ন্যাশনাল ডেস্ক: ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগে অনুপ্রবেশের অভিযোগ খোদ দলটির কেন্দ্রীয় নেতারাও করে আসছেন দীর্ঘদিন ধরে। তারা অনুপ্রবেশকারীদের নিয়ে বেশ কয়েকবার বিব্রতবোধ করার কথা জানিয়েছেন। এসব অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে একাদশ জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে নিয়েছেন দলের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এরই মধ্যে অনুপ্রবেশকারীদের একটি তালিকা শেখ হাসিনার হাতে এসেছে। সরকারের বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার সাহায্যে সংগ্রহ করা তালিকাভুক্ত এসব ব্যক্তির নাম-পরিচয় যাচাই-বাছাইয়ের জন্য শেখ হাসিনা দায়িত্ব দিয়েছেন দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ডা. দীপু মণির নেতৃত্বে গঠিত ছয় সদস্যের কমিটিকে। এই কমিটি অনুপ্রবেশকারীদের বিষয়ে যাচাই-বাছাই করবে। আওয়ামী লীগের নীতি-নির্ধারণী পর্যায়ের একাধিক নেতা এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
ক্ষমতাসীন দলের কেন্দ্রীয় নেতারা জানান, অনুপ্রবেশকারীরা আওয়ামী লীগের কোন নেতার সহায়তায় দলে ঢুকেছেন এবং কী পদ পেয়েছেন সেসব তথ্য যাছাই কমিটি খতিয়ে দেখবে। একই সঙ্গে খতিয়ে দেখা হবে, অনুপ্রবেশকারীদের বিরুদ্ধে বিএনপি-জামায়াত জোটের পক্ষ হয়ে জ্বালাও-পোড়াওয়ের অংশ নেওয়া অভিযোগসহ সুনির্দিষ্ট কোনও মামলা আছে কিনা। এছাড়া, এসব অনুপ্রবেশকারীর বিরুদ্ধে অতীতে আওয়ামী লীগ নেতাদের ওপর অত্যাচার-নির্যাতনের অভিযোগ রয়েছে কিনা সে বিষয়েও অনুসন্ধান চালাবে এই যাছাই কমিটি।
অনুপ্রবেশকারীরা আওয়ামী লীগে প্রকাশ্যে না গোপনে যোগ দিয়েছেন, তারা দলের ভাবমূর্তি ধ্বংস করছেন কিনা তা খতিয়ে দেখবে এই যাছাই কমিটি। পাশাপাশি অনুপ্রবেশকারীরা অবৈধ উপায়ে অর্জন করা অর্থ সম্পদ রক্ষা করা বা অর্থ সম্পদের মালিক হতে আওয়ামী লীগে যোগ দিয়েছেন কিনা, তাও যাচাই-বাছাই করে চিহ্নিত করার জন্য যাছাই কমিটিকে দায়িত্ব দিয়েছেন দলীয় সভাপতি শেখ হাসিনা।
যাছাই কমিটির একজন সদস্য বলেন, ‘‘মে মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহে গণভবনে কেন্দ্রীয় নেতাদের নিয়ে এক বৈঠকে শেখ হাসিনা বলেন, ‘সারাদেশে কোথায় কোথায় সংগঠনের ভেতরে অনুপ্রবেশ ঘটেছে, সেই তথ্য আমি বের করে এনেছি। আওয়ামী লীগসহ সহযোগী সংগঠনগুলোয় এই সংখ্যা কত, সেই তথ্যও আমার কাছে আছে।’ এমন তথ্য দিয়েই দু’টি পাটের ব্যাগ থেকে দু’টি বই বের করে আমাদের দেখান আওয়ামী লীগ সভাপতি।’’
এই নেতা আরও বলেন, ‘‘প্রধানমন্ত্রী ওই সময় আরও বলেন, ‘এখানে অনুপ্রবেশকারীদের সব তথ্য উঠে এসেছে। এগুলো আবার যাচাই-বাছাই করা হবে। এরপরই অনুপ্রবেশকারীদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থাও নেওয়া হবে।’ ওই সময় একজন কেন্দ্রীয় নেতা এই বইগুলো দেখতে চাইলে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘দেখতে হলে এখানে বসেই দেখতে হবে। নেওয়া যাবে না।’ তিনি এও বলেন, ‘অবশ্য, আমার কাছে সফট কপিও আছে।’ পরের দিন দীপু মণিকে প্রধান করে ছয় নারী নেতাকে অনুপ্রবেশকারীদের বিষয়ে যাচাই-বাছাইয়ের দায়িত্ব দেন শেখ হাসিনা।’’
দলীয় সূত্র জানায়, অনুপ্রবেশকারীরা আওয়ামী লীগের নাম ভাঙিয়ে কোনও অপরাধের সঙ্গে জড়িয়েছেন কিনা, দলের ভেতরে দ্বন্দ্ব-কোন্দলে তাদের ভূমিকা রয়েছে কিনা—গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিবেদন দেখে এসব যাচাই-বাছাই করতে নির্দেশ দিয়েছেন শেখ হাসিনা। গোয়েন্দা সংস্থার রিপোর্ট ধরে ও দলীয় যাছাই-বাছাই শেষ করে তাদের ছাঁটাই করা হবে। অনুপ্রবেশকারী এসব নেতার বিরুদ্ধে মামলা থাকলে সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও জানান দলের একজন কেন্দ্রীয় নেতা।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে নাম প্রকাশ না করার শর্তে যাছাই কমিটির দুই নেতা বলেন, ‘যাচাই-বাছাইয়ের কাজ চলছে।’