একেই বলে ফিরে আসা! লর্ডসের প্রথম টেস্টে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে তাদের হারটা ছিল ২১১ রানের। অসহায় আত্মসমর্পণের পর ভেঙে পড়েনি দক্ষিণ আফ্রিকা, বরং ঘুরে দাঁড়ানোর শপথ জপে নেমেছিল ট্রেন্ট ব্রিজ টেস্টে। প্রথম টেস্টে দলের বাইরে থাকা অধিনায়ক ফাফ দু প্লেসিস ফিরতেই কেমন বদলে গেল সব। আগের ম্যাচে হার মানা সেই দক্ষিণ আফ্রিকার তোপে এবার উড়ে গেল ইংলিশরা। দ্বিতীয় টেস্টের দ্বিতীয় ইনিংসে স্রেফ গুড়িয়ে দিয়েছে প্রোটিয়ারা জো রুটের দলকে। ইংল্যান্ডকে মাত্র ১৩৩ রানে অলআউট করে ৩৪০ রানের বিশাল জয়ে চার ম্যাচের টেস্ট সিরিজে সফরকারীরা ফিরিয়েছে ১-১ সমতা।
দক্ষিণ আফ্রিকা ৯ উইকেটে ৩৪৩ রানে তাদের দ্বিতীয় ইনিংস ঘোষণা করলে রান পাহাড়ে চাপা পড়ে ইংল্যান্ড। জয়ের জন্য তাদের সামনে দাঁড়ায় ‘অসম্ভব’ ৪৭৪ রানের লক্ষ্য। চাপটা নিতে পারেনি স্বাগতিকরা। ব্যাটিং ব্যর্থতায় চার দিনেই শেষ হয়ে গেছে ট্রেন্ট ব্রিজ টেস্ট। চতুর্থ দিন আর শেষ হলো কই, দ্বিতীয় সেশনেই তো জয় নিশ্চিত করে ফেলে দক্ষিণ আফ্রিকা!
অথচ কোনও উইকেট না হারিয়ে চতুর্থ দিনের খেলা শুরু করেছিল ইংল্যান্ড। শুরুটা যদিও একেবারেই ভালো হয়নি স্বাগতিকদের। সকালের সেশনেই একরকম জয়ের পথটা তৈরি করে নেয় দক্ষিণ আফ্রিকা ভারনন ফিল্যান্ডার ও ক্রিস মরিসের বোলিং তোপে। শুরুটা করেছিলেন ফিল্যান্ডার। এই পেসারের বলে মাত্র ৩ রান করে বোল্ড হয়ে ফিরে যান কিটন জেনিংস। ইংল্যান্ডের উইকেট হারানোর মিছিলের শুরুটাও হয়ে যায় তাতে। এরপর গ্যারি বালেন্সকে (৪) এলবিডাব্লিউয়ের ফাঁদে ফেলে ফিল্যান্ডার পান দ্বিতীয় উইকেটের দেখা। তার সঙ্গে উইকেট উৎসবে মরিস যোগ দিলে ৭২ রানে ইংলিশরা হারায় ৪ উইকেট। অধিনায়ক জো রুটকে (৪) বোল্ড করার পর মরিস তুলে নেন ওপেনার অ্যালিস্টার কুকের (৪২) উইকেটটি।
উইকেট উৎসব কিন্তু থামেনি দক্ষিণ আফ্রিকার, একটু পর সেখানে নাম তোলেন কেশব মহারাজ। এই স্পিনার জনি বেয়ারস্টোকে মাত্র ১৬ রানে মরিসের হাতে ক্যাচ বানালে ৮৪ রানে নেই ইংল্যান্ডের ৫ উইকেট! হার চোখ রাঙানো ইংলিশদের হয়ে খানিকটা প্রতিরোধ গড়ে তুলেছিলেন মঈন আলী ও বেন স্টোকস। কিন্তু দিনটা একেবারেই ছিল না স্বাগতিকদের, তাই রিভিউ নিয়ে একবার বেঁচে গেলেও মঈনকে ফিরতে হয় খানিক পরই। ২৭ রান করে মহারাজের শিকার হয়ে তিনি প্যাভিলিয়নে ফেরার পর তাসের ঘরের মতো ভেঙে পড়ে ইংলিশদের লোয়ার অর্ডার। ফিল্যান্ডারের তৃতীয় শিকার হয়ে স্টোকস (১৮) আউট হওয়ার পর দক্ষিণ আফ্রিকার জয়টা ছিল কেবল সময়ের অপেক্ষায়। ডুয়েনি অলিভিয়ের শেষ ব্যাটসম্যান হিসেবে জেমস অ্যান্ডারসনের উইকেটটি তুলে নিলে জয়ের আনন্দে মাতে দক্ষিণ আফ্রিকা।
ব্যাট-বলে সমানতালে পারফরম করা ভারনন ফিল্যান্ডার হয়েছেন ম্যাচসেরা। প্রথম ইনিংসে ২ উইকেটের পর দ্বিতীয় ইনিংসে তার শিকার ৩ উইকেট। আর ব্যাট হাতে প্রথম ইনিংসে হাফসেঞ্চুরির পর (৫৪) দ্বিতীয় ইনিংসে খেলেছেন কার্যকরী ৪২ রানের ইনিংস। ক্রিকইনফো
সংক্ষিপ্ত স্কোর :
দক্ষিণ আফ্রিকা : ৩৩৫ ও ৩৪৩/৯ (ডিক্লে.)।
ইংল্যান্ড : ২০৫ ও ৪৪.২ ওভারে ১৩৩ (কুক ৪২, মঈন ২৭, স্টোকস ১৮, বেয়ারস্টো ১৬; ফিল্যান্ডার ৩/২৪, মহারাজ ৩/৪২)।
ফল : দক্ষিণ আফ্রিকা ৩৪০ রানে জয়ী।
ম্যাচসেরা : ভারনন ফিল্যান্ডার।
সিরিজ : ৪ ম্যাচের টেস্ট সিরিজ ১-১ সমতায়।