রাজধানীর মহাখালী এলাকা থেকে গ্রেপ্তার সন্দেহভাজন তিন জঙ্গির একজন আবদুস সামাদ নব্য জেএমবির অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা তামিম চৌধুরীর ‘সেকেন্ড ইন কমান্ড’ ছিল বলে জানিয়েছে পুলিশ।
পুলিশের কাউন্টার টেররিজম ইউনিট বলছে, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযানে বিভিন্ন সময় নব্য জেএমবির উচ্চ পর্যায়ের নেতারা গ্রেপ্তার ও নিহত হলে এই সামাদের নেতৃত্বেই জঙ্গি সংগঠনটি সংগঠিত হয়।
বুধবার সন্ধ্যায় মহাখালী এলাকায় অভিযান চালিয়ে আব্দুস সামাদ ওরফে আরিফ মামু ওরফে আশিক, তার শ্বশুর জিয়াদুল ইসলাম এবং মো. আজিজুল ইসলাম ওরফে মেহেদী হাসান ওরফে শিশিরকে পুলিশ গ্রেপ্তার করে।
বৃহস্পতিবার পুলিশের গণমাধ্যম কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করে তাদের বিষয়ে বিভিন্ন তথ্য তুলে ধরেন কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিটের প্রধান মনিরুল ইসলাম।
তিনি বলেন, দিনাজপুরের সামাদ ২০০২ সালে দাওয়া হাদিস এবং ২০১১ সালে ফাজিল পর্যন্ত পড়াশুনা করেন। তার মধ্যেই ২০১০ সালে তিনি জেএমবিতে যোগ দেন।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তার দেওয়া তথ্যের বরাতে মুনিরুল বলেন, ২০১৪ সালে তামিম চৌধুরীর সঙ্গে মিলে ‘জুনদ আল তাওহীদ আল খিলাফাই’ নামে একটি সংগঠন গড়েন সামাদ। তামিম ছিলেন সংগঠনটির প্রধান, আর সামাদ ‘সেকেন্ড ইন কমান্ড’।
বোমা তৈরিসহ বিভিন্ন কাজে ‘পারদর্শী’ সামাদ সংগঠনের জন্য সদস্য ও অর্থ সংগ্রহের পাশাপাশি নীতিগত সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রেও ভূমিকা রাখতেন বলে মনিরুলের দাবি।
তিনি বলেন, “অস্ত্র চালনা ও গ্রেনেড ব্যবহারের বিষয়ে সংগঠনের নবীন সদস্যদের প্রশিক্ষণ দিতেন আব্দুস সামাদ। নব্য জেএমবির উচ্চ পর্যায়ের নেতারা বিভিন্ন সময় গ্রেপ্তার ও নিহত হওয়ার পর তার নেতৃত্বে সংগঠনটির কার্যক্রমে নতুন মাত্রা যোগ হয়।”
এর আগে গত জুনে তাদের জিজ্ঞাসাবাদের বরাতে মনিরুল বলেছিলেন, ‘আইয়ুব বাচ্চু’ ছদ্মনাম নিয়ে এক ব্যক্তি জঙ্গি দল নব্য জেএমবিকে সংগঠিত করার চেষ্টায় আছে বলে পুলিশ তথ্য পেয়েছে।
সাভার ও লক্ষ্মীপুর থেকে নব্য জেএমবির সন্দেহভাজন তিন সদস্যকে গ্রেপ্তারের পর সে সময় এক ব্রিফিংয়ে তিনি বলেছিলেন, “আইয়ুব বাচ্চু তার সাংগঠনিক নাম। তার একটি ছবি আমরা পেয়েছি। তার প্রকৃত নাম পরিচয় জানার চেষ্টা করা হচ্ছে। তাকে পুলিশ খুঁজছে।”
পরের মাসে কুষ্টিয়ার ভেড়ামারার একটি সন্দেহজনক জঙ্গি আস্তানা থেকে তিন নারীকে গ্রেপ্তারের পর পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হয়, ওই তিন নারীর মধ্যে আরশিদা ওরফে আশরাতি জাহান তিথি নব্য জেএমবির আমির আইয়ুব বাচ্চু ওরফে সাজিদ হাসান সজীবের স্ত্রী।
বৃহস্পতিবারের ব্রিফিংয়ে মনিরুল বলেন, তামিম চৌধুরী ও সামাদ কল্যাণপুর ও মিরপুর এলাকায় প্রায় ডজন খানেক জঙ্গি প্রশিক্ষণ ক্যাম্প খুলতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিলেন। হলি আর্টিজান হামলার ‘অন্যতম পরিকল্পনাকারী’ সোহেল মাহফুজ ওরফে হাতকাটা মাহফুজ গ্রেপ্তার হওয়ার পর সামাদই সংগঠনের যাবতীয় কার্যক্রম চালিয়ে আসছিলেন।
গ্রেপ্তার বাকি দুজনের মধ্যে সামাদের শ্বশুর জিয়াদুল ইসলাম চাঁপাইনবাবগঞ্জ সীমান্ত দিয়ে নব্য জেএমবির জন্য অস্ত্র-বিস্ফোরক ও ডেটোনেটর সংগ্রহের পাশাপাশি সংরক্ষণ ও বিতরণের দায়িত্ব পালন করতেন বলে পুলিশের ভাষ্য।
আর আজিজুল ইসলাম মেহেদী পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে দুই বছর ধরে জঙ্গি কার্যক্রমে যুক্ত জানিয়ে মনিরুল বলেন, “জিহাদি প্রশিক্ষণও সে নিয়েছে।”
এই অভিযানে গ্রেপ্তার তিনজনের কাছ থেকে একটি ৯ এমএম পিস্তল, পাঁচ রাউন্ড গুলি ও ২০০ ডেটোনেটর উদ্ধার করা হয়েছে বলে সংবাদ সম্মেলন থেকে জানানো হয়।