দেশের খবর: পাবনার সাংবাদিক সুবর্ণা আক্তার নদীকে পারিবারিক বিরোধের জেরে হত্যা করা হয়েছে বলে পুলিশ জানিয়েছে।
এ ঘটনায় সুবর্ণার সাবেক শ্বশুর আবুল হোসেনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। মামলা করেছে নিহতের পরিবার।
জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার গৌতম কুমার বিশ্বাস বলেন, “আমরা ইতোমধ্যেই নিশ্চিত হয়েছি যে পারিবারিক ও ব্যক্তিগত বিরোধের জেরে তাকে হত্যা করা হয়েছে। সংবাদ সংক্রান্ত কোনো বিষয় এখানে নেই।”
বেসরকারি টেলিভিশন আনন্দ টিভির পাবনা প্রতিনিধি সুবর্ণাকে (৩২) মঙ্গলবার রাতে শহরের মজুমদারপাড়ায় তার বাড়িতে গিয়ে কুপিয়ে হত্যা করে একদল দুর্বৃত্ত।
পুলিশ কর্মকর্তা গৌতম বলেন, হত্যার ঘটনায় সুবর্ণার মা মর্জিনা খাতুন সদর থানায় মামলা করেছেন। সুবর্ণার সাবেক স্বামী রাজিব হোসেন ও সাবেক শ্বশুর আবুল হোসেনসহ তিনজনের নাম উল্লেখ করার পাশাপাশি অজ্ঞাত আরও কয়েকজনকে আসামি করা হয়েছে।
“আবুল হোসেনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। অন্যদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে। পুলিশের সব ইউনিট ঘটনার পর থেকেই মাঠে কাজ করছে প্রকৃত ঘটনা উদঘাটনের জন্য। ইতোমধ্যেই আমরা কিছু চমকপ্রদ তথ্য পেয়েছি। তা তদন্তের স্বার্থে এই মুহূর্তে প্রকাশ করা হচ্ছে না।”
আবুল হোসেন ‘ইদ্রাল ফার্মাসিউটিক্যাল’ নামে স্থানীয় একটি আয়ুর্বেদি ওষুধ কারখানার মালিক। তাছাড়া শহরে তার ‘শিমলা ডায়াগনস্টিক অ্যান্ড হাসপাতাল’ নামে ১০ তালা একটি স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠান রয়েছে।
রাজিব হোসেন বাবার প্রতিষ্ঠানে কাজ করেন।
মামলার বাদী মর্জিনা খাতুন অভিযোগ করেন, “সুবর্ণাকে তার সাবেক শ্বশুর আবুল হোসেন ও সাবেক স্বামী রাজিব হোসেন পরিকল্পিতভাবে হত্যা করেছেন।”
রাজীবের সঙ্গে সুবর্ণার বছর দুয়েক আগে বিয়ে হয় জানিয়ে সুবর্ণার বোন চম্পা খাতুন বলেন, বছর দেড়েক আগে ছাড়াছাড়ি হলে সুবর্ণা পাবনার নারী ও শিশুনির্যাতন দমন আইনে আদালতে মামলা করেন। এ মামলার আসামি রাজিব ও তার বাবা আবুল হোসেনসহ তিনজন।
“মঙ্গলবার এ মামলায় সাক্ষ্য দেন সুবর্ণা। মামলায় ফেঁসে যাওয়ার আশঙ্কায় আসামিরা পরিকল্পিতভাবে সুবর্ণাকে হত্যা করেছেন। তাকে তারা বিভিন্নভাবে ভয়ভীতি দেখিয়ে আসছিলেন।”
রাজিব ছিলেন সুবর্ণার দ্বিতীয় স্বামী। সুবর্ণা শহরের মজুমদারপাড়ায় ভাড়া বাসায় তার প্রথম পক্ষের মেয়ে (৯) ও মাকে নিয়ে থাকতেন।
সুবর্ণা টিভি সাংবাদিকতার পাশাপাশি স্থানীয়ভাবে ‘দৈনিক জাগ্রত বাংলা’ নামে অনলাইন সংবাদ প্রকাশক ও সম্পাদক ছিলেন।
হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদ ও বিচার দাবিতে পাবনার গণমাধ্যমকর্মীরা মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেছেন।
বুধবার দুপুর ১২টায় পাবনা প্রেসক্লাবের সামনে এ কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হয়। মানববন্ধনে শতাধিক সাংবাদিক ও সাংস্কৃতিক কর্মী উপস্থিত ছিলেন।
তথ্যমন্ত্রীর নিন্দা
সাংবাদিক সুবর্ণা হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় তীব্র নিন্দা ও ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু।
এক বিবৃতিতে তিনি বলেন, “আমি এ মর্মান্তিক ঘটনায় অত্যন্ত ব্যথিত এবং ক্ষুব্ধ। হত্যাকারীদের অতিদ্রুত চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনার জন্য আমি আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সর্বোচ্চ তৎপরতার আহ্বান জানাই।”
হত্যাকাণ্ডের কারণ উদঘাটন এবং দোষীদের দ্রুত বিচারের আওতায় আনার বিষয়ে পাবনার জেলা প্রশাসক ও পাবনা প্রেসক্লাবের সভাপতির সঙ্গেও টেলিফোনে কথা বলেছেন তথ্যমন্ত্রী।