ভারত ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আপত্তি সত্ত্বেও পাকিস্তানের ধর্মীয় নেতা হাফিজ সাঈদকে মুক্তির নির্দেশ দিয়েছেন দেশটির আদালত। ২০০৮ সালে মুম্বাই বোমা হামলার সঙ্গে সাঈদ জড়িত—এমন অভিযোগ রয়েছে ভারতের।
অন্যদিকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র একসময় জঙ্গি সংগঠন লস্কর-ই-তৈয়বার প্রধান হাফিজ সাঈদের মাথার দাম ১০ মিলিয়ন ডলার ঘোষণা করেছিল। এর মধ্যেই লাহোরে গত জানুয়ারি থেকে গৃহবন্দি থাকা হাফিজ সাঈদের মুক্তির নির্দেশ আসে।
‘বিতর্কিত’ এই ধর্মীয় নেতা জনগণের নিরাপত্তার জন্য হুমকিস্বরূপ; পাকিস্তান সরকারের এমন আপত্তির পর এই সপ্তাহে আদালত তাঁকে মুক্তির নির্দেশ দেন। এরপর গতকাল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় তিনি মুক্তি পান বলে জানিয়েছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি।
ভারত সাঈদকে মুম্বাইয়ের যে হামলার জন্য দায়ী করে, সেখানে ১৬০ জন নিহত হন। যদিও সাঈদ সব সময়ই এ হামলায় জড়িত থাকার কথা অস্বীকার করে আসছিলেন।
মুক্তির নির্দেশ আসার পর এক ভিডিওবার্তায় সাঈদ বলেন, ‘ভারত সব সময়ই সন্ত্রাসের ব্যাপারে দোষারোপ করেছে… কিন্তু (লাহোর) হাইকোর্টের নির্দেশ প্রমাণ করেছে যে, ভারতের প্রপাগান্ডা মিথ্যায় পর্যবসিত হয়েছে।’
হাফিজ সাঈদ বিগত শতাব্দীর নব্বইয়ের দশকে জঙ্গি সংগঠন লস্কর-ই-তৈয়বা প্রতিষ্ঠা করেন। পরে সন্ত্রাসে জড়িত অভিযোগে আন্তর্জাতিক চাপের মুখে পাকিস্তান সরকার এই সংগঠনটিকে নিষিদ্ধ করে দেয়।
এরপর ২০০২ সালে সাঈদ জামাত-উদ-দাওয়া প্রতিষ্ঠা করেন। হাফিজ এই সংগঠনটিকে ইসলামের কল্যাণমূলক কাজের সংগঠন বলে দাবি করলেও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অভিযোগ, জামাত-উদ-দাওয়া আসলে লস্কর-ই-তৈয়বারই একটি ফ্রন্ট। ২০১২ সালের মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র তাঁর মাথার দাম ১০ মিলিয়ন ডলার নির্ধারণ করে।
লস্কর-ই-তৈয়বা ভারতের সংসদ ভবনে হামলা করেছে—এ অভিযোগে পাকিস্তান সরকার সে সময় হাফিজ সাঈদকে তিন মাস আটকে রেখেছিল। এরপর ২০০৬ সালেও তিনি দীর্ঘ সময় ধরে আটক ছিলেন। মুম্বাই হামলার জন্য ২০০৮ সালে পাকিস্তান সরকার তাঁকে পুনরায় গৃহবন্দি করে। ছয় মাস পর তিনি মুক্তি পান। বিভিন্ন সময় সন্ত্রাসের অভিযোগে তাঁকে আটক করলেও পাকিস্তান সরকার কখনই তাঁর বিরুদ্ধে কোনো ধরনের অভিযোগ গঠন করতে পারেনি।
এবার গৃহবন্দি থেকে মুক্তির পর এক প্রতিক্রিয়ায় ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রভিশ কুমার বলেন, ‘বোঝাই যাচ্ছে রাষ্ট্রপুঞ্জের নিষিদ্ধ তালিকায় থাকা জঙ্গিদের দেশের মূলস্রোতে শামিল করার চেষ্টা করছে পাকিস্তান।’
এ ঘটনায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছে মার্কিন প্রশাসনও। দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, তারা জামাত-উদ-দাওয়ার প্রধানের মুক্তির দিকে নজর রাখছে।