উৎসাহ এবং শঙ্কার মধ্যে আগামীকাল মঙ্গলবার অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে গাজীপুর সিটি করপোরেশনের নির্বাচন। প্রথমবার নির্দলীয় প্রতীকে ভোট হলেও এবারই প্রথম দলীয় প্রতীকে ভোট হবে। জাতীয় নির্বাচনের ছয়মাস আগে অনুষ্ঠিত এই সিটির নির্বাচন নিয়ে রাজনৈতিক উত্তেজনা তুঙ্গে।
গত ১৫ মে খুলনা সিটি নিয়ে কিছুটা অস্বস্তিতে থাকা নির্বাচন কমিশন সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ ভোট আয়োজনে সব ধরণের প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে। নির্বাচন শান্তিপূর্ণ করতে প্রায় ১২ হাজার বিভিন্ন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য মোতায়েন করা হচ্ছে। ইতোমধ্যে নগরীর বিভিন্ন স্থানে টহল দিতে শুরু করেছে বিজিবি। ভোটে কোন ধরণের অনিয়ম হলে কঠোর ব্যবস্থা নেয়ার হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কেএম নূরুল হুদা।
ভোট গ্রহণের দুইদিন আগে গতকাল বিএনপি নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে বৈঠক করে বেশকিছু অভিযোগ উপস্থাপন করেছে। দলটির দাবি নির্বাচন কমিশন ভালো নির্দেশনা দিলেও স্থানীয় প্রশাসন তা মানছে না।
গাজীপুর সিটি নির্বাচনে সর্বশক্তি নিয়ে রবিবার শেষ দিনের প্রচারণা চালিয়েছেন মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থীরা। মেয়র প্রার্থীদের পাশাপাশি কাউন্সিলর ও সংরক্ষিত ওয়ার্ডের প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের প্রচারণার গতকাল শেষ দিনে ছিলো উত্সব মুখর পরিবেশে। প্রার্থীদের কর্মী সমর্থকদের প্রচার প্রচারণায় মিছিল আর শ্লোগানে নিজ নিজ এলাকা মুখরিত হয়ে ওঠে। প্রচারণা শেষে ফলাফল বিশ্লেষনে ব্যস্ত প্রার্থী, ভোটার ও প্রার্থীর সমর্থকরা।
তবে মেয়র পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতাকারী প্রধান দুই প্রার্থী আওয়ামী লীগের মো. জাহাঙ্গীর আলম সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন হওয়ার ব্যাপারে আশাবাদ ব্যক্ত করলেও বিএনপি মনোনীত প্রার্থী হাসান উদ্দিন সরকার তাদের কর্মী-সমর্থক ও পোলিং এজেন্টের ভয়ভীতি প্রদর্শন ও নির্বাচন আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগ করেছেন। রবিবার প্রচার-প্রচারণা শেষ দিনে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি মনোনীত দুই মেয়র প্রার্থী পৃথক পৃথক সংবাদ সম্মেলন করেছেন। আজ সোমবার দুপুর থেকেই ভোট কেন্দ্রগুলোতে ব্যালট পেপার, ব্যালট বাক্সসহ যাবতীয় নির্বাচনী সমঞ্জাম পাঠানো হবে।
গাজীপুর সিটি নির্বাচনের রিটার্নিং অফিসার রকিব উদ্দিন মন্ডল জানান, রবিবার রাত ১২টা থেকে সব ধরনের নির্বাচনী প্রচারণা নিষিদ্ধ করা হয়েছে। আইনশৃঙ্খলা বজায় রাখতে প্রশাসন কঠোর নজরদারি করছে। সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশে ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন। তিনি বলেন, গাজীপুর সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে ভোট গ্রহণের আগের দিন সোমবার থেকে পুলিশ, র্যাব, বিজিবি, আনসারসহ প্রায় ১২ হাজার নিরাপত্তা কর্মী মাঠে থাকবে।
গত ১৫ মে খুলনা সিটির সঙ্গে গাজীপুর সিটির ভোট হওয়ার কথা থাকলেও মাঝপথে এসে আইনী জটিলতায় আটকে যায়। জটিলতা কেটে গেলে নির্বাচন কমিশন পুনরায় ২৬ জুন ভোটের সময় নির্ধারণ করে। গত ১৮ জুন মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থীদের নির্বাচনের দ্বিতীয় পর্যায়ের আনুষ্ঠানিক প্রচারণা শুরু হয়।
জাতীয় সংসদের গাজীপুর-১, ২ ও ৩ আসনের কিছু কিছু অংশ নিয়ে গাজীপুর সিটি করপোরেশন এলাকা গঠিত। সিটি করপোরেশনের মোট ওয়ার্ড ৫৭টি। ভোট ভোটার ১১ লাখ ৩৭ হাজার ৭৩৬ জন। ভোটকেন্দ্র ৪২টি, ভোটকক্ষ ২৭৬১টি।
বেশিরভাগ কেন্দ্রই ঝুঁকিপূর্ণ
স্থানীয় নির্বাচন সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায় ৪২৫টি ভোট কেন্দ্রের মধ্যে ৩৩৭টি ঝুঁকিপূর্ণ এবং বাকী ৮৮টি কেন্দ্র সাধারণ বলে চিহ্নিত করা হয়েছে। ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্রগুলোর জন্য ২৪ জন এবং সাধারণ কেন্দ্রের জন্য ২২ জন করে সশস্ত্র পুলিশ দায়িত্ব পালন করবে। এছাড়া থাকবে পুলিশের টহল দল ও সাদা পোশাকের গোয়েন্দারা। সব মিলিয়ে ভোটের দিন প্রায় ১২ হাজার নিরাপত্তা কর্মী দায়িত্ব পালন করবে। নির্বাচন আচরণবিধি প্রতিপালন পর্যবেক্ষণ ও নির্বাচন আচরণবিধি লঙ্ঘনকারীকে তাত্ক্ষণিক সাজা দিতে প্রতিটি কেন্দ্রে একজন করে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট দায়িত্ব পালন করবেন। এছাড়া ১৯টি সংরক্ষিত মহিলা কেন্দ্রে একজন করে জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট দায়িত্বে নিয়োজিত থাকবে। অপরদিকে ১৯টি মোবাইল ও স্ট্রাইকিং ফোর্স, ১০টি র্যাবের টহল টিম এবং ২৯ প্লাটুন বিজিবি মোতায়ন থাকবে।