাসা থেকে বের হতে বলেছিল- এমন প্রশ্নের জবাবে আব্দুল বাতেন বলেন, ‘তিনি (ফরহাদ মজহার) আমাদের জানিয়েছেন, তাকে কেউ ফোন করেনি। তিনি স্বেচ্ছায় ওষুধ কেনার জন্য বাসা থেকে বের হয়েছিলেন।’
ফরহাদ মজহারের নিখোঁজের ঘটনায় সোমবার রাতেই স্ত্রী ফরিদা আক্তার বাদী হয়ে আদাবর থানায় একটি অপহরণ মামলা দায়ের করেন। মামলা নং- ০৪। এর আগে, তিনি জিডি করেছিলেন। জিডি নং- ১০১।
অপহরণ মামলা প্রসঙ্গে আব্দুল বাতেন বলেন, বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। তদন্তের পর বিস্তারিত জানাতে পারব।
এর আগে, তেজগাঁও বিভাগের উপ-কমিশনার (ডিসি) বিপ্লব কুমার সরকার জানান, ফরহাদ মজহারকে আজই ঢাকা মুখ্য মহানগর হাকিমের আদালতে নেয়া হচ্ছে।
সোমবার রাতে যশোরের অভয়নগরের একটি যাত্রীবাহী বাস থেকে ফরহাদ মজহারকে উদ্ধারের পর মঙ্গলবার সকালে তাকে নেয়া হয় আদাবর থানায়। সেখান থেকে তেজগাঁওয়ের ডিসি কার্যালয়ে নেয়ার পর জিজ্ঞাসাবাদ করতে পরে তাকে নেয়া হয় মিন্টো রোডে গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) কার্যালয়ে।
বিপ্লব কুমার সরকার জানিয়েছেন, জিজ্ঞাসাবাদ শেষে ফরহাদ মজহারকে আদালতে সোপর্দ করা হবে। এরপর আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী পরবর্তী ব্যবস্থা নেয়া হবে।
সোমবার ফরহাদ মজহার নিখোঁজ হওয়ার পর পরিবারের অভিযোগের ভিত্তিতে আদাবর থানায় এ সংক্রান্ত একটি অপহরণ মামলা হয়েছে বলে ডিসি বিপ্লব জানালেও পরিবার দাবি করছে, তারা এখনো কোনো মামলা দায়ের করেনি। শুধু লিখিত অভিযোগ করা হয়েছে।
সোমবার ভোরে শ্যামলীর রিং রোড ১ নং হক গার্ডেনের বাসা থেকে বের হওয়ার পর নিখোঁজ হন ফরহাদ মজহার।
পরবর্তীতে তিনি স্ত্রীকে মোবাইলে ফোনে জানান, কে বা কারা তাকে ধরে নিয়ে যাচ্ছেন। তাকে মেরেও ফেলা হতে পারে। সন্ধ্যা পর্যন্ত ৬ বার ফোন করে ৩৫ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করা হয়।
নিখোঁজ হওয়ার সংবাদ ছড়িয়ে পড়লে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী তাৎক্ষণিক উদ্যোগ নিয়ে মোবাইল ট্রাকিং করে তার অবস্থান সম্পর্কে নিশ্চিত হয়ে ১৯ ঘণ্টা পর যশোরের অভয়নগরের একটি যাত্রীবাহী বাস থেকে তাকে উদ্ধার করে।
তবে কিভাবে তিনি যশোর পৌঁছালেন বা কারা তাকে সেখানে নিয়ে গেছে সে সব বিষয় এখনও পরিষ্কার নয়।
এরইমধ্যে রাতে খুলনা রেঞ্জের ডিআইজি দিদার আহমেদ এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, প্রাথমিকভাবে আমাদের মনে হয়েছে, তিনি ঢাকা থেকে স্বেচ্ছায় খুলনায় ভ্রমণ করেন। তবে এখনই এ বিষয়ে পুরোপুরি নিশ্চিত করে কিছু বলা যাবে না। তাকে ঢাকায় নিয়ে বিস্তারিত জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।
ঠিক কি কারণে ফরহাদ মজহার বাসা থেকে বের হয়েছিলেন- এমন প্রশ্নের জবাবে তেজগাঁও বিভাগের এডিসি ওয়াহিদুল ইসলাম বলেছেন, সে বিষয়ে জানতেই তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। প্রাথমিকভাবে জানা গেছে তার সঙ্গে ছোট একটি ব্যাগ ছিল। সেই ব্যাগে মোবাইলের চার্জার ও শার্টও ছিল। এ থেকে অনুমান করা যায় তার বাসা থেকে বের হওয়ার পেছনে অন্য কোনো উদ্দেশ্য থাকতে পারে।
যশোরের অভয়নগর থেকে উদ্ধারের পর আজ (মঙ্গলবার) সকাল ৯টার দিকে তাকে আদাবর থানায় নেয়া হয়। সেখান থেকে পরে তাকে নেয়া হয় তেজগাঁও ডিসির কার্যালয়ে। এরপর জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তাকে নেয়া ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ কার্যালয়ে।
পূর্ববর্তী পোস্ট