মিয়ানমারে রোহিঙ্গা ও অন্য সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওপর নির্যাতন ও গণহত্যার দায়ে মিয়ানমার সরকারকে দোষী সাব্যস্ত করেছেন আন্তর্জাতিক গণআদালত।
স্থানীয় সময় শুক্রবার মালয়েশিয়ার রাজধানী কুয়ালালামপুরের মালায়া বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রধান বিচারক ড্যানিয়েল ফেইয়ারস্টেইনের নেতৃত্বে সাত সদস্যের একটি বেঞ্চ এ রায় দেন। রোমভিত্তিক এই আদালতের নাম পার্মানেন্ট পিপলস ট্রাইব্যুনাল (পিপিটি)। বিগত শতাব্দীর ষাটের দশকে ভিয়েতনাম যুদ্ধের সময় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সেখানে ব্যাপক হারে যুদ্ধাপরাধ করে। তখন ব্রিটিশ দার্শনিক বার্ট্রান্ড রাসেল যুদ্ধাপরাধের বিচারের জন্য যে ধারণা দিয়েছিলেন, তার প্রেক্ষাপটেই পিপিটি প্রতিষ্ঠিত। এ আদালত মূলত যুদ্ধাপরাধের শিকার মানুষের ভাষ্য তুলে ধরে বিশ্ব পরিমণ্ডলে।
রায়ে রোহিঙ্গা, কাচিন ও অন্য সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের সদস্যকে হত্যার জন্য মিয়ানমার সরকারকে দায়ী করা হয়। এর আগে পাঁচ দিনব্যাপী শুনানিতে দেশটির সরকারের বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধ, মানবতাবিরোধী অপরাধ ও গণহত্যার বিষয়টি প্রমাণিত হয়।
রায়ের ওপর ভিত্তি করে ১৭টি প্রস্তাবনাও দিয়েছেন আন্তর্জাতিক গণআদালত। রায়ের পর প্রস্তাবনাগুলো পড়ে শোনান বিচারক গ্রিল এইচ বোয়েরিংগার। তিনি বলেন, মিয়ানমারে রোহিঙ্গাসহ সংখ্যালঘুদের ওপর নিপীড়নের বিষয়টি তদন্ত করে দেখার জন্য জাতিসংঘের প্রতিনিধিদলকে ভিসা ও অবাধে প্রবেশের সুযোগ দিতে হবে।
প্রস্তাবনায় আরো বলা হয়, মিয়ানমার সরকারকে অবশ্যই দেশটির সংবিধান সংশোধন করতে হবে এবং সংখ্যালঘুদের অধিকার ও নাগরিকত্ব দিতে সব পক্ষপাতমূলক আইন প্রত্যাহার করতে হবে। এ ছাড়া বাংলাদেশ ও মালয়েশিয়ার মতো যেসব দেশ পালিয়ে যাওয়া রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিয়েছে, তাদের আর্থিক সাহায্য দিতে আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সম্প্রদায়কে এগিয়ে আসার আহ্বান জানানো হয়।
বিচারক গ্রিল এইচ বোয়েরিংগার আরো জানান, শুধু রায় দিয়েই বসে থাকবেন না আদালত। গণহত্যার বিষয়ে তদন্ত প্রতিবেদন, রায়ের কপি ও প্রস্তাবনাগুলো বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থার কাছে পাঠিয়ে মিয়ানমার সরকারের ওপর চাপ প্রয়োগের জন্য আহ্বান জানানো হবে।
গত ২৫ আগস্ট মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গাদের ওপর নির্যাতন ও গণহত্যা শুরু করে দেশটির সেনাবাহিনী। এর পর থেকে প্রাণ বাঁচাতে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে কমপক্ষে চার লাখ ২০ হাজার রোহিঙ্গা।
এদিকে মিয়ানমারের এ ধরনের আচরণে নড়েচড়ে বসে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ ও সংস্থা। তাদের পক্ষ থেকে এর নিন্দা জানানোসহ রোহিঙ্গা হত্যাকাণ্ড বন্ধের আহ্বান জানানো হয়। কিন্তু এ সেনা অভিযান বন্ধে এখন পর্যন্ত কোনো পদক্ষেপ নেয়নি মিয়ানমার সরকার।