দেশের খবর: বঙ্গবন্ধু-১ স্যাটেলাইট দেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন তথা সার্বিক উন্নয়নে ভূমিকা রাখবে বলে আশা প্রকাশ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। মহাকাশে কৃত্রিম উপগ্রহ পাঠানোর পথ ধরে একদিন বাংলাদেশের চন্দ্রবিজয়ের স্বপ্নও বাস্তবে রূপ নেবে বলে মনে করেন তিনি।
মঙ্গলবার রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে বঙ্গবন্ধু-১ স্যাটেলাইটের সফল উৎক্ষেপণ উদ্যাপন এবং ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে গাজীপুর ও বেতবুনিয়ায় ‘সজীব ওয়াজেদ উপগ্রহ ভূ-কেন্দ্রে’র উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী এসব আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
একই অনুষ্ঠানে সজীব ওয়াজেদ জয় বলেছেন, স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণের মাধ্যমে বিশ্বের সামনে বাংলাদেশ আবারও মাথা উঁচু করে দাঁড়াল।
গত ১২ মে ভোররাতে যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডার কেনেডি স্পেস সেন্টার থেকে সফলভাবে উেক্ষপিত হয় বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট। এর দুটি গ্রাউন্ড স্টেশন স্থাপন করা হয়েছে, যার একটি গাজীপুরের জয়দেবপুরে, অন্যটি রাঙামাটির বেতবুনিয়ায়। প্রধানমন্ত্রীর ছেলে ও তাঁর তথ্য-প্রযুক্তি বিষয়ক উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়ের নামে এই দুটি উপগ্রহ ভূ-কেন্দ্রের নামকরণ করা হয়েছে।
ভিডিও কনফারেন্সে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘১৯৭৪ সালের ১৪ জুন জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বেতবুনিয়ায় দেশের প্রথম ভূ-উপগ্রহ কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করে গেছেন। সে পদাঙ্ক অনুসরণ করে আমরা বঙ্গবন্ধু-১ স্যাটেলাইট মহাকাশে সফলভাবে উৎক্ষেপণ করতে পেরেছি। মুজিব থেকে যাত্রা শুরু, সজীবের কাছে আমরা পৌঁছেছি। আমি বিশ্বাস করি, মহাকাশে আমরা পৌঁছে গেছি।’
তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের জনগণ এর সুফল ভোগ করবে। বাংলাদেশের জনগণ এর সকল আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে ব্যাপক অবদান রাখবে। আমরা এগিয়ে যাচ্ছি, এগিয়ে যাব। জাতির পিতা ৭ই মার্চের ভাষণে যে কথা বলেছিলেন, কেউ দাবায়ে রাখতে পারবা না। তাই কেউ আমাদের আর দাবায়ে রাখতে পারবে না।’
নতুন প্রজন্মের মধ্যে মহাকাশ নিয়ে আগ্রহের বিষয়টি উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের সন্তানরা এখন স্পেস বিজ্ঞান সম্পর্কে আগ্রহী হবে।’
শেখ হাসিনা বলেন, দেশের উন্নয়নের স্বার্থে তাঁর সরকারের সময়ই প্রথম ডিজিটাল সিস্টেমের টেলিফোন প্রতিষ্ঠা, বেসরকারি খাতে মোবাইল ফোন, বিদ্যুৎ, টেলিভিশন, রেডিও, বিমান, হেলিকপ্টার উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়। এ ছাড়া সারা দেশে ইউনিয়ন পর্যায়ে ডিজিটাল সেন্টার স্থাপন ও লার্নিং অ্যান্ড আর্নিং প্রকল্পের মাধ্যমে কর্মসংস্থান সৃষ্টির কথাও তুলে ধরেন তিনি।
সরকারপ্রধান বলেন, ‘আমাদের উন্নয়নটা সারা বাংলাদেশব্যাপী। সে লক্ষ্যেই আমরা কাজ করে যাচ্ছি। দেশে একটি গণতান্ত্রিক পরিবেশ সৃষ্টি করা এবং মানুষের ভোট ও ভাতের অধিকার নিশ্চিত করার মাধ্যমে অর্থনৈতিক উন্নয়ন—এটাই আমাদের লক্ষ্য।’
স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ ছাড়াও পরমাণু বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের মাধ্যমে পরমাণু ক্লাবে বাংলাদেশের যুক্ত হওয়ার কথাও বলেন প্রধানমন্ত্রী। বাংলাদেশের চাঁদে যাওয়ার স্বপ্নও একদিন বাস্তবায়ন হবে বলে মনে করেন শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, ‘আমরাও একদিন চাঁদের দেশে চলে যেতে পারব। আগে চাঁদের দেশের স্বপ্ন দেখতাম। এখন চাঁদের দেশে পৌঁছানোর সম্ভাবনাও তৈরি হয়েছে। এ ক্ষেত্রে আমরা আরো একধাপ এগিয়ে গেলাম। আজ বিশ্বটা আমাদের হাতের মুঠোয়।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আজ আমরা উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে মর্যাদা পেয়েছি বিশ্বে। এই মর্যাদা ধরে রেখে দেশকে আমরা এগিয়ে নিয়ে যেতে চাই এবং আমরা তা পারব এ বিশ্বাস আমাদের আছে। বাংলাদেশ যে আজ এগিয়ে যাচ্ছে এই গতিধারাটা যেন অব্যাহত থাকে।’
সাবমেরিন কেবলে যুক্ত না হওয়ায় তখনকার বিএনপি নেতৃত্বাধীন সরকারের সমালোচনা করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘এখন দুটি সাবমেরিন কেবল আছে। স্যাটেলাইট হয়ে গেল। আধুনিক প্রযুক্তি শিক্ষাটা আমরাই প্রথম শুরু করেছিলাম।’
সরকারের আশা, বর্তমানে বিদেশি স্যাটেলাইটের ভাড়া বাবদ যে ১৪ মিলিয়ন ডলার ব্যয় হয়, এ উপগ্রহের মাধ্যমে সেই অর্থ সাশ্রয় হবে। বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইটে ৪০টি ট্রান্সপন্ডার রয়েছে, যার ২০টি বাংলাদেশের ব্যবহারের জন্য রাখা হবে এবং বাকিগুলো ভাড়া দিয়ে বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের পরিকল্পনা রয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘স্যাটেলাইটের মাধ্যমে দেশের মানুষ শিক্ষা, স্বাস্থ্য থেকে শুরু করে সব ধরনের উপকারিতা পাবে, যা মানুষের জীবনমানকে আরো উন্নত করবে। শিক্ষার দিকেও বিরাট সুযোগ সৃষ্টি হবে।’
অনুষ্ঠানে স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণের কথা উল্লেখ করে সজীব ওয়াজেদ জয় বলেন, ‘গর্বেরও তো একটা বিষয় আছে। সারা বিশ্বের সামনে আমরা আরেকটি কারণে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়েছি। আমাদের আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর আমরা বিশ্বের সামনে বারবার বিভিন্ন কারণে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে পেরেছি।’
বিএনপি-জামায়াতের শাসনের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, তখন বাংলাদেশকে দুর্নীতিতে চ্যাম্পিয়ন বলা হতো, ‘জঙ্গিবাদী দেশ হয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ’ এবং ‘এটা পাকিস্তান হয়ে যাচ্ছে, একটা ব্যর্থ রাষ্ট্র হয়ে যাচ্ছে’ বলে পরিচিতি দেওয়া হতো।
জয় বলেন, ‘সেখান থেকে আমাদের আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় এসে একেকটি বিষয় নিয়ে—শিক্ষা, স্বাস্থ্য প্রতিটি ক্ষেত্রে পুরস্কার পেয়ে বাংলাদেশ এখন দক্ষিণ এশিয়ায় অন্যতম অগ্রগামী দেশ হিসেবে পরিচয় পায়।’
জয় বলেন, আধুনিক দেশ হিসেবে গড়ে তুলতে বিশ্বের সঙ্গে বাংলাদেশের গ্রাম-শহরের সব মানুষের সংযোগ ঘটাতে হবে। আর এ ক্ষেত্রে স্যাটেলাইট ভূমিকা রাখবে।
ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্য-প্রযুক্তি মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বারের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত, তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু ও তথ্য-প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলকও বক্তব্য দেন।
অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে ভিডিও কনফারেন্সে গাজীপুর গ্রাউন্ড স্টেশন থেকে জেলা প্রশাসক দেওয়ান মুহাম্মদ হুমায়ুন কবীর যুক্ত হন। গাজীপুর প্রান্তে স্থানীয় সংসদ সদস্য জাহিদ আহসান রাসেল, ঢাকা বিভাগীয় কমিশনার কে এম আলী আজম, পুলিশের ঢাকা রেঞ্জের ডিআইজি আব্দুল্লাহ আল মামুন, গাজীপুর জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আখতারউজ্জামান, গাজীপুরের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ, গাজীপুর মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট আজমত উল্লাহ খান, জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ইকবাল হোসেন সবুজ প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। উপগ্রহ কেন্দ্রের প্রকৌশলী আসাদুজ্জামান রনি প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে ভিডিও কনফারেন্সে কথা বলেন।
বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট দেশের উন্নয়নে ভূমিকা রাখবে
পূর্ববর্তী পোস্ট