সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার কারণে শ্রীলঙ্কায় জরুরি অবস্থা জারির পরও সহিংসতা অব্যাহত রয়েছে। মঙ্গলবার দিবাগত রাতে মধ্য শ্রীলঙ্কার একটি দোকান ও একটি মসজিদে হামলার ঘটনা ঘটেছে। কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা এ খবর জানিয়েছে।
বৌদ্ধ ও মুসলিমদের মধ্যে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার মুখে সহিংসতা ঠেকাতে ক্যান্ডিতে কারফিউ জারি করে স্থানীয় প্রশাসন। তারপরও ক্রমবর্ধমান সহিংসতার আশঙ্কায় সারাদেশে ১০ দিনের জন্য জরুরি অবস্থা জারি করা হয়েছে। সহিংসতায় ইন্ধনদাতাদের কঠোর শাস্তি দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে কর্তৃপক্ষ। সংঘাতকবলিত ক্যান্ডি শহরে সেনাবাহিনী ও পুলিশের বিশেষ বাহিনীর সদস্যদের মোতায়েন করা হয়েছে।
কান্ডি শহরের পাশের মাদাওয়ালা গ্রামে এক বাসিন্দা বলেন, প্রেসিডেন্ট মাথ্রিরিপালা সিরসেনা জরুরি অবস্থা ও কারফিউ জারি করার কয়েক ঘণ্টা পরে মঙ্গলবার রাত সাড়ে ১১টার সময় তিনি একটি দোকান পুড়তে দেখেন। মোহাম্মদ মানাজির নামে ওই ব্যক্তি আল জাজিরাকে বলেন, একটি ভবনে আগুন দেওয়ার খবর শুনে আমি বাইরে বিষয়টি দেখতে যাই। আমি সেখানে বিশাল অগ্নিশিখা দেখতে পাই। দোকানটি একজন মুসলিম বাসিন্দার ছিল।
মানাজির আরও বলেন, মাদাওয়ালা আর কোনও বড় ধরনের ঘটনা ঘটেনি। এখন পুলিশ ও সেনাবাহিনী ওই এলাকার পুরো নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে। খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিস দল আগুন নিভিয়ে ফেলেছে।
স্থানীয় এক সংবাদমাধ্যমের খবরে বলা হয়েছে, দাঙ্গাকারীরা কান্ডির উত্তর-পূর্বাঞ্চলের ওয়াত্তেগামা গ্রামে একটি মসজিদে হামলা চালিয়েছে।
কলম্বোভিত্তিক ওই অনলাইন সংবাদমাধ্যমটি টুইটারে দরজার ভাঙা কাঁচ ও ভাঙা চেয়ারের কিছু ছবি পোস্ট করেছে। তারা একটি অডিও বার্তাও প্রকাশ করেছে, যেখানে এক ব্যক্তি দাবি করছেন হামলার সময় তিনি মসজিদের ভেতরে ছিলেন। কন্ঠটি বলছিল, দাঙ্গাকারীরা মসজিদটিতে হামলা করেছে। পুলিশ গুলি করছে।
তবে বিষয়টি নিয়ে পুলিশ কোনও মন্তব্য করেনি।
শ্রীলঙ্কার কান্ডিতে সংখ্যাগরিষ্ঠ বৌদ্ধ সিনহালা সম্প্রদায়ের দাঙ্গাকারীরা মসজিদ, মুসলিমদের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান ও দোকানগুলোতে হামলা শুরুর পর সরকার সেখানে সেনা মোতায়েন করেছে। এক সপ্তাহ আগে মুসলিমদের পিটুনিতে এক বৌদ্ধ নাগরিকের মৃত্যুকে কেন্দ্র করে এই সহিংসতা শুরু হয়।
সংঘর্ষ ঠেকাতে সোমবার কান্ডিতে কারফিউ জারি করেছিল পুলিশ। বেশ কয়েকজনকে আটকও করা হয়। এরপর মঙ্গলবার একটি পুড়ে যাওয়া ভবন থেকে এক মুসলিম নাগরিকের লাশ উদ্ধারের পর ১০ দিনের জরুরি অবস্থা জারি করেন প্রেসিডেন্ট সিরসেনা।
প্রেসিডেন্ট সিরসেনা বলেন, জরুরি অবস্থায় দেশের কিছু অংশে বিরাজমান অসন্তোষজনক নিরাপত্তা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করবে। সমাজে অপরাধ কর্মকাণ্ড মোকাবিলা ও স্বাভাবিক পরিস্থিতি ফিরিয়ে আনতে পুলিশ ও সশস্ত্র বাহিনীকে প্রয়োজনীয় ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে।
শ্রীলঙ্কায় ২ কোটি ১০ লাখ বাসিন্দার ৭৫ শতাংশ বৌদ্ধ, ১০ শতাংশ মুসলিম ও ১৩ শতাংশ হিন্দু। এর আগে সর্বশেষ ২০১৪ সালের জুনে দেশটিতে মুসলিমবিদ্বেষী প্রচারণার কারণে রক্তক্ষয়ী আলুথগামা দাঙ্গা শুরু হয়। ওই সময়ে শত শত মুসলমান গৃহহীন হয়ে পড়েন। তাদের বাড়িঘর, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, শিক্ষা ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে হামলা চালানো হয়। শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্ট মাথ্রিপালা শিরসেনা ২০১৫ সালে ক্ষমতা নেওয়ার পর ওই ঘটনা তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। কিন্তু ওই তদ্ন্ত প্রতিবেদনের কোনও অগ্রগতি হয়নি।
শ্রীলঙ্কার উগ্রপন্থী বৌদ্ধদের অভিযোগ, দেশটিতে মুসলমানরা বৌদ্ধদের বলপূর্বক ধর্মান্তরিত করছে। তারা বৌদ্ধ প্রত্নতাত্ত্বিক স্থানগুলোতে ভাঙচুর করছে। কিছু পর্যবেক্ষক চলমান সহিংসতার জন্য কট্টর বৌদ্ধ সংগঠন বোদু বালা সেনা’কে (বিবিএস) দায়ী করছেন।