কলারোয়া প্রতিনিধি: বয়স সত্তর এর কোঠায়। শরীর রয়েছে ইমেজ ও চাঙ্গা ঠিকমত চলাফেরা করতে পারে সবসময়। তবু চলা থেমে নেই। নেই এতটুকু ফুরসত। ঘরে বসে প্রতিদিন শত শত রোগীকে দেন চিকিৎসাসেবা। আর গরীব রোগীকে চিকিৎসার পাশা পাশি ওষুধটাও দেন বিনামূল্যে। প্রায় তিন যুগের বেশি সময় ধরে নিভৃত পল্লীতে অসহায় মানুষের চিকিৎসাসেবা দিয়ে আসছেন। বলছিলাম কলারোয়া উপজেলার লাঙ্গলঝাড়া গ্রামের ডলি ক্লিনিকের ডাক্তার আব্দুর রাজ্জাকের কথা এটাই তার জীবন। আর তাই সবাই তাকে‘গরিবের ডাক্তার নামে ডাকে বা চেনে। ডাক্তার রাজ্জাক বলেন, ৪০ বছর আগের কথা। সবে ডাক্তারি পাশ করেছি। পাশ করে ভাল একটা চাকরির সুযোগ এলো। নিয়োগের চিঠিটা হাতে নিয়ে মাকে পাঁ ছুয়ে সালাম করতেই মায়ের চোখে জল। ভাবলাম ছেলেকে এত দূরে যেতে দিতে হবে,তাই এই নিরব কান্না। কিন্তু আমার ভুল ভাঙিয়ে মা বললেন,বাবা আমি এত কষ্ট করে তো তোমাকে এলাকার বাহিরে সেবার জন্যে ডাক্তার বানাইনি। ডাক্তার বানিয়েছি এই গ্রামের অসহায় গরিব মানুষের সেবার জন্যে। তাদের সেবা করো, তবেই আমি সবচেয়ে বেশি শান্তি পাব। নিয়োগের চিঠিটা ছিঁড়ে ফেললাম। মায়ের কথা মনে রেখে রয়ে গেলাম আমার গ্রামে। সেই থেকে যখন কোনো অসহায় গরিব রোগী দেখি, চোখের সামনে আমার মায়ের মুখটা ভেসে ওঠে। স্থানীয়রা লোকজনের সঙ্গে কথা হলে তারা জানান,স্বাধীনতার আগে এ অঞ্চলে যখন কোনো ডাক্তার ছিল না। তখন এখানকার মানুষের একমাত্র ভরসাস্থল ছিলেন ডাক্তার আব্দুর রাজ্জাক। দিনে-রাতে যে কোন সময় তাকে ডেকে পাওয়া যায়নি, এমনটি কেউই মনে করতে পারলেন না। সারা জীবন মানবসেবা দিলেও রাখেননি হিসাব। তবে গড়ে দৈনিক ৩০জন রোগী হলে ৪০ বছরে প্রায় ৯/১০লাখ মানুষের চিকিৎসা সেবা দিয়েছেন তিনি। জীবনে সরকারি ছুটি আর উৎসবের দিনেও চিকিৎসা বন্ধ করেননি। কলারোয়ার ইতিহাস ও ঐতিহ্যের গ্রন্থের ডাক্তার রাজ্জাক। তিনি শুধু বিনামূল্যে ব্যবস্থাপত্র দেননি, অনেককে ওষুধ ক্রয়ের টাকাও দিয়েছেন। প্রকৃত অর্থে একজন সমাজ হৈতষী। ডাক্তার আব্দুর রাজ্জাকের কাছে সেবা নিতে আসা বিভিন্ন জেলা বা উপজেলার রোগীদের সাথে কথা হলে তারা বলেন, সোনিয়া লাঙ্গলঝাড়া তিনি কানের সমস্যায় দীর্ঘদিন ধরে ভুগছেন। এখানে সেবা নিতে এসে তার কানের সমস্য অনেকটাই কমে গেছে। নবিছন খাতুন পিছলাপোল তিনি নাকের সমস্যায় ভুগছেন,এখানে প্রথম চিকিৎসা নিয়ে এসেছে। মনিরুজ্জামান বাঁকড়া গলা ব্যাথা গত ১০ বছর যাবত এই সমস্যায় ভূগছেন,এখানে সেবা নিয়ে তিনি অনেকটাই সুস্থ্য। শামিম আমলা গোগা কানের সমস্যার ভূগছেন,এখানে সেবা নিয়ে তিনি অনেক সুস্থ্য অনুভব করেন। এবং বজলুুর রহমান ধানঘোড়া শার্শা কানের সমস্যার জন্যে তিনি দীর্ঘদিন ধরে অসুুস্থ থাকার পরে ডাক্তার আব্দুর রাজ্জাক সাহেবের নিকট চিকিৎসা নিয়ে প্রায় পুরো পুরি সুস্থ্য। এছাড়া ডাক্তার আব্দুুর রাজ্জাক আর বলেন, মায়ের আদেশ পালন করতেই তিনি জন্মভূমি ছেড়ে সরকারি চাকরি বা দূরে চিকিৎসা সেবা দিতে যাননি। ডাক্তার মানেই সেবা, যারা আজ ডাক্তার হচ্ছেন, তাদের সেবার মনোভাব শুন্যতায় পৌঁছে যাচ্ছে। নতুন প্রজন্মের ডাক্তারদের কাছে তিনি আশীর্বাদ হয়ে থাকবেন। আজ বয়সে তিনি প্রবীন। মন, কর্ম ও মানুষের সেবার মানসিকতায় রয়েছে তারুণ্যের প্রতি। দাম্পত্য জীবনে তিনি ভাল সুখেই আছেন।
পূর্ববর্তী পোস্ট