নিজস্ব প্রতিবেদক : সাতক্ষীরার চাঞ্চল্যকর গৌতম হত্যা মামলায় পুলিশের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন তার বাবা ইউপি সদস্য গনেশ চন্দ্র সরকার। বৃহস্পতিবার সাতক্ষীরা প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে তিনি তার পুত্র হত্যার সঠিক তদন্ত ও বিচার দাবি করে বলেন এখন পর্যন্ত অন্যান্য আসামিদের গ্রেফতার করা হয়নি। হত্যার পর থেকে তিনি আতংকিত হয়ে আছেন বলে সংবাদ সম্মেলনে উল্লেখ করেন। নিহত গৌতম সরকারের বাবা গনেশ সরকার বলেন তার এলাকা সাতক্ষীরা সদর উপজেলার ঘোনা ইউনিয়নের মহাদেবনগর গ্রামে নুর মোহাম্মদ মুক্ত, কবিরুল ইসলাম মিঠু, জামশেদ ও সাজু হোসেনসহ কয়েক যুবক চাঁদাবাজি করতো। তারা বিভিন্ন ধরনের সন্ত্রাস ছাড়াও নানা অপরাধ করতো। তিনি এর প্রতিবাদ করে আসছিলেন। এতে তারা তার ওপর ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে। তিনি বলেন গত ১০ ডিসেম্বর পুলিশ চাঁদাবাজ জামশেদকে ধরে নিয়ে যায়। তাকে ছাড়ানোর ব্যাপারে তিনি সহযোগিতা করতে রাজী হননি। তিনি অভিযোগ করে বলেন তিন দিন পর ১৩ ডিসেম্বর নুর মোহাম্মদ মুক্ত ও মাহমুদপুর গ্রামের আবদুর রহমান ৩৫ হাজার টাকার বিনিময়ে সাতক্ষীরা থানা থেকে মুক্ত করে আনে। বাড়ি ফিরেই জামশেদ তাকে মোবাইল ফোনে হুমকি দিয়ে জানায়, আমার যে টাকা খরচ হয়েছে তোর কাছ থেকে তার বেশি টাকা আদায় করে ছাড়বো। গনেশ সরকার বলেন ওই রাতেই তার ছেলে মাহমুদপুর সীমান্ত কলেজের ছাত্র গৌতম সরকারকে সন্ত্রাসীরা টেলিফোনে ডেকে নিয়ে অপহরন করে। রাতভর তার কোনো সন্ধান পাওয়া যায়নি। পরদিন সকালে গৌতমের ফোন থেকে তার কাছে ফোন করে বলা হয়, তোর ছেলেকে জীবিত পেতে হলে দশ লাখ টাকা চাঁদা নিয়ে আয়। বিষয়টি থানা ও চেয়ারম্যানকে জানিয়ে তিনি সাতক্ষীরা সদর থানায় একটি জিডি করেন। তিনি বলেন অজ্ঞাত সন্ত্রাসীরা ছেলেকে নিতে তাকে সীমান্তবর্তী বেড়ি বাঁধের ওপর যেতে বলে। তিনি নিরাপত্তার কথা ভেবে সেখানে যাননি। তিনি বলেন পরে তাদের কথা মতো তিনি পুলিশসহ কয়েকজন ইউপি সদস্যকে নিয়ে খাসখামার বিলে অবস্থান নেন। এ সময় সেখানে অন্যতম ঘাতক শাহাদাত ও আলি আহমেদ শাওন আসা মাত্রই তাদের আটক করে পুলিশ। তাদের কথা অনুযায়ী সাজু হোসেনকে কোমরপুর গেট থেকে এবং নাজমুল হোসেনকে কালিগঞ্জের পাইকাড়া গ্রাম থেকে আটক করা হয়। এ সময় তারা স্বীকার করে যে ঘটনার রাতে মহসিনের বাড়িতে খাসির মাংস দিয়ে ভাত খায়। এ সময় শাহাদাত, শাওন, সাজু, নাজমুল, ওমর ফারুক, জামশেদ, মুক্ত ও মিঠুসহ ১১ জন ছিল। পরে তারা তাকে হত্যা করে। গনেশ সরকার তার লিখিত বক্তব্যে পুলিশের প্রশ্নবিদ্ধ ভূমিকার উল্লেখ করে আরও বলেন সদর থানার ওসি তদন্ত আলমগীর কবির ও এস আই আসাদুজ্জামান তার দেওয়া এজাহার থেকে জামশেদের নাম বাদ দেওয়ার চেষ্টা করেন। পরে আরও কয়েকজনের নাম দিয়ে তিনি থানায় একটি সম্পূরক এজাহার দাখিল করেন। তিনি বলেন পুলিশ এ ব্যাপারে যথার্থ কাজ করছে না। এমনকি আসামিদের কাছ থেকে ১৬১ ধারায় স্বীকারোক্তি পাবার পরও পুলিশ ১৬৪ ধারার স্বীকারোক্তি নিজের ইচ্ছা মাফিক করিয়ে নিয়েছে। গনেশ সরকার ওসি তদন্ত আলমগীর কবিরসহ সংশ্লিষ্ট পুলিশ কর্মকর্তাদের প্রত্যাহার দাবি করে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহনের আহবান জানান। গৌতমের বাবা ঘোনা ইউপি সদস্য গনেশ সরকার কান্নাজড়িত কন্ঠে বলেন সন্ত্রাসীরা আমার কাছে দশ লাখ টাকার বিনিময়ে আমার ছেলেকে ছেড়ে দেওয়ার কথা মোবাইল ফোনে জানিয়েছিল। বিষয়টি এএসপি সার্কেল আতিকুল ইসলাম, ওসি ফিরোজ হোসেন মোল্লাসহ সকল কর্মকর্তাকে তার রেকর্ডকরা ভয়েস শুনিয়ে দেওয়া হয়। সে অনুযায়ী তাদের লোকেশন খুঁজে বের করার চেষ্টাও করছিল পুলিশ। তিনি বলেন দশ লাখ টাকা দাবির ভয়েস শুনবার পরও সাতক্ষীরার পুলিশ সুপার কিভাবে বলেন যে গৌতমকে মাত্র ৫০ হাজার টাকার জন্য খুন করা হয়েছে। তিনি বলেন নাজমুল পুলিশ ও ম্যাজিস্ট্রেটকে জানিয়েছে যে শাহাদাত গৌতমকে খুন করে। এসব জানার পরও পুলিশ সুপার কিভাবে বললেন যে হাত পা বাঁধা ও মুখে গুলের কোটা রাখা গৌতম গড়াতে গড়াতে পুকুরে পড়ে মারা গেছে। তিনি প্রশ্ন তুলে বলেন এতে কি এই বুঝায়না যে পুলিশ এই হত্যার ঘটনাকে ভিন্ন দিকে নিয়ে যাচ্ছে এবং আসামিদের রক্ষার চেষ্টা করছে। তিনি দাবি করেন যে আসামিরা ম্যাজিস্ট্রেটের সামনে ১৬৪ ধারায় যে জবানবন্দি দিয়েছে তা পুলিশের শেখানো। গনেশ সরক্রা আরও বলেন আরও যেসব ঘাতক এখনও পালিয়ে রয়েছে পুলিশ তাদের কৌশলে আড়াল করবার চেষ্টা করছে। এমনকি জামশেদসহ কয়েকজনকে ধরবার নামই করছে না। এতোসবের পরও আসামি সাজুর মা ফজিলা খাতুনকে থানায় এনে দুদিন পর ছেড়ে দেওয়া হয়। তবে তাকে ফের গ্রেফতার করা হয়েছে বলে জানান তিনি। সংবাদ সম্মেলনে ঘোনা ইউপি চেয়ারম্যান অধ্যক্ষ ফজলুর রহমানসহ সদস্য রাবেয়া পারভিন, তাসলিমা খাতুন, নাজমিরা খাতুন, স্বপন ঘোষ, ভৈরব চন্দ্র, মোত্তাসিম বিল্লাহ নয়ন, রবিউল ইসলাম, আবুল বাসার, আবু সাঈদ মনোয়ার, আবদুল করিম, শাহীন রহমান ও নিহত গৌতমের বাবা গনেশ সরকার নিজেই উপস্থিত ছিলেন। এ সময় তিনি হত্যার বর্ননা দেন। এই হত্যার বিষয়ে সাতক্ষীরার পুলিশ সুপার আলতাফ হোসেন সম্প্রতি এক প্রেসব্রিফিংয়ে যেসব কথা বলেছেন তা প্রত্যাখ্যান করতেই গনেশ সরকার এই সংবাদ সম্মেলন করেন বলে জানান।
গত ১৩ ডিসেম্বর সাতক্ষীরার মাহমুদপুর সীমান্ত কলেজের দ্বিতীয় বর্ষ ¯œাতকের ছাত্র গৌতম সরকার অপহৃত হন। পরে তার হাত পা বেঁধে ও মুখে গুলের কৌটা গুঁজে দিয়ে ঘাতকরা হত্যা করে লাশ মহাদেবনগরের একটি পুকুরে বস্তায় পুরে ইট দিয়ে রশিতে বেঁধে রাখে। এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত শাহাদাত, নাজমুল, সাজু হোসেন, আলি আহমেদ শাওন, মহসিন কবির ও ফজিলা খাতুন গ্রেফতার হয়ে আছে। াদের মধ্যে শাহাদাত ও নাজমুল হত্যার দায় স্বীকার করে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছে।
পূর্ববর্তী পোস্ট