নলতা প্রতিনিধি: শিক্ষার্থীদের মাঝে মুক্তিযুদ্ধের প্রকৃত ইতিহাস তুলে ধরার আহ্বান জানিয়েছেন সাতক্ষীরা-৩ আসনের সংসদ সদস্য অধ্যাপক ডা. আ ফ ম রুহুল হক এমপি।
সারাদেশের ন্যায় সাতক্ষীরা জেলার কালিগঞ্জ উপজেলার নলতা আহ্ছানিয়া মিশন রেসিডেন্সিয়াল কলেজ মাঠে ২৬ মার্চ মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস উপলক্ষে সকাল ৮টা হতে বিভিন্ন অনুষ্ঠানমালা সম্পন্ন হয়েছে। নলতা ইউনিয়ন অওয়ামীলীগ ও এর সকল অঙ্গ সহযোগী সংগঠনের আয়োজনে অনুষ্ঠিত কর্মসূচীর মধ্যে ছিল- প্রধান অতিথির উপস্থিতিতে কে বি আহ্ছানউল্লা জুনিয়র হাইস্কুলের শিক্ষার্থীদের দলীয় জাতীয় সঙ্গীত পরিবেশনার মধ্য দিয়ে জাতীয় পতাকা উত্তোলন। বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে পুষ্পমাল্য অর্পণ। অতিথিদের আসন গ্রহণ। নলতা আহ্ছানিয়া মিশন রেসিডেন্সিয়াল কলেজ, নলতা মাধ্যমিক বিদ্যালয়, নলতার কে বি আহ্ছানউল্লা জুনিয়র হাইস্কুল, নলতা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, কে বি মোবারক আলী প্রি-ক্যাডেট স্কুল, আহ্ছানিয়া দরবেশ আলী ক্যাডেট স্কুল এর স্ব স্ব শিক্ষকদের সহযোগিতায় শিক্ষার্থীবৃন্দ দিবসের উপর প্রতিষ্ঠানভেদে পারফরমেন্সের তারতম্য হলেও সর্বপোরি বিভিন্ন ধরনের মনোমুগ্ধকর ডিসপ্লে প্রদর্শনী হয়।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন সাতক্ষীরা-৩ আসনের সংসদ সদস্য, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি, বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের উপদেষ্টামন্ডলীর সদস্য, সাবেক স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণমন্ত্রী আলহাজ্জ অধ্যাপক ডা. আ ফ ম রুহুল হক। তিনি বলেন-পাকিস্তানের সাথে আমাদের সাথে শুধু ধর্মের মিল থাকলেও আর সবদিক থেকে পাকিস্তানের সাথে আমাদের ছিল মতের পার্থক্য। ৫২ সালের ভাষা আন্দোলন, ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ সকল পর্যায়ে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভূমিকা ছিল অনস্বীকার্য। বঙ্গবন্ধুর জন্ম না হলে এদেশ স্বাধীন হত না। ১৯৭০ সালের জাতীয় নির্বাচনে বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে নিরঙ্কুশ বিজয় অর্জিত হলেও পাকিস্তানিরা বঙ্গবন্ধুর কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর না করে নানা নাটকীয়তা শুরু করে। তখন বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে পূর্ব বাংলায় আন্দোলন দিনে দিনে তীব্র আকার ধারণ করতে থাকে। বঙ্গবন্ধুর ঢাকা রেসকোর্স ময়দানের ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণে মূলত এদেশ স্বাধীনতার চূড়ান্ত লক্ষে এগিয়ে যায়। আমার সৌভাগ্য হয়েছিলো তৎকালিন মেডিকেল কলেজের ভিপি হিসেবে স্ব শরীরে রেসকোর্স ময়দানে উপস্থিত থেকে বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণ শ্রবণ করার। তাই ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ কালো রাতে পাকিস্তানি দোশররা এদেশের মানুষের উপর নির্মম গণহত্যা চালিয়ে বঙ্গবন্ধুকে তার ধানমন্ডীর ৩২ নম্বর বাসা থেকে গ্রেফতার করে। কিন্তু বাঙালী দামাল ছেলেদের ঐক্যবদ্ধ মুক্তিযুদ্ধের বেগবান আন্দোলনের কারণে পাকিস্তানিরা বঙ্গবন্ধুকে শেষ পর্যন্ত মুক্তি দিতে বাধ্য হয়। আর সেই মুক্তিযোদ্ধাদের অবদান আমাদেরকে শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করতে হবে। তাদেরকে যথাযত মর্যাদা দিতে হবে। শিক্ষকদের উদ্দেশ্য তিনি বলেন, স্বাধীনতার বিরোধীতাকারীরা বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণসহ ৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের প্রকৃত ইতিহাস ধামাচামা দিয়ে রাখছিলো। তারা এখনো ষড়যন্ত্র অব্যাহত রেখেছে। তাই নতুন প্রজন্মের শিক্ষার্থীদের মাঝে মুক্তিযুদ্ধের প্রকৃত ইতিহাস তুলে ধরতে হবে। আমি মনে করি এটা আপনাদের জাতীয় দায়িত্ব। সর্বপোরি লেখাপড়ার পাশাপাশি মাদকমুক্ত সমাজ গঠনের মাধ্যমে জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আগামী ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে উন্নত রাষ্ট্রে উন্নীত করতে শিক্ষার্থীসহ সকল শ্রেণি-পেশার মানুষের প্রতি উদাত্ব আহ্বান জানান প্রধান অতিথি। সবশেষে অধ্যাপক ডা. আ ফ ম রুহুল হক এমপি বলেন, সাতক্ষীরা-৩ ও সাতক্ষীরা-৪ আসনের একাদশ জাতীয় সংসদের সীমানা নিয়ে নানা ধরনের জটিলতার কথা আপনাদের মুখ থেকে শুনতে পাচ্ছি। তবে আমি জননেত্রী শেখ হাসিনার প্রতিনিধি হিসেবে আপনাদের আশ্বস্ত করতে চাই, আগামী একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন পূর্বের সীমানা অনুযায়ী অনুষ্ঠিত হবে।
নলতা কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ তোফায়েল আহমেদ এর সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন জেলা পরিষদ সদস্য এড. এস এম আসাদুর রহমান সেলিম, ভাড়াশিমলা ইউপি চেয়ারম্যান আলহাজ্জ নূরমোহাম্মদ বিশ্বাস, নলতা ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক আলহাজ্জ আবুল হোসেন পাড়, নলতা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সাবেক প্রধান শিক্ষক মুহাম্মদ ইসহাক, নলতার কে বি আহছানউল্লা জুনিয়র হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক শ্রীকুমার বসাক, নলতা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. আনোয়ারুল হকসহ অন্যান্য শিক্ষক-কর্মচারী, শিক্ষার্থীবৃন্দ, বীর মুক্তিযোদ্ধাবৃন্দ, আওয়ামীলীগ ও এর অঙ্গ সংগঠনের নেতৃবৃন্দ, প্রিন্ট ও ইলেক্ট্রন্ক্সি মিডিয়ার সাংবাদিকবৃন্দ তথা নানা শ্রেণি-পেশার হাজার হাজার নারী-পুরুষ ও শিশু উপস্থিত ছিলেন। অত্র অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণকারী উপরোক্ত প্রতিষ্ঠানগুলো ছাড়াও অংশগ্রহণ করে- নলতা মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়, নলতা আহ্ছানিয়া দারুল উলুম- ফাজিল মাদ্রাসা, ইন্দ্রনগর হুসাইনাবাদ ফাজিল মাদ্রাসা, আল-হেরা প্রি-ক্যাডেট মাদরাসা ও ইডা আদর্শ প্রি-ক্যাডেট স্কুল।