চোরাকারবারীদের কাছ থেকে নকল ওষুধ কিনছে রাজধানীর বসুন্ধরায় অবস্থিত বেসরকারি অ্যাপোলো হাসপাতাল। সোমবার স্বাস্থ্য অধিদফতর, ওষুধ প্রশাসন ও র্যাবের যৌথ অভিযানে এই তথ্যের প্রমাণ মিলেছে।
ল্যাবে রোগ নির্ণয়ের জন্য মেয়াদোত্তীর্ণ রি-এজেন্ট (রোগ নির্ণয়ের জন্য রাসায়নিক উপাদান) ব্যবহার এবং ফার্মেসিতে ওষুধ প্রশাসনের অনুমোদনহীন ওষুধ রাখায় সোমবার ইতোমধ্যে এই হাসপাতালকে পাঁচ লাখ টাকা জরিমানা করেছেন ভ্রাম্যমাণ আদালত।
এ অভিযানের পর জাগো নিউজে ‘অ্যাপোলোকে পাঁচ লাখ টাকা জরিমানা’ শিরোনামে একটি খবর প্রকাশিত হয়েছে। এ খবর প্রকাশ হওয়ার পর ফেসবুকে সমালোচনার ঝড় ওঠে। বাংলাদেশের অন্যতম ব্যয়বহুল এই হাসপাতালের এমন প্রতারণা আশা করেনি কেউ। ফেসবুকে অনেকে লিখেছেন, এটি ভয়ঙ্কর। মানুষ যাবে কোথায়? অ্যাপোলো হাসপাতালের যদি এই অবস্থা হয়, তাহলে খুবই দুঃখজনক।
সোমবারের ওই অভিযানে উপস্থিত ছিলেন ওষুধ প্রশাসন অধিদফতর ও স্বাস্থ্য অধিদফতরের কর্মকর্তারা। অভিযানের নেতৃত্ব দিয়েছেন র্যাব সদর দফতরের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সারওয়ার আলম। কীভাবে অ্যাপোলোর মেয়াদোত্তীর্ণ আর অনুমোদনহীন ওষুধের সন্ধান পেলেন তিনি? অভিযানের ক্লু জানতে চাইলে সারওয়ার আলম বলেন, ‘সম্প্রতি রাজধানীর নিকুঞ্জ-২ এলাকা থেকে নকল ওষুধ এবং প্যাকেজিং ম্যাটিরিয়ালসহ এক চোরাকারবারী ও নকল ওষুধ বিক্রেতাকে গ্রেফতার করে র্যাব। বিশেষ ক্ষমতা আইনে তার বিরুদ্ধে মামলা দেয়া হয়। তার কাছ থেকে জব্দ করা কিছু আলামতের সূত্র ধরে অভিযানটি চালানো হয়।’
র্যাব সূত্রে জানা গেছে, ওই চোরাকারবারীর নাম মো. দেলোয়ার হোসেন। যাকে গত ১৫ ফেব্রুয়ারি গ্রেফতার করে র্যাব। তিনি নিম্নমানের ভেজাল ওষুধ সরকারি রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে অবৈধভাবে স্থল ও আকাশ পথে আমদানি করতেন। সেদিন তার বাড়ি থেকে মোট এক কোটি টাকার ওষুধ জব্দ করা হয়।
র্যাব জানায়, দেলোয়ারের কাছ থেকে পলি ফার্মা নামে একটি ওষুধ বিক্রির বিল (রশিদ) উদ্ধার করে র্যাব। রশিদে অ্যাপোলো হাসপাতাল কর্তৃক দুটি আমদানি নিষিদ্ধ ওষুধ কেনার কথা লেখা ছিল। সেটি যাচাই-বাছাই করার জন্য অ্যাপোলো হাসপাতালে অভিযানটি চালানোর সিদ্ধান্ত নেয় র্যাব। দিনভর অভিযানে সন্দেহের সত্যতা পাওয়া যায়।
অ্যাপোলো থেকে উদ্ধার করা ওষুধগুলোর মধ্যে রয়েছে ভারতের ‘বেথান্যাকোল ক্লোরাইড ট্যাবলেট’। র্যাব জানায়, বিদেশি ওষুধগুলো স্ব স্ব দেশের আবহাওয়া অনুযায়ী বানানো হয়। এগুলো বাংলদেশে বিক্রির উদ্দেশ্যে আনা হলে ওষুধ প্রশাসনের অনুমতি লাগে।
অ্যাপোলো হাসপাতালের অনুমোদনহীন ওষুধ বিক্রি এবারই প্রথম নয়। ২০১৫ সালের ৮ সেপ্টেম্বর একই অভিযোগে প্রতিষ্ঠানটিকে ১৬ লাখ টাকা জরিমানা এবং প্রায় ১০ লাখ ওষুধ জব্দ করে র্যাবের ভ্রাম্যমাণ আদালত।
একই বছরের ৩ জুলাই এক নবজাতক শিশুর মৃত্যুর দায় চাপে অ্যাপোলোর চিকিৎসকের ওপর। এ ঘটনায় সেসময় রাজধানীর ভাটারা থানায় ৩০৪ (ক) ধারায় অনিচ্ছাকৃত খুনের মামলা করে ওই শিশুর পরিবার।
২০১৭ সালের মার্চে বাংলাদেশের সাবেক পেস বোলার সৈয়দ রাসেলের ভুল এমআরআই রিপোর্ট দেয়ার অভিযোগ ওঠে এই হাসপাতালের বিরুদ্ধে। সেসময় সৈয়দ রাসেল অভিযোগ করেন, ‘বাংলাদেশ অ্যাপোলো হাসপাতালের এমআরআই রিপোর্ট বলে আমার শোল্ডারের চারটা টেন্ডন (শিরা) ছেড়া। আর ভারতের (মুম্বাই) হাসপাতালের এমআরআই রিপোর্ট বলে আমার শোল্ডার ১০০ ভাগ ঠিক। শুধু একটা টেন্ডন একটু শুকিয়ে গেছে। যেটা থেরাপিস্ট দ্বারা ঠিক করা সম্ভব দু-তিন সপ্তাহে।’