ময়মনসিংহের হালুয়াঘাট থানায় এক নারীকে উলঙ্গ করে শারীরিক নির্যাতন করার ঘটনায় ১৫ দিনের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন দেয়ার নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।
বুধবার দুপুরে ময়মনসিংহের ৫ নং আমলী আদালতের বিচারক হাফিজ আল আসাদ জেলা পুলিশ সুপারকে এ নির্দেশ দেন।
গত ২১ ডিসেম্বর হালুয়াঘাট থানা পুলিশের ওসি কামরুল ইসলাম মিয়াসহ ৬ জনকে আসামি করে আদালতে অভিযোগ দায়ের করেন নির্যাতিত নারী।
বিষয়টি নিশ্চিত করে বাদী পক্ষের আইনজীবী আলহাজ নজরুল ইসলাম সরদার জানান, গত ১১ আগস্ট দুপুর ১২টার দিকে ধুরাইল বাজারে সিরাজুল ইসলামের দোকানের সামনে থেকে ঝর্ণা বেগমকে ধরে নিয়ে যায় ওসি কামরুল ইসলাম মিয়া। থানায় নিয়ে তার কাছে ৫ লক্ষ টাকা দাবি করেন। টাকা না দিলে তাকে মেরে ফেলার হুমকি দেয়। টাকা দিতে অস্বীকৃতি জানালে ওইদিন রাত ৩টার দিকে নারীকে ওসির রুমে নিয়ে আসে। এ সময় ধুরাইল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ওয়ারেস উদ্দিন সুমন এবং ওসি তাকে উলঙ্গ করে শারীরিক নির্যাতন করে।
তিনি আরও জানান, পরদিন রাতেও তাকে নির্যাতন করা হয়। ১৩ আগস্ট সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় তাকে আদালতে হাজির করা হয়। পরে তাকে জেলহাজতে পাঠানো হয়। পরদিন জেলহাজতে ওই নারী অচেতন হয়ে পড়লে কারা হাসপাতালের মাধ্যমে তাকে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। ৮ দিন চিকিৎসা শেষে তাকে পুনরায় হাজতে নেয়া হয়। পরে তার বিরুদ্ধে পর্যায়ক্রমে হালুয়াঘাট থানায় ৪টি গরু চুরির মামলা দেয়া হয়।
গত ৪ ডিসেম্বর জামিনে মুক্তি পায় ঝর্ণা বেগম। পরে চিকিৎসা শেষে ২১ ডিসেম্বর নির্যাতনের অভিযোগ এনে হালুয়াঘাট থানার ওসি কামরুল ইসলাম মিয়া, ধুরাইল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ওয়ারেস উদ্দিন সুমনসহ ৬ জনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগ করেন।
বুধবার নির্যাতনের বিষয়টি আদালত আমলে নিয়ে ১৫ দিনের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন দেয়ার জন্য জেলা পুলিশ সুপারকে নির্দেশ দেন।
এ বিষয়ে নির্যাতিত ঝর্ণা বেগম বলেন, ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান ওয়ারেস উদ্দিন সুমনের পক্ষে কাজ না করায় আমাকে এ নির্যাতনের শিকার হতে হয়েছে। আমি দর্জির কাজ করে কোনো রকম সংসার চালাই। চেয়ারম্যান আমার দিকে কয়েক বছর ধরে নজর দিয়েছে। আমি তার কথা না শুনাই সে আমাকে পুলিশ দিয়ে ধরে নিয়ে থানায় তিনদিন আটকে রেখে রাতভর শারীরিক নির্যাতন করে। আমার কাছে ৫ লক্ষ টাকা দাবি করে। এখন আমি অন্যের বাড়িতে প্রাণ ভয়ে আত্মগোপনে আছি। চেয়ারম্যান এবং ওসি আমার পরিবারের লোকজনকেও নানাভাবে হয়রানি করছে। আমরা এ নির্যাতন থেকে মুক্তি চাই।
নির্যাতিতার বাবা বাবুর হাট কওমি মাদরাসার শিক্ষক শামসুল আলম জানান, আজ আমার পরিবারের ওপর এমন নির্যাতন কোনোভাবে মেনে নিতে পারছি না। আমাদের এখন মরণ ছাড়া আর কোনো রাস্তা নেই। চেয়ারম্যান ও ওসি তারা দুই বন্ধু তাই তাদের সঙ্গে আমরা কোনোভাবেই পারছি না। মেয়েটাকে থানায় আটকে রেখে এমন নির্যাতন কোনো বাবা-মা কি সহ্য করতে পারে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ধুরাইল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ওয়ারেস উদ্দিন সুমন জানান, রাজনৈতিক প্রতিহিংসায় একটি পক্ষ আমার বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালাচ্ছে। ওই নারী নির্যাতনের বিষয়টি আমার জানা নেই।
হালুয়াঘাট থানা পুলিশের ওসি কামরুল ইসলাম মিয়া জানান, চুরি মামলায় ঝর্ণা বেগমকে জেলহাজতে পাঠানো হয়েছিল। তবে তাকে থানায় রেখে নির্যাতনের বিষয়টি অস্বীকার করেন তিনি।
এ ব্যাপারে জেলা ভারপ্রাপ্ত পুলিশ সুপার নূরে আলম বলেন, আদালতের নির্দেশ আমরা এখনও পাইনি। নির্দেশ পেলে তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে। অপরাধী যেই হোক তাকে ছাড় দেয়া হবে না বলেও জানান তিনি।