দেশের খবর: সরকারি চাকরিতে কোটা পদ্ধতি পর্যালোচনার জন্য গঠিত সচিব কমিটির প্রথম বৈঠকে কোটার বিষয়ে দেশি-বিদেশি তথ্য সংগ্রহের সিদ্ধান্ত হয়েছে।
রোববার সচিবালয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলমের সভাপতিত্বে তার দফতরে অনুষ্ঠিত বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত হয়।
বৈঠকে কমিটির সদস্য জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়, মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়, সরকারি কর্মকমিশন (পিএসসি), অর্থ বিভাগ এবং লেজিসলেটিভ ও সংসদবিষয়ক বিভাগের সচিবরা উপস্থিত ছিলেন।
বৈঠক শেষে কমিটিতে সাচিবিক দায়িত্ব পালনকারী জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব (বিধি) আবুল কাশেম মো. মহিউদ্দিন সাংবাদিকদের বলেন, প্রথম সভায় দেশে–বিদেশে কোটাসংক্রান্ত যেসব তথ্য আছে এবং এ বিষয়ে বিভিন্ন কমিটির প্রতিবেদন সংগ্রহ করার সিদ্ধান্ত হয়েছে। এ রিপোর্টের ভিত্তিতে পরবর্তী সময়ে পদক্ষেপ নেয়া হবে।
সাত দিনের মধ্যে সেসব প্রতিবেদন সংগ্রহের চেষ্টা করা হবে জানিয়ে তিনি বলেন, সেসব রিপোর্ট, প্রতিবেদন বা তথ্য পাওয়ার পর দ্বিতীয় বৈঠকে বসবে কমিটি।
আবুল কাশেম আরও বলেন, পত্রিকায় প্রকাশিত প্রতিবেদন, পিএসসির প্রতিবেদন, বিভিন্ন সময় সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিবদের কমিশন বা তাদের ব্যক্তিগত রিপোর্টও রয়েছে। যত দ্রুত পারি সেগুলো সংগ্রহ করব। আমরা এটি নিয়ে সার্বক্ষণিক কাজ করতে চাচ্ছি। এটি আসলে দ্রুততম সময়ের মধ্যে চেষ্টা করছি সংগ্রহ করার। এগুলো সংগ্রহের ওপর পরবর্তী সভা নির্ভর করবে।
কত দিনের মধ্যে প্রতিবেদন দেয়া হবে, জানতে চাইলে তিনি বলেন, চেষ্টা করছি যত দ্রুত পারি, কর্মপরিধি অনুযায়ী ১৫ দিনের মধ্যে প্রতিবেদন দেয়ার মধ্যেই রয়েছি। … যদি না পারি পরে বলত পারব।
কোটাব্যবস্থা পর্যালোচনায় ‘এক্সপার্ট বোর্ড’ করা হবে কিনা এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, প্রতিবেদনগুলো সংগ্রহের পর সভা করে সেই সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।
কোট সংস্কার নিয়ে কমিটি আন্দোলনকারীদের সঙ্গে কথা বলবেন কিনা জানতে চাইলে কাশেম বলেন, আন্দোলনকারী যারা, তারা তো বিভিন্ন সময় বিভিন্ন দাবি-দাওয়া করছে। আসলে তারা অনেকেই তথ্য না জেনেও আন্দোলন করছে।
তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী যেহেতু চাচ্ছেন এ বিষয়ে ভালো-সুচিন্তিত সিদ্ধান্ত দেয়ার জন্য, সে জন্য শক্তিশালী কমিটি বাস্তবধর্মী এবং তথ্যগত যে বিষয় রয়েছে, সেগুলো পর্যালোচনা করে সিদ্ধান্ত দেবে।
গত সোমবার রাতে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় সরকারি চাকরিতে বিদ্যমান কোটাপদ্ধতি পর্যালোচনা, সংস্কার বা বাতিলের বিষয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলমের নেতৃত্বে সাত সদস্যের একটি কমিটি গঠন করে। কমিটিতে ছয়জন সচিবকে সদস্য হিসেবে রাখা হয়।
সরকারি চাকরিতে বিদ্যমান কোটা সংস্কারের দাবিতে শিক্ষার্থী ও চাকরিপ্রার্থীরা দীর্ঘদিন ধরে আন্দোলন করে আসছেন।
গত ৮ এপ্রিল শাহবাগে আন্দোলনকারীদের ওপর পুলিশ লাঠিপেটা করলে এবং কাঁদানে গ্যাসের শেল ছুড়ে মারলে পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে ওঠে।
পর দিন এ আন্দোলন দেশের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ছড়িয়ে পড়ে। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে ১১ এপ্রিল সংসদে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কোটা বাতিলের ঘোষণা দেন।
এর পর গত মে মাসে কোটার বিষয়ে একটি কমিটি গঠনের জন্য সরকারের কাছে প্রস্তাব পাঠায় জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়।
সর্বশেষ কোটা সংস্কারের দাবিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় আন্দোলনে নামা শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা চালান ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। এতে পরিষদের যুগ্ম আহ্বায়ক নুরুল হক নূরসহ অনেকেই আহত হন।হামলায় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী তরিকুল ইসলাম তারেকের ডান পা ও মেরুদণ্ডের হাড় ভেঙে গেছে।
এছাড়া কোটা আন্দোলনের অনেককেই গ্রেফতার করা হয়েছে। এরমধ্যে আইসিটি আইনের একটি মামলায় গ্রেফতার করা হয়েছে আন্দোলনকারীদের অন্যতম নেতা রাশেদ খানকে।