অস্ট্রেলিয়ার বাংলাদেশ সফর নিয়ে আর কোনো শঙ্কা নেই। পারিশ্রমিক সংক্রান্ত ঝামেলা শেষে আবার মাঠে ফিরেছেন স্টিভ স্মিথ-ডেভিড ওয়ার্নাররা। ২০০৬ সালের পর এই প্রথম বাংলাদেশ সফরে আসছে অস্ট্রেলিয়া দল। স্বভাবতই দারুণ উচ্ছ্বসিত বাংলাদেশের ক্রিকেটভক্তরা। দুই ম্যাচের টেস্ট সিরিজটা নিয়ে উত্তেজনা এখন তুঙ্গে। ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়ার ওয়েবসাইট জানিয়েছে ছয়টি কারণে উত্তেজনা ছড়াবে এবারের অস্ট্রেলিয়া সফর। আসুন জেনে নিই কোন সেই ছয়টি কারণে বাংলাদেশ-অস্ট্রেলিয়ার সিরিজ নিয়ে আশাবাদী ক্রিকেটপ্রেমীরা।
আগেই বলা হয়েছে, ২০০৬ সালের পর এই প্রথম বাংলাদেশের মাটিতে টেস্ট সিরিজ খেলেবে অস্ট্রেলিয়া। সর্বশেষ রিকি পন্টিংয়ের অভিনায়কত্বে বাংলাদেশে সিরিজ জয় করেছিল অসিরা। এরপর মাইকেল ক্লার্কের দীর্ঘ অধিনায়কত্বের সময়ে বাংলাদেশে আসতে পারেনি দলটি। ২০০৬ সালে টেস্টে বাংলাদেশ ছিল আনাড়ি প্রতিপক্ষ। তারপরও সিরিজটা জমিয়ে দিয়েছিল টাইগাররা। গত এক যুগে অনেক বদলে গেছে বাংলাদেশের ক্রিকেট। বিশেষ করে ২০১৫ সালের ওয়ানডে বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনালে খেলা, পরের বছর এশিয়া কাপের ফাইনাল এ ছাড়া এ বছর চ্যাম্পিয়নস ট্রফির সেমিফাইনালে খেলেছে তামিম-সাকিবরা। ঘরের মাটিতে ভারত-পাকিস্তান-দক্ষিণ আফ্রিকা-ইংল্যান্ডের মতো প্রতিপক্ষকে হারিয়েছে বাংলাদেশ। সেই কারণেই এবারের অস্ট্রেলিয়া সফরটা বেশ গুরুত্বপূর্ণ। ঘরের মাটিতে এবার অসি-বধ কাব্য রচনা করতে চায় বাংলাদেশ।
সিরিজটা গুরুত্বপূর্ণ হওয়ার দ্বিতীয় কারণ হলো, অস্ট্রেলিয়ার অ্যাশেজ ভাবনা। বাংলাদেশ ও ভারতের বিপক্ষে সিরিজ খেলে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে অ্যাশেজ সিরিজে মাঠে নামবে অস্ট্রেলিয়া। বাংলাদেশের বিপক্ষে সিরিজটা তাই অ্যাশেজের প্রস্তুতি মঞ্চ হিসেবে দেখছে সফরকারী দলটি। এই সিরিজ দেখেই অ্যাশেজের জন্য দল নির্বাচন করবেন নির্বাচকরা। চোটের কারণে মিচেল স্টার্ক ও জেমস প্যাটিনসন না থাকায় প্যাট কামিন্স ও জ্যাকসন বার্ডের জন্য এই সিরিজটাকে গুরুত্বপূর্ণ মনে করা হচ্ছে। এ ছাড়া ভারত সফরের জন্যও অস্ট্রেলিয়ার বাংলাদেশ সিরিজটা অনেক গুরুত্বপূর্ণ।
সিরিজটা জমার তৃতীয় কারণ হচ্ছে, এই কয়েক বছরে দারুণ ক্রিকেট খেলছে বাংলাদেশ। গত বছর ঘরের মাঠে টেস্টে ইংল্যান্ডকে দারুণভাবে পরাস্ত করে টাইগাররা। এরপর এই বছর শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে টেস্টে অসাধারণ নৈপুণ্য দেখিয়েছে মুশফিকের দল। তামিম ইকবাল, সাকিব আল হাসানরা ফর্মের তুঙ্গে রয়েছেন। এ ছাড়া ঘরের মাঠে বাংলাদেশ অন্য যে কোনো দেশের জন্যই হুমকির নাম। বাংলাদেশের অচেনা কন্ডিশনে দারুণ সমস্যায় পড়বে অস্ট্রেলিয়া।
র্যাংকিং নিয়েও বেশ ভীতি রয়েছে অস্ট্রেলিয়ার। বাংলাদেশে বিপক্ষে সিরিজ হারলে র্যাংকিংয়ের তলানিতে নেমে যাবে অস্ট্রেলিয়া। হোয়াইটওয়াশ হলে ইতিহাসে প্রথমবারের মতো সাত নম্বরে অবস্থান করবে স্মিথের দল। তেমনটা হলে ভারত সফর ও অ্যাশেজের আগে সেটা তাদের জন্য বড় একটা ধাক্কা হবে।
এ ছাড়া ভারত উপমহাদেশে অস্ট্রেলিয়ার বাজে পারফরম্যান্সও সিরিজটাকে প্রভাবিত করছে। উপমহাদেশীয় আবহাওয়ায় অসিদের রেকর্ডটা একেবারে বাজে। এখানে সর্বশেষ চার সিরিজেই হেরেছে দলটি। ১৩ টেস্ট খেলে জিতেছে মাত্র একটিতে। ‘পুঁচকে’ শ্রীলঙ্কার বিপক্ষেও হোয়াইটওয়াশ হতে হয়েছে দলটিকে। ২০১১ সালে সিরিজজয়ের পর এই উপমহাদেশে আর সিরিজ জিততে পারেনি দলটি। এবার বাংলাদেশ সিরিজ দিয়ে দীর্ঘ অর্ধযুগের খরা মেটাতে চায় অস্ট্রেলিয়া।
মোস্তাফিজ বনাম ওয়ার্নারের লড়াইটা আলাদাভাবে সিরিজটাকে প্রভাবিত করছে। আইপিএলে একই দলে খেলেন এই দুজন। এবার এই দুই ক্রিকেটার হয়ে যাবেন প্রতিপক্ষ। ইনিংসের শুরুতেই ওয়ার্নারকে ফেরাতে চাইবেন মুস্তাফিজ। সেটা হলে শুরুতেই চাপে পড়ে যাবে অস্ট্রেলিয়া। আর অসিরাও চাইবে মুস্তাফিজকে ভড়কে দিতে। বোলিংয়ে বাংলাদেশ দলের প্রধান সেনানীকে নিরস্ত্র করা গেলে সিরিজ জেতাটা কঠিন হবে না অসিদের জন্য।