এটি একটি অতি সাধারণ জন্মগত ত্রুটি। এটি একপাশে বা উভয় পাশে হতে পারে।
লক্ষণ: অন্ডকোষের থলি একপাশে বা উভয় পাশে খালি থাকে, এছাড়া সাধারণত অন্যকোন উপসর্গ থাকে না। তবে অন্ডকোষ পাক খেলে বা ঘুরে গেলে এটির বর্তমান অবস্থানে ফোলা বা প্রচন্ড ব্যথা হতে পারে।
কেনো হয়: ছেলে বাচ্চা যখন মায়ের জরায়ুতে থাকে তখন তার অন্ডকোষ দুটি ঐ বাচ্চার পেটের ভিতর অবস্থান করে। সময়ের সাথে সাথে এদুটি নিচের দিকে নামতে থাকে। জন্মের আগেই এরা অন্ডকোষের থলিতে প্রবেশ করে। কিন্তু দূর্ভাগ্যবশতঃ কারো কারো ক্ষেত্রে অন্ডকোষের এই নামার প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্থ হয়, ফলে তারা এই নামার পথের কোন স্থানে আটকে যায়।
অবস্থান: আটকে যাওয়া অন্ডকোষ সবচেয়ে বেশি পাওয়া যায় কুচকীতে। তা ছাড়া পেরিনিয়াম এমনকি পেটের ভিতরেও থাকতে পারে। কদাচিৎ এটি অনুপস্থিত থাকতে পারে।
সহায়ক সমস্যাবলী:
* হার্ণিয়া বা কুচকিতে ফোলা।
* হাইপোসপ্যাডিয়াস বা প্রস্রাবের ছিদ্র পুরষাঙ্গের নিচে
* যৌনাঙ্গের অস্বাভাবিকতা
চিকিৎসা: এরোগের একমাত্র চিকিৎসা হলো অপারেশন। বাচ্চার ৬মাস থেকে ১ বছর বয়সের মধ্যে অবশ্যই অপারেশন করিয়ে নেওয়া উচিৎ।
অনেকেরই ধারণা, বাচ্চার যেহেতু অন্যকোন সমস্যা নাই সুতরাং বাচ্চা বড় হলে এ অপারেশন করিয়ে নিলেই চলবে। অনেক সময় অনেক কোয়ালিফাইড ডাক্তারও এধারনা দেন কিন্তু এটি বাচ্চার জন্যে ভবিষ্যতে বিরাট ক্ষতির কারণ হতে পারে।
জটিলতা: সময়মত (৬ মাস-১ বছর) অপারেশন না করালে নিম্নোক্ত সমস্যা হতে পারে।
* বন্ধ্যাত্ব: অন্ডকোষের প্রধান কাজ শুক্র উৎপাদন যা দিয়ে ভবিষ্যত বংশবৃদ্ধি হয়। শুক্র উৎপাদনের জন্য শরীরের ভেতরের তাপমাত্রার চেয়ে কম তাপমাত্রা প্রয়োজন, যেটা অন্ডকোষের থলিতে বিদ্যমান। কিন্তু অন্ডকোষ না নামলে অর্থাৎ পেটের ভিতর বা কুচকিতে তাপমাত্রা বেশি থাকার কারণে এর বৃদ্ধি প্রক্রিয়া ব্যহত হয়। ফলে ভবিষ্যতে শুক্র উৎপাদন ব্যহত হয়ে সন্তান জন্মদানের ক্ষমতা নষ্ট হতে পারে।
* অন্ডকোষ ঘুরে যাওয়া বা পাক খাওয়া: এরোগের ক্ষেত্রে অন্ডকোষ পাক খাওয়ার প্রবনতা স্বাভাবিক অবস্থার তুলনায় বেশি থাকে। এটি একটি অত্যন্ত জরুরী অবস্থা। এক্ষেত্রে সাথে সাথেই অপারেশন প্রয়োজন, নইলে অন্ডকোষে পচন ধরতে পারে। পচন ধরার সর্বনিম্ন সময় ৬ ঘন্টা।
* অন্ডকোষে আঘাত পাওয়া
* ইনগুইনাল হার্ণিয়া উদ্ভব হওয়া
* দেরীতে অপারেশন করার কারণে অন্ডকোষকে নির্দিষ্ট স্থানে (অন্ডকোষের থলিতে) প্রতিস্থাপনে ব্যর্থ হওয়া: বাচ্চার বয়স বৃদ্ধির সাথে সাথে অন্য সব অংশের মত পেটের নিম্মাংশও বৃদ্ধিপ্রাপ্ত হয় কিন্তু কুচকিতে অবস্থানরত অন্ডকোষের সাথে লাগানো থাকা কর্ড উচ্চ তাপমাত্রায় অন্যান্য টিস্যুর সাথে কুন্ডলী পাকানো অবস্থায় থাকে। এ কারণে কর্ডের দৈর্ঘ্যবৃদ্ধি হয় না। ফলে অপারেশন করতে যত দেরী হবে কর্ড সে তুলনায় ততই ছোট হতে থাকবে। এ কারণে একটি মাত্র অপারেশনে অন্ডকোষ নামানো সফল না হতে পারে। তখন দুই বা ততধিক অপারেশন লাগতে পারে, এমনকি অন্ডকোষটি কেটে বাদ দিতে হতে পারে।
* মানসিক সমস্যা (হতাশায় ভোগা)
* অন্ডকোষে ক্যান্সার হওয়া
ডাঃ শেখ আবু সাঈদ শুভ
সহকারী অধ্যাপক, শিশু সার্জারী বিভাগ
সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল, সাতক্ষীরা।
চেম্বার: আনোয়ারা মেমোরিয়াল ক্লিনিক, খুলনা রোড, সাতক্ষীরা।
ফোন: ০১৭২৯-৫৭৬ ৫৭৬