বস-টু
রেটিং: ১/ ৫
শিল্পী: জিৎ, শুভশ্রী, ফারিয়া, অমিত হাসান প্রমুখ।
প্রযোজনা: জাজ মাল্টিমিডিয়া (বাংলাদেশ) ও জিৎ ফিল্মস (ভারত)
পরিচালক: আবদুল আজিজ (বাংলাদেশ) ও বাবা যাদব (ভারত)
গল্পকার: জিৎ
আমি আমজনতা। একজন মিডিয়াকর্মী হিসেবে যৌথ ‘প্রতারণা’ কখনও সমর্থন করি না। তবে একজন সাধারণ দর্শক হিসেবে গত বছর ‘অজ্ঞাতনামা’ ও ‘আয়নাবাজি’র পাশাপাশি যে দুটি ছবি উপভোগ করেছিলাম, তার একটি ‘শিকারী’, অন্যটি ‘বাদশা’। সেই ধারাবাহিকতায় এবারের ঈদেও সব কটি ছবি দেখার ইচ্ছে থেকে ঈদের দিন সবান্ধব দেখলাম যৌথ প্রযোজনার ‘বস-টু’।
ছবিটি দেখা শেষ করে একটি কথাই মাথায় ঘুরপাক খেয়েছে-এই প্রোডাক্টের জন্য এত হৈ চৈ, এত আন্দোলন! কী আছে ‘বস-টু’তে? রোমান্স, কমেডি, ফ্যমিলি ড্রামা, ইমোশন? অত্যন্ত দুঃখের সঙ্গে বলতে হয়, ‘বস-টু’ ছবিতে এর কোনও কিছুই নেই। আমি এমন এক আমজনতা, যার চাহিদা খুব কম। আমি অল্পতেই তৃপ্ত হই। অল্পতেই যে কোনও নাটক/ চলচ্চিত্র/ গান ভালো লাগে। তবে ‘বস-টু’ দেখে বারবারই শুধু মনে হয়েছে, যারা এ ছবিটি নির্মাণ করেছেন, তারাও কি বুকে হাত দিয়ে বলতে পারবেন, ছবিটি তাদের ভালো লেগেছে? জিতের অন্ধ ভক্তরাও কি এ ছবি দেখে তাদের মুগ্ধতার কথা জানাতে পারবেন? আমার মনে হয় না।
আমি ‘বস’ দেখেছিলাম। তেলেগু ছবি ‘বিজনেসম্যন’ দেখার পরও সে ছবির রিমেক ‘বস’ আমার ভালো লেগেছিল। তবে ‘বস-টু’ দেখে আমার, আমার পরিবার ও বন্ধুদের মস্তিষ্কে যে যন্ত্রণা হলো এর দায়ভার কে নেবেন? শুরুতেই দায়ী করি এর ভারতীয় পাণ্ডুলিপিকারকে। যেকোনও চলচ্চিত্রই দর্শককে আকর্ষণ করবে যদি তারা গল্পের মধ্যে চমক খুঁজে পান। অথচ ‘বস-টু’র শুরুতেই দর্শক বুঝে গেছেন, শেষ পর্যন্ত ভিলেন কে হবেন? গল্পের মধ্যে কোনও ধরনের রস নেই, নেই চমক, আছে শুধু গালভরা বুলি।
রজনীকান্ত, সালমান খান কিংবা অক্ষয় কুমারের মতো জিতের সংলাপ- ‘আমি একবার বলি আর দশবার বলি, মানে কিন্তু একটাই’ রীতিমতো বিরক্তির উদ্রেক করেছে দর্শকদের। একবার, দুইবার, বড় জোর তিনবার এ জাতীয় সংলাপ হজম করা যায়। কিন্তু পুরো ছবিতে এই সংলাপ এসেছে ১০/১২ বার। রীতিমতো অত্যাচার!
কাহিনি উন্মোচন করছি না। তবে সিনেমাটিক উদারতার সুযোগে এ ছবিতে যা ইচ্ছে, তাই করা হয়েছে। দেশের নুসরাত ফারিয়া বিরতির বেশ খানিকটা সময় পর এ ছবিতে এন্ট্রি নেন। এর আগে বেশ কিছু ছবিতে তার অভিনয় দেখে প্রতিষ্ঠিত নায়িকা হবার সম্ভাবনা দেখেছিলাম। তবে ‘বস-টু’ ছবির আয়শা চরিত্রে ফারিয়া আসলে কী দেখাতে চেয়েছিলেন, আমি জানতে চাই। তিনি টাইমস অব ইন্ডিয়াকে বলেছিলেন, এ ছবিটির আয়শা চরিত্রটি নাকি ট্রেন্ড সেট করবে অন্যান্য নায়িকাদের জন্য। ফারিয়া কি কথাটি নিজে বুঝে বলেছিলেন? কী কী কারণে ট্রেন্ড সেট করবে- যুক্তিগুলো বুঝতে চাই। কারণ আমার মতে, ‘বস-টু’ ছবিতে রীতিমতো ফারিয়াকে ও তার ভক্তদের ঠকানো হয়েছে। যদিও ‘ইয়ারা মেহেরবান’ গানে ফারিয়া ভালো নেচেছেন। হিন্দি ছবি ‘ফ্যন্টম’-এর ‘আফগান জালেবি’ এবং ‘এক থা টাইগার’ ছবির ‘মাশাল্লাহ মাশাল্লাহ’ গান দুটিও আমি দেখেছি। সেই দুটির আদলে যদি ফারিয়ার গানটি করতেই হয়, তবে বিশ্বাসযোগ্যভাবে চিত্রায়ণ করলেই হতো। গানটির উপস্থাপন খটকা লেগেছে। ফারিয়াকে এতে পার্শ্বচরিত্র ধরিয়ে দিয়ে ছবির শেষে শুভশ্রী-জিৎ সুখে শান্তিতে বসবাস করতে থাকেন। জিৎ যদিও তার চরিত্রে সুঅভিনয় করার চেষ্টা করেছেন। তবে দুর্বল চিত্রনাট্য ও চরিত্রের কারণে তিনি কোনোভাবেই দর্শকমন জয় করতে পারেননি। বিষয়টি আমার বেশ কয়েকজন দর্শকের সঙ্গে আমার কথাও হয়েছে। তাদের প্রত্যুত্তর জিতের পক্ষে ছিল না।
শুভশ্রী বরাবরের মতোই আবেদনহীন, পর্দায় কোন ধরনের উত্তাপ তৈরি করতে পারেননি। বাংলাদেশের যেকোনও প্রথমসারির নায়িকা শুভশ্রীর চেয়ে অধিকতর গ্ল্যামারাস ও সুঅভিনেত্রী বলে আমি মনে করি। এ ছবিতে অমিত হাসানও আছেন, তবে পুতুল হয়ে। ভারতের চিরঞ্জিত, ইন্দ্রনীল সেনগুপ্তও যতটা সুযোগ পেয়েছেন, অমিত হাসান তার সিকি ভাগও পাননি। এ ছবির ‘উড়েছে মন’ ও ‘ইয়ারা মেহেরবান’ গান দুটি শুনতে ভালো লেগেছে। তবে সব কটি গানের গীতিকার, সুরকার, কণ্ঠশিল্পী, নৃত্য পরিচালক ভারতীয়! তাহলে এ ছবিটি কীভাবে যৌথ প্রযোজনার নীতিমালা মেনে নির্মিত হলো? তবে কি ফারিয়াকে সান্ত্বনা পুরস্কার ধরিয়ে দিয়ে বাংলাদেশকে একপ্রকার জোর করেই সবকিছু মেনে নেওয়ার চেষ্টা করেছে ‘বস-টু’? বলতেই হবে, সেই চেষ্টা পুরোপুরি ব্যর্থ।
সমালোচনা করতে হলে ভালো-মন্দ দুটো দিকই তুলে ধরা উচিত। অনেক চেষ্টা করে ‘বস-টু’-এর ভালো দিক খুঁজতে গিয়ে মনে হলো, কয়েক সেকেন্ডের জন্য বাংলাদেশের একটি ড্রোন শট দেখানো হয়েছিল। মুগ্ধ হয়েছি। যদিও এই দৃশ্যেও বাংলাদেশকে দেখাতে গিয়ে আরবি সুর ব্যবহার করা হয়েছে। কেন? বাংলাদেশকে উপস্থাপন করতে গিয়ে দেশীয় লোক গানের সুর কি ব্যবহার করা যেত না? যৌথ প্রযোজনার বাংলাদেশের পক্ষের নির্মাতাও কী করে ব্যপারটি এড়িয়ে গেছেন?
বলা হয়েছিল, এ ছবির অ্যাকশন দৃশ্যে অভিনবত্ব থাকবে। দর্শক নতুনত্বের স্বাদ পাবেন। অথচ হলে গিয়ে দেখি এ ছবির অ্যাকশন ও ভিএফএক্স-এর ব্যবহার নিতান্তই সাদামাটা। ‘বাদশা’র মতো রোমান্টিক-কমেডি ছবিতে বরং অ্যাকশন তুলনামূলক দৃষ্টিনন্দন ছিল। পরিচালক হিসেবে ভারতের বাবা যাদব ও বাংলাদেশের প্রযোজক আবদুল আজিজের নাম ব্যবহৃত হয়েছে। ব্যর্থতার দায়ভার তাই দুজনের ওপরই বর্তায়। এতদিন পর্যন্ত আমার জীবনে দেখা সবচেয়ে বিরক্তিকর ছবি ছিল ‘কিস্তিমাত’ ও ‘রানা পাগলা’। রীতিমতো চুল ছিঁড়েছিলাম ছবি দুটি দেখে। ‘বস-টু’ এবার সে তালিকাতে যুক্ত হলো। যৌথ প্রযোজনার নামে সম্পূর্ণ ভারতীয় মানহীন এমন চলচ্চিত্র আমরা আর দেখতে চাই না।