সাত মাস ধরে নিখোঁজ কিশোর সাঈদ (১৭) ও তার বন্ধু শাওন। যশোরের বাসিন্দা ওই দুই কিশোর গত ৫ এপ্রিল পৌর পার্কে ঘুরতে যায়। সাঈদের মা হিরা খাতুনের দাবি, পুলিশের গাড়িতে করে ওই দুজনকে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়। এর পর থেকে তাদের আর কোনো খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না।
মঙ্গলবার যশোর কোতোয়ালি থানার ১৬ পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে যশোরের জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিমের আমলি আদালতে মামলা করেছেন হিরা খাতুন। তিনি অভিযোগ করেন, অপহরণের পর টাকা দাবি এবং টাকা না পেয়ে বিবাদীরা তাঁর ছেলেকে গুম করেছেন। বিচারক শাহীনুর রহমান এ ব্যাপারে তদন্ত করে প্রতিবেদন দাখিলের জন্য পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনকে (পিবিআই) নির্দেশ দিয়েছেন।
হিরা খাতুন যশোর শহরের শংকরপুর এলাকার বাসিন্দা। মামলার আরজিতে তিনি উল্লেখ করেন, ‘গত ৫ এপ্রিল সকাল ১০টার দিকে তার একমাত্র ছেলে সাইদ ও তার বন্ধু শাওন শহরের পৌর পার্কে বেড়াতে যায়। ওই দিন বেলা ১২টার দিকে সাব্বির হোসেন নামে এক যুবক তাঁকে মোবাইল ফোনে জানায় যে পুলিশ সাইদ ও শাওনকে আটক করেছে। ওই সময়ই তিনি পৌর পার্কে যান এবং দেখতে পান যে সাইদ ও শাওনকে পুলিশ গাড়িতে করে নিয়ে যাচ্ছে। এ সময় তিনি দৌড়ে গাড়ির কাছে গিয়ে পুলিশের কাছে আটকের কারণ জানতে চাইলে তারা তাঁকে থানায় গিয়ে কথা বলতে বলেন। পরে থানার সামনে গিয়ে সন্ধ্যা পর্যন্ত বসে থাকলেও তাঁকে থানায় ঢুকতে দেওয়া হয়নি। সন্ধ্যা ৭টার দিকে দুই পুলিশ সদস্য তাঁকে ডেকে ছেলেকে ছাড়ানোর জন্য দুই লাখ টাকা দাবি করেন। এরপর ৭ এপ্রিল তিনি পত্রিকা মারফত জানতে পারেন যে, তাঁর ছেলে সাইদ ও শাওন পুলিশের কাছ থেকে পালিয়ে গেছে। তিনি থানায় গিয়ে এ বিষয়ে কিছু জানতে পারেননি। পরে আদালতে গিয়ে জানতে পারেন যে পুলিশ আদালতে একটা মামলা করেছে। ওই মামলায় তাঁর ছেলে ও শাওন পালিয়ে গেছে বলে উল্লেখ করা হয়েছে। এরপর তাঁর ছেলের সন্ধানে তিনি বারবার পুলিশের কাছে গেলেও তাঁর সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করা হয়।’
একপর্যায়ে ছেলের সন্ধান চেয়ে হিরা খাতুন গত ৩০ মে যশোর প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করেন। কিন্তু আজ পর্যন্ত তাঁর ছেলে ও ছেলের বন্ধুর কোনো খোঁজ মেলেনি। দুই লাখ টাকা ঘুষ না পেয়ে আসামিরা ক্ষিপ্ত হয়ে তাঁর ছেলে ও ছেলের বন্ধুকে পরিকল্পিতভাবে অপহরণ ও তাদের লাশ গুম করে ফেলা হয়েছে বলে সন্দেহ করছেন তিনি। হিরা খাতুন জানান, ওই কারণেই আদালতে মামলা করছেন তিনি।
মামলার আসামিরা হচ্ছেন যশোর কোতোয়ালি থানার উপপরিদর্শক (এসআই) এইচ এম শহিদুল ইসলাম, আমির হোসেন ও হাসানুর রহমান, সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) রাজন গাজী, সেলিম মুন্সি, বিপ্লব হোসেন ও সেলিম আহম্মেদ, কনস্টেবল আরিফুজ্জামান, রফিকুল ইসলাম, মো. রমজান, হাবিবুর রহমান, আবু বক্কার, মিজান শেখ, মাহমুদুর রহমান, রাজিবুল ইসলাম ও টোকন হোসেন।
বাদীর আইনজীবী অজিত কুমার দাস বলেন, ‘বাদীর অভিযোগ আদালত গ্রহণ করে তা তদন্ত করে প্রতিবেদন দাখিলের জন্য পিবিআইকে নির্দেশ দিয়েছেন।’
পুলিশের বিরুদ্ধে মামলার ব্যাপারে যশোরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘বাদীর অভিযোগ সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন ও কাল্পনিক। একটি কুচক্রী মহল পুলিশের ভাবমূর্তি নষ্ট করার জন্যই এ মামলা করেছে।’