ডেস্ক রিপোর্ট : রাজধানীর পান্থপথে হোটেল ওলিও ইন্টারন্যাশনালের চতুর্থ তলায় পুলিশের ‘অপারেশন আগস্ট বাইট’ নামের জঙ্গি অভিযানে নিহত সাইফুল ইসলাম চাকরি খুঁজতে ঢাকায় এসেছিল বলে জানা গেছে। সাইফুলের বাড়ি খুলনার ডুমুরিয়ায় সাহস ইউনিয়নের নোয়াকাটি গ্রামে।
গত শুক্রবার (১১ আগস্ট) বিকেলে নিজ বাড়ি থেকে ঢাকায় রওনা হন সাইফুল ইসলাম। গত রোববার (১৩ আগস্ট) বিকেলে পরিবারের লোকজনের সঙ্গে সর্বশেষ কথা বলেন তিনি। এরপর আর কোনো যোগাযোগ করেননি বলে জনিয়েছেন সাইফুলের ছোট বোন ইরানি খাতুন।
সাইফুলের গ্রামের বাড়িতে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, তাঁর বাবার নাম আবুল খায়ের মোল্লা। তিনি নোয়াকাটি গ্রামে মাঠের হাট মসজিদের ইমাম। সাইফুলের মা বাক্প্রতিবন্ধী। আবুল খায়েরের এক ছেলে ও দুই মেয়ের মধ্যে সাইফুল সবার বড়।
পাইকগাছার একটি মাদ্রাসা থেকে হাফিজি পাস করেন। খুলনার বিএল কলেজে রাষ্ট্রবিজ্ঞান চতুর্থ বর্ষের ছাত্র তিনি। পড়াশোনার জন্য খুলনার একটি মেসে থাকতেন। বাংলাদেশ মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডের দাখিল পরীক্ষার সাইফুলের রেজিস্ট্রেশন কার্ডে তাঁর জন্মতারিখ উল্লেখ করা হয়েছে ১৯৯৬ সালের ১৩ অক্টোবর। সে হিসাবে তাঁর বয়স প্রায় ২১ বছর।
নোয়াকাটি গ্রামের লোকজন জানান, বাড়ি এলে মানুষের সঙ্গে খুব কম মিশতেন সাইফুল। কারও সঙ্গে তেমন কথা বলতেন না। ঘরে একাই থাকতেন তিনি। আচরণে বেশ ভদ্র ও নম্র ছিলেন। কিন্তু তিনি ছাত্রশিবির করতেন কি না—এ ব্যাপারে কোনো তথ্য এলাকাবাসীর কাছে নেই।
সাইফুলের বোন ইরানি খাতুন বলেন, চাকরি না করার কারণে শুক্রবার তাঁর বাবা আবুল খায়ের সাইফুলকে বকা দেন। এরপর জুমার নামাজ পড়ে ঢাকায় যাওয়ার কথা বলেন তিনি। বিকেলে বাড়ি ছাড়েন। রোববার (১৩ আগস্ট) ফোন করে সাইফুল জানান যে সোমবার বিকেলে গ্রামের ফিরে আসবেন। কিন্তু তিনি ফিরে আসেননি। আজ সকালে গ্রামে আত্মীয়স্বজনদের মাধ্যমে সাইফুলের নিহত হওয়ার খবর তাঁরা জানতে পারেন।
এ ঘটনার পর মঙ্গলবার (১৫ আগস্ট) সকালে সাইফুলের বাবা আবুল খায়েরকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ডুমুরিয়া থানায় নিয়ে যায় পুলিশ।
ডুমুরিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হাবিল হোসেন বলেন, সাইফুলের বাবা ইউনিয়ন পর্যায়ে জামায়াতের রুকন এবং ইউনিয়ন জামায়াতের কোষাধ্যক্ষও তিনি।
উল্লেখ্য, মঙ্গলবার (১৫ আগস্ট) সকালে রাজধানীর পান্থপথে হোটেল ওলিও ইন্টারন্যাশনালের চতুর্থ তলায় পুলিশের ‘অপারেশন আগস্ট বাইট’ নামের জঙ্গি অভিযানের সময় মারা যান সাইফুল ইসলাম।
অভিযান শেষে সাংবাদিকদের এক ব্রিফিংয়ে পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) এ কে এম শহীদুল হক বলেন, ‘যখন পুলিশ অপারেশন শুরু করবে, তখন সে একটি এক্সপ্লোসিভ ব্লাস্ট করে পুরো দরজা ভেঙে ফেলে। আরেকটি বোমা ব্লাস্ট করতে যাবে, তখন পুলিশ গুলি করে। তার সঙ্গে সঙ্গে সুইসাইডাল ভেস্টের বিস্ফোরণ ঘটিয়ে সে আত্মঘাতী হয়।’
ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে মিছিলে সাইফুল ইসলামের হামলার পরিকল্পনা ছিল জানিয়ে আইজিপি বলেন, ‘এই ৩২ নম্বরকে কেন্দ্র করে যে মিছিলগুলো আসবে, সেই মিছিলে আত্মঘাতী বোমা হামলা করবে এবং শত শত লোককে মেরে ফেলবে- এ ধরনের প্রস্তুতি ছিল তার। আমরা গোয়েন্দারা গতকাল থেকে ফলো করে জঙ্গি আস্তানা পেয়েছি। ওলিও হোটেলে তল্লাশি করে একটি রুমে রেসপন্স পেলাম, তাতে বুঝলাম সে জঙ্গি। আমরা তাকে আটকে রাখলাম এবং তাকে সারেন্ডার করতে বললাম। কিন্তু সে সারেন্ডার করেনি।’
সাইফুল ছাত্রশিবিরের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত উল্লেখ করে আইজিপি শহীদুল হক বলেন, ‘এই জঙ্গির তথ্য প্রাথমিকভাবে আমরা পেয়েছি। তার নাম সাইফুল ইসলাম। তার বাড়ি খুলনার ডুমুরিয়ায়। তার বাবা একটি মসজিদের ইমাম। সে মাদ্রাসার ছাত্র ছিল, খুলনার বিএল কলেজেরও ছাত্র ছিল এবং ছাত্রশিবির করত। জামায়াত-শিবির না হলে জাতির পিতার মৃত্যুদিবস জাতীয় শোক দিবসে আরেকটি ঘটনা ঘটাতে পারত না।’