সেলিম হায়দার, ডেইলি সাতক্ষীরা: চারপাশে থই থই পানি। পানিতে ডুবে গেছে স্কুল। তারপরও মাঝা (কোমর) সমান জল ঠেলে (ভেঙ্গে) স্কুলে গেছি। এখন আর যেতে পারিনে। রাস্তার পরে স্কুল করতে হয়। ডেইলি সাতক্ষীরাকে এভাবেই বলছিলো সাতক্ষীরার তালা উপজেলার খরাইল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৪র্থ শ্রেণির ছাত্র সবুজ ম-ল। পানিতে তলিয়ে গেছে সবুজের বাড়িসহ আশপাশের এলাকা।
কয়েক দিনের টানা বৃষ্টি ও উজানের পানির চাপে তালা উপজেলার প্রায় ৬০টি বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। এসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মাঠ ও শ্রেণিকক্ষ পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় পাঠদানের পরিবেশ নেই। পানিবন্দি হওয়ায় কোমলমতি শিক্ষার্থীদের বিদ্যালয়ে পাঠাতেও নিরুৎসাহিত করছেন অভিভাবকরা। ফলে, ব্যাহত হচ্ছে শিক্ষা কার্যক্রম।
২৫ আগস্ট সকালে সরেজমিনে খরাইল-ভবানীপুর এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, সড়কে দুই ধারে পানি ছুঁই ছুঁই অবস্থা। আবার মানুষের বাড়ির ভেতরে পানি। বাড়িতে যাতায়াতের জন্য কেউ বানিয়েছে কলা গাছের ভেলা, কেউ বানিয়েছে ডোঙ্গা। কেউবা বাঁশ দিয়ে রাস্তা থেকে বাড়ির উঠান পর্যন্ত সাঁকো তৈরি করে নিয়েছে। এভাবে চলাচল করতে হচ্ছে প্লাবিত এলাকার মানুষের।
খরাইল দ্বিতীয় শ্রেণির ছাত্রী ভূমিকা ম-ল ডেইলি সাতক্ষীরাকে বলে,‘স্কুলে যাবো কি করে। চারদিকে জল। জলের ভয়ে বাবা-মা স্কুলে যেতে দিতে চায় না। স্যাররা বর্তমানে রাস্তার উপর ক্লাস করাচ্ছে।‘ একই ধরণের বক্তব্য ৪র্থ শ্রেণির ছাত্রী জয়শ্রী ম-লের।
বিদ্যালয়ের অভিভাবক ননী গোপাল ম-ল ডেইলি সাতক্ষীরাকে জানান, এক মাস ধরে এলাকা পানিতে তলিয়ে আছে। মানুষ চলাচল করতে পারছে না, সেখানে বাচ্চার কিভাবে চলবে। কষ্টের মধ্যেও তারা স্কুল করছে।
খরাইল প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শেখ জাকির হোসেন ডেইলি সাতক্ষীরাকে জানান, বিদ্যালয়টিতে বর্তমানে ৮২ জন ছাত্র-ছাত্রী আছে। গত একমাস ধরে বিদ্যালয়টি পানিতে তলিয়ে আছে। পানির মধ্যে ছাত্র-ছাত্রী ক্লাস করলেও গত ১৫ দিন ধরে সড়কের উপর ক্লাস করছে।
তালা উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. অহিদুল ইসলাম ডেইলি সাতক্ষীরাকে জানান, উপজেলার ৩০ টি প্রাথমিক বিদ্যালয় পানিতে তলিয়ে আছে। বিদ্যালয়ে পাঠদান করতে না পারায় পার্শ্ববর্তী উঁচু স্থানে পাঠদান চলছে শিক্ষার্থীদের। তবে, কোনো শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করা হয়নি।
তালা উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. আতিয়ার রহমান ডেইলি সাতক্ষীরাকে জানান, উপজেলার ১৬টি মাদ্রাসা ও মাধ্যমিক বিদ্যালয় ছাড়া চারটি কলেজসহ ২০টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। শ্রেণিকক্ষে এবং মাঠে পানি থাকায় পাঠদানে অনুপযোগী হয়ে পড়েছে অনেক বিদ্যালয়।
তালা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. ফরিদ হোসেন ডেইলি সাতক্ষীরাকে জানান, এলাকায় কমবেশি পানি উঠেছে। তবে বর্তমানে পানি কমতে শুরু করেছে।
তালা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ঘোষ সনৎ কুমার ডেইলি সাতক্ষীরাকে জানান, পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা না থাকায় জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। ৫০টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় শিক্ষা কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে। মানুষ খুব কষ্টের মধ্যে বসবাস করছে।