দেশের খবর: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি আগামী ১০ সেপ্টেম্বর ভিডিও কনফারেন্সে যুক্ত হচ্ছেন। ঢাকা ও নয়াদিল্লির কূটনৈতিক সূত্রগুলো জানায়, সেদিন ভারত থেকে বাংলাদেশে আরো ৫০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ সরবরাহ শুরু হবে। শেখ হাসিনা ও নরেন্দ্র মোদি আনুষ্ঠানিকভাবে তা উদ্বোধন করবেন। নতুন করে ৫০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ ভারতের পশ্চিমবঙ্গের বহরমপুর গ্রিড থেকে কুষ্টিয়ার ভেড়ামারার আন্ত বিদ্যুৎ সংযোগ গ্রিডে যুক্ত হবে। এই ৫০০ মেগাওয়াটের মধ্যে ৩০০ মেগাওয়াট আসবে ভারতের সরকারি খাত ‘ন্যাশনাল থার্মাল পাওয়ার প্লান্ট’ (এনটিপিসি) থেকে। অন্য ২০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আসবে ভারতের বেসরকারি খাত ‘পাওয়ার ট্রেডিং করপোরেশন’ (পিটিসি) থেকে।
জানা গেছে, বর্তমানে ভারত থেকে আমদানি করা বিদ্যুতের পরিমাণ ৬৬০ মেগাওয়াট। এর মধ্যে ৫০০ মেগাওয়াট পশ্চিমবঙ্গের বহরমপুর থেকে কুষ্টিয়ার ভেড়ামারায় যুক্ত হয়েছে। বাকি ১৬০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ ভারতের ত্রিপুরা রাজ্য থেকে কুমিল্লায় বিদ্যুৎ গ্রিডে যুক্ত হয়েছে।
উল্লেখ্য, ২০১৩ সালে ভারত থেকে প্রথমবারের মতো বিদ্যুৎ আমদানি শুরু হয় কুষ্টিয়ার ভেড়ামারা দিয়ে। পরের বছর দুই দেশের বিশেষজ্ঞদের সমন্বয়ে গঠিত যৌথ স্টিয়ারিং কমিটি ভেড়ামারা আন্ত সংযোগ গ্রিডের সক্ষমতা বাড়াতে উদ্যোগ নেয়। এরপর নতুন করে আরো ৫০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানির জন্য নতুন সাবস্টেশন নির্মাণ ও এর সঙ্গে ভেড়ামারা-ঈশ্বরদী ২৩০ কিলোভোল্ট (কেভি) ‘ডাবল সার্কিট সঞ্চালন লাইন’ নির্মাণ করা হয়েছে।
জানা গেছে, গত ১১ এপ্রিল সরকারি ক্রয়সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি ভারতের এনটিপিসি ও পিটিসি থেকে ৫০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ কেনার প্রস্তাব অনুমোদন করে। এর আওতায় আগামী বছরের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত স্বল্প মেয়াদে এবং ২০২০ সালের ১ জানুয়ারি থেকে ২০৩৩ সালের ৩১ মে পর্যন্ত দীর্ঘ মেয়াদে বিদ্যুৎ আমদানির কথা রয়েছে। এনটিপিসি থেকে আমদানি করা বিদ্যুতের দাম স্বল্প মেয়াদে ইউনিটপ্রতি চার টাকা ৭১ পয়সা এবং দীর্ঘ মেয়াদে ছয় টাকা ৪৮ পয়সা ধরা হয়েছে।
অন্যদিকে পিটিসি থেকে আমদানি করা বিদ্যুতের দাম স্বল্প মেয়াদে ইউনিটপ্রতি চার টাকা ৮৬ পয়সা ও দীর্ঘ মেয়াদে ছয় টাকা ৫৪ পয়সা ধরা হয়েছে।
গত ফেব্রুয়ারি মাসে ঢাকায় প্রকাশিত ‘বাংলাদেশ-ভারত বিদ্যুৎ বাণিজ্য থেকে অর্থনৈতিক সুবিধা’ শীর্ষক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এই বাণিজ্য দুই দেশের জন্যই লাভজনক। বাংলাদেশের কাছে ভারতের বিদ্যুৎ অন্য যেকোনো উেসর তুলনায় সাশ্রয়ী।
কূটনৈতিক সূত্রগুলো জানায়, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্কের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ দিক। ২০১৩ সালে পশ্চিমবঙ্গ থেকে এবং ২০১৬ সালে ত্রিপুরা থেকে বাংলাদেশে আমদানি শুরু হয়েছে। সাতক্ষীরা রামপালে বাংলাদেশের বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড ও ভারতের এনটিপিসির মধ্যে সমান (৫০:৫০) অংশীদারি এক হাজার ৩২০ মেগাওয়াট কয়লাভিত্তিক মৈত্রী তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ করা হচ্ছে। গত বছর এপ্রিল মাসে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারত সফরের সময় বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতীয় সরকারি/বেসরকারি কম্পানিগুলো তিন হাজার ৬০০ মেগাওয়াটেরও বেশি বিদ্যুৎ উৎপাদন/সরবরাহ/অর্থায়ন বিষয়ে চুক্তি সই করে।
বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে জ্বালানি খাতে সহযোগিতার ক্ষেত্রেও গত দুই বছরে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়েছে। ভারতের সরকারি খাতের অনেক প্রতিষ্ঠান যেমন ইন্ডিয়ান ওয়েল করপোরেশন, নুমালিগড় রিফাইনারি লিমিটেড, পেট্রোনেট এলএনজি লিমিটেড তেল-গ্যাস খাতে বাংলাদেশি প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে কাজ করছে। নুমালিগড় রিফাইনারি লিমিটেড থেকে বাংলাদেশে ডিজেল সরবরাহের জন্য ভারতের পশ্চিমবঙ্গের শিলিগুড়ি থেকে বাংলাদেশের দিনাজপুর জেলার পার্বতীপুর পর্যন্ত ভারত-বাংলাদেশ মৈত্রী পাইপলাইন নির্মাণে অর্থায়ন করতেও ভারত রাজি হয়েছে। এ ছাড়া ভারতের তেল ও প্রাকৃতি গ্যাস করপোরেশন (ওএনজিসি) বিদেশ লিমিটেড অয়েল ইন্ডিয়া লিমিটেডের সঙ্গে কনসোর্টিয়ামের ভিত্তিতে দুটি ব্লকে অনুসন্ধান চালাচ্ছে।
আখাউড়া-আগরতলা রেললাইন প্রকল্প উদ্বোধনের অপেক্ষায়
ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রতিনিধি জানান, আখাউড়া-আগরতলা রেললাইন প্রকল্পের বাংলাদেশ অংশের কাজের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন হতে যাচ্ছে আগামী ১০ সেপ্টেম্বর। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে কাজের উদ্বোধন করার কথা রয়েছে।
ভিডিও কনফারেন্স উপলক্ষে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া রেলওয়ে জংশন স্টেশনে এক সুধী সমাবেশ আয়োজনেরও কথা রয়েছে। ওই সুধী সমাবেশে বাংলাদেশ সরকারের একাধিক মন্ত্রীও উপস্থিত থাকতে পারেন বলে আশা প্রকাশ করা হচ্ছে।
রেলপথ মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. মোফাজ্জেল হোসেন এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন। ভিডিও কনফারেন্স উপলক্ষে সাইট পরিদর্শন করতে গত ১ সেপ্টেম্বর আখাউড়ায় এসে তিনি সাংবাদিকদেরকে এসব তথ্য জানান।
আখাউড়া-আগরতলা রেললাইন প্রকল্পটি নির্মাণ হলে দুই দেশের মধ্যে সম্পর্ক আরো জোরদার হবে বলে আশা করা হচ্ছে। প্রথম দিকে পণ্যবাহী ট্রেন চলাচল করতে পারে বলে সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে ধারণা পাওয়া গেছে।
২০১৬ সালের ৩১ জুলাই একই প্রকল্পের ভারতের আগরতলা অংশে কাজের উদ্বোধন করেন বাংলাদেশের রেলপথমন্ত্রী মো. মুজিবুল হক, ভারতের রেলপথমন্ত্রী সুরেশ প্রভাকর প্রভু। এরই মধ্যে ভারতের অংশে রেলপথ নির্মাণের কাজ অনেক দূর এগিয়েছে।