খেলার খবর: জ্যামাইকায় ওয়েস্ট ইন্ডিজকে ৩৫৪ রানে অলআউট করে প্রথম সেশনে চওড়া হাসি ছিল সাকিব আল হাসানের। দ্বিতীয় সেশনে চওড়া হাসি আর ধরে রাখা যায়নি। স্বাগতিকরাই দাপট দেখিয়েছে বল হাতে। ক্যারিবীয় বোলিংয়ের সামনে ফের ব্যাটিংয়ের বিবর্ণ চিত্রটা ফুটে উঠেছে দ্বিতীয় টেস্টেও। সাকিবরা প্রথম ইনিংসে গুটিয়ে গেছে ১৪৯ রানে।
প্রথম সেশনে ক্যারিবীয়দের গুঁড়িয়ে দিয়ে বাংলাদেশের ব্যাট হাতে মূল লড়াইটা চলে দ্বিতীয় সেশনে। তাতে আহামরি কিছু করতে পারেনি সফরকারীরা। ৪ উইকেট হারিয়ে এই সেশনে করে ৯২ রান।
তবে অ্যান্টিগা টেস্টের ব্যাটিং ব্যর্থতায় জ্যামাইকার শুরুটা সাবধানে করেছিল বাংলাদেশ। তামিম ইকবাল ও লিটন দাসের ব্যাটে ছিল শুরুর প্রতিরোধ। সপ্তম ওভারে দলীয় ২০ রানে এই প্রতিরোধ ভেঙে দেন আগের টেস্টে ৫ উইকেট নেওয়া শ্যানন গ্যাব্রিয়েল। লেগ বিফোর হয়ে ব্যক্তিগত ১২ রানে ফেরেন লিটন।
নতুন নামা মুমিনুল হক ভুল করে বসেন আগের মতোই। এই ওভারে একটি বল খেলে গাব্রিয়েলের পঞ্চম বলে লিডিং এজ হয়ে গালিতে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন শূন্য রানে।
দুই উইকেট পড়ে যাওয়ায় বাংলাদেশের ইনিংসটাকে প্রাণ দেওয়ার চেষ্টা করেন তামিম ইকবাল ও অধিনায়ক সাকিব আল হাসান। এক পর্যায়ে সফলও হন দুজনে। যেখানে প্রথম টেস্টে ব্যাটিং ব্যর্থতা ছিল সঙ্গী। সেখানে সিরিজের সর্বোচ্চ জুটি গড়েন সাকিব-তামিম। তাদের জুটিতে আসে ৫৯ রান।
জুটি গড়ার বিপরীতে উইকেট বিলিয়ে দেওয়ারও সুযোগ দিয়েছিলেন তামিম। ক্রিজে টিকে যাওয়া তামিম রোস্টন চেসের ২৩তম ওভারে স্লিপে ক্যাচ দিয়েছিলেন। ডেভন স্মিথ লুফে নিতে পারেননি সেই বল।
পরের ওভারে ভাগ্য আর সহায় হয়নি। জেসন হোল্ডারের শর্ট লেন্থের পর বাঁক নিয়ে ভেতরে ঢুকে পড়েছিল। সাকিব পেছনে সরে কাট করতে গেলে বল সরাসরি আঘাত হানে স্টাম্পে।৫৩ বলে ৩২ রান করে বিদায় নেন সাকিব।
হোল্ডারের এই ওভারে বিপদ আরও বাড়ে বাংলাদেশের। এক বল বিরতি দিয়ে এলবিডাব্লিউ করেন নতুন নামা মাহমুদউল্লাহ রিয়াদকে। ততক্ষণে বাংলাদেশের স্কোর ৪ উইকেটে ৭৯ রান।
বিরতির পর চিরচেনা বাংলাদেশেরই দেখা মিলে। যার শুরুটা হয় তামিমের বিদায়ে। কিমো পলের কোনাকুনি আসা বলের দিক বুঝতে পারেননি তামিম। বোল্ড হয়ে ফেরেন ৪৭ রানে। পরের বলে নতুন নামা নুরুল হাসানকে লেগ বিফোরের ফাঁদে ফেললে ফের ব্যাটিং বিপর্যয়ের মুখে পড়ে যায় বাংলাদেশ।
মুশফিক কিছুক্ষণ চেষ্টা করেছিলেন থিতু হতে। কিন্তু পারেননি। জেসন হোল্ডারের লাফানো বলে সোজা কাট করে জমা পড়েন হোপের হাতে। ততক্ষণে ব্যর্থতার ষোলোকলা পূর্ণ করে ফেলেছে বাংলাদেশ। অভিজ্ঞদের বিদায়ে স্কোর দাঁড়ায় ৭ উইকেটে ১২৭ রান। লেজের দিকে নামা মেহেদী হাসান মিরাজকে থিতু হতে দেননি মিগেল কামিন্স। এলবিডাব্লিউ করে ফেরান ৩ রানে ব্যাট করতে থাকা মিরাজকে। মিরাজ রিভিউ নিলেও আম্পায়ার্স কলে সাজঘরের পথই ধরতে হয় তাকে।
তাইজুল ব্যাট হাতে দাঁড়ানোর চেষ্টা করে ১৮ রানের বেশি করতে পারেননি। ক্যারিবীয় অধিনায়ক জেসন হোল্ডারের বলে বোল্ড হয়ে ফেরেন। শেষ উইকেটে হোল্ডার আবু জায়েদকে বোল্ড করলে ৪৬.১ ওভারে ১৪৯ রানেই গুটিয়ে যায় বাংলাদেশ। তাতে বাংলাদেশ ফলোঅনে পড়লেও ওয়েস্ট ইন্ডিজ তাদের ফলোঅন না করানোর সিদ্ধান্ত নেয়।
ওয়েস্ট ইন্ডিজ অধিনায়ক শেষ দিকে নাড়িয়ে দিয়েছেন বাংলাদেশকে। হোল্ডার ৪৪ রানে নেন ৫ উইকেট। দুটি নেন শ্যানন গ্যাব্রিয়েল ও কিমো পল। একটি নেন মিগেল কামিন্স।
বোলারদের কৃতিত্বে দ্বিতীয় ইনিংসে ২০৫ রানের লিড নিয়ে ব্যাট করছে স্বাগতিকরা। শেষ বিকালে প্রতিপক্ষের একটি উইকেট তুলে নেন সাকিব আল হাসান। বোল্ড হয়ে সাজঘরে ফিরে গেছেন ক্রেইগ ব্র্যাথওয়েট। দ্বিতীয় দিন শেষে তাদের সংগ্রহ ১ উইকেটে ১৯ রান। তাদের লিড ২২৪ রান।
এর আগে প্রথম দিনে ৪ উইকেটে ২৯৫ রান নিয়ে দিন শুরু করা ওয়েস্ট ইন্ডিজ সুবিধা করতে পারেনি বাংলাদেশি বোলারদের সামনে। দ্বিতীয় দিন মিরাজ টেস্ট ক্যারিয়ারে চতুর্থবার ৫ উইকেট পূর্ণ করেছেন। মিগেল কামিন্সকে আউট করে এই স্পিনার পান ৫ উইকেট। তার ঘূর্ণির সঙ্গে আবু জায়েদের পেসে দ্বিতীয় দিন ৫৯ রান যোগ করতে শেষ ৬ উইকেট হারায় স্বাগতিকরা।