মিয়ানমার তার সীমান্তের শূন্যরেখায় অবস্থানরত রোহিঙ্গাদের তাড়াতে নতুন করে তৎপরতা শুরু করেছে। ওই দেশটির তথ্য কমিটি গত বুধবার তাদের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে এক বিবৃতিতে সরাসরি বাংলাদেশের বিরুদ্ধে শূন্যরেখায় অবস্থানরত রোহিঙ্গাদের বসতি স্থাপনে সহযোগিতার অভিযোগ এনেছে।
অন্যদিকে রোহিঙ্গাদের সরে যেতে গতকাল শনিবার সীমান্তে নতুন করে মাইকিং শুরু করেছে। সেখানে রোহিঙ্গাদের হুমকি দেওয়ার পাশাপাশি গালাগাল করা হচ্ছে।
মিয়ানমারের তথ্য কমিটি ফেসবুকে এক বিবৃতিতে বলেছে, বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক সীমান্তের মিয়ানমার অংশে রোহিঙ্গাদের অবৈধ বসতি স্থাপনে সহযোগিতা করছে। এটি মিয়ানমারের অখণ্ডতা ও সার্বভৌমত্বের ওপর চরম আঘাত। এটি অনতিবিলম্বে বন্ধ হতে হবে।
বিবৃতিতে আরো বলা হয়, রাখাইনে মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ উত্থাপনে আগ্রহীদের সুরক্ষা দেওয়া হবে।
রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গাদের ওপর নিরাপত্তা বাহিনীর নির্যাতন-নিপীড়নের অভিযোগ এড়িয়ে মিয়ানমারের তথ্য কমিটি বলেছে, রোহিঙ্গা জঙ্গি সংগঠন আরসা রাখাইনে বেসামরিক ব্যক্তিদের ওপর নৃশংসতা চালিয়েছে। এ জন্য তাদের বিচারের আওতায় আনা হবে।
বাংলাদেশ আরসা জঙ্গিদের আশ্রয় দিচ্ছে দাবি করে মিয়ানমারের তথ্য কমিটি উদ্বেগ প্রকাশ করে।
ওই কমিটি আরো দাবি করেছে, আরসা ইতিমধ্যে বাংলাদেশে আশ্রয়শিবিরে জায়গা করে নিয়েছে। তারা এ দেশে উগ্রবাদ ও সন্ত্রাসবাদ ছড়াবে।
মিয়ানমারের তথ্য কমিটি আরো বলেছে, আশ্রিত রোহিঙ্গারা মিয়ানমারে ফিরতে চাইলে তাদের অবশ্যই নাগরিকত্ব যাচাইয়ের প্রথম পদক্ষেপ হিসেবে ‘ন্যাশনাল ভেরিফিকেশন কার্ড’ নিতে হবে।
এদিকে বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্তের বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ির তুমব্রু অংশের শূন্যরেখায় (নো ম্যানস ল্যান্ড) অবস্থানকারী রোহিঙ্গাদের সরে যেতে গতকাল শনিবার থেকে নতুন করে মাইকিং শুরু করেছে মিয়ানমারের বর্ডার গার্ড পুলিশ (বিজিপি)। বিজিপি সদস্যরা মাইকে রোহিঙ্গাদের উদ্দেশ্য করে গালাগালও করছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এসব কারণে সীমান্তের শূন্যরেখাসংলগ্ন এলাকায় আবারও আতঙ্ক দেখা দিয়েছে।
সেখানে অবস্থানরত রোহিঙ্গা ও স্থানীয় বাসিন্দারা জানায়, গতকাল শনিবার সকাল থেকে সীমান্তে আবারও মিয়ানমারের সেনা এবং সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিজিপি সদস্যদের আনাগোনা বেড়েছে। মিয়ানমার সীমান্তের সড়কে সেনাবোঝাই যানবাহনের টহলও বাড়ানো হয়েছে। সীমান্ত সড়কের পাশের উঁচু পাহাড়গুলোতেও মিয়ানমারের সশস্ত্র সেনা এবং বিজিপি সদস্যদের আনাগোনা দেখেছে তারা।
শূন্যরেখা থেকে রোহিঙ্গা নেতা নুরুল আমিন গতকাল বিকেলে বলেন, ‘গত মার্চের প্রথম সপ্তাহের পর এত দিন ধরে শূন্যরেখায় আমরা বেশ নিরাপদে ছিলাম। কিন্তু আজ (গতকাল) শনিবার সকাল থেকে আকস্মিক মিয়নামার বাহিনী আবারও সীমান্তের দিকে আসা শুরু করেছে। ’
তুমব্রু সীমান্তের স্থানীয় বাসিন্দা আবু বকর জানান, তুমব্রু সীমান্তের পাহাড়ি ঢল থেকে রক্ষায় শূন্যরেখার রোহিঙ্গাদের নতুন করে ঘরবাড়ি তৈরি করে দিচ্ছে এনজিওরা। বিজিপি সদস্যরা এতে বাধা দিচ্ছে।
স্থানীয় বাসিন্দা বকর বলেন, মাইকিং করে শূন্যরেখা থেকে রোহিঙ্গাদের সরে যেতে বলছে বারবার। এতে রোহিঙ্গারা বাংলাদেশ সীমান্তের দিকে চলে আসতে বাধ্য হচ্ছেন। সেই সঙ্গে সীমান্ত এলাকায় নতুন করে আতঙ্ক বিরাজ করছে।
কক্সবাজারের বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) ৩৪ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লে. কর্নেল মঞ্জুরুল হাসান খান জানান, সীমান্তে বিজিপি মাইকিং করলেও বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) সদস্যরা সতর্কাবস্থায় রয়েছেন।
প্রসঙ্গত, গত ২৫ আগস্টের পর মিয়ানমার বাহিনীর নির্মমতার মুখে রাখাইনের মংডুর বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী এলাকার রোহিঙ্গারা তুমব্রু সীমান্তের শূন্যরেখায় আশ্রয় নেয়। সেখানে প্রায় পাঁচ হাজার রোহিঙ্গা অবস্থান করছে। এসব রোহিঙ্গাদের শূন্যরেখা থেকে সরিয়ে দিতে গত মার্চের প্রথম সপ্তাহে মিয়ানমারের সেনা ও বিজিপি সদস্যরা সীমান্তে অবস্থান নিয়েছিল। পরে দুই দেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনীর মধ্যে পতাকা বৈঠকের পর পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়।