অনলাইন ডেস্ক: জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে শিগগিরই সারা দেশে অবৈধ অস্ত্রের বিরুদ্ধে সাঁড়াশি অভিযান শুরু হতে পারে। গোয়েন্দা সংস্থাগুলো এরই মধ্যে অবৈধ অস্ত্রধারী ও চোরাকারবারিদের তথ্য সংগ্রহ করেছে বলে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে। সূত্র মতে, নির্বাচনের আগে অবৈধ অস্ত্রের সরবরাহ বাড়ছে বলে আঁচ পাচ্ছে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। আর এ কারণে সারা দেশে অবৈধ অস্ত্র ব্যবসায়ীদের তালিকা তৈরি করে অভিযানে নামতে যাচ্ছে তারা।
গত ১৫ অক্টোবর এক অনুষ্ঠানে র্যাবের মহাপরিচালক বেনজীর আহমেদ জানিয়েছেন, নির্বাচন সামনে রেখে অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারে অভিযান চালানো হবে। আগের দিন পুলিশ সদর দপ্তরে অর্ধবার্ষিকী অপরাধ পর্যালোচনা সভায় আইজিপি ড. জাবেদ পাটোয়ারী বলেন, নির্বাচন ঘিরে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি বা অরাজকতা সৃষ্টির কোনো সুযোগ কাউকে দেওয়া হবে না।
এরই মধ্যে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ সন্ত্রাসী ও অস্ত্রবাজদের তালিকা করে তাদের গ্রেপ্তারের জন্য মাঠে নেমেছে। কিছুদিন আগে ঢাকা মহানগর পুলিশ কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়া অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারের জন্য নির্দেশ দিয়েছেন। সেই নির্দেশনা অনুযায়ী ডিবি অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারে নেমেছে।
ডিবির যুগ্ম কমিশনার মাহবুব আলম বলেন, ‘আমরা অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারের নির্দেশনা পেয়েছি। ডিবি অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারে কাজ করছে।’ এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘পরে হয়তো যৌথভাবে অভিযান শুরু হবে।’
গত ৭ অক্টোবর কক্সবাজারের মহেশখালী থেকে অস্ত্র নিয়ে ঢাকার দিকে যাচ্ছিল দুই অস্ত্র ব্যবসায়ী। রাস্তায় যাতে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে ধরা পড়তে না হয় সে জন্য মাইক্রোবাসের (ঢাকা মেট্রো চ-১৩-৭৭৩৭) সামনে লাগিয়েছিল স্বরাষ্ট্র ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ভুয়া স্টিকার। কিন্তু র্যাব-৭-এর সদস্যরা চট্টগ্রাম শহর থেকে আলমগীর হোসেন ও আল শাহরিয়ার নামের দুই অস্ত্র ব্যবসায়ীকে গ্রেপ্তার করে। গাড়ি থেকে আটটি আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধার করা হয়। এ ছাড়া ২০ হাজার পিস ইয়াবাও উদ্ধার করে র্যাব। জিজ্ঞাসাবাদে অস্ত্র ব্যবসায়ীরা জানায়, সামনে নির্বাচনে অস্ত্রের দাম বেশি পাওয়ার কারণে তারা এ অস্ত্রগুলো মহেশখালী থেকে সংগ্রহ করে ঢাকায় মজুদ ও বিক্রির উদ্দেশ্যে নিয়ে যাচ্ছিল। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, এজাতীয় অস্ত্র ব্যবসায়ীদের গ্রেপ্তারের জন্য এরই মধ্যে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী প্রস্তুতি নিয়েছে।
চট্টগ্রামের র্যাব-৭-এর প্রধান লেফটেন্যান্ট কর্নেল মিফতা উদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘নির্বাচনের সময় অবৈধ অস্ত্র বেড়ে যায়। যাদের আমরা ধরেছি তারা জানিয়েছে, নির্বাচন উপলক্ষে অস্ত্র বিক্রির জন্য নিয়ে যাচ্ছিল।’ এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘অবৈধ অস্ত্রের বিরুদ্ধে অভিযান চলছে। আমাদের দায়িত্বপূর্ণ এলাকায় অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারে তৎপরতা অনেক বাড়ানো হয়েছে।’
এক পুলিশ কর্মকর্তা জানান, পূজায় নিরাপত্তা দেওয়ার পর আশা করা যাচ্ছে, এ সপ্তাহেই অবৈধ অস্ত্র, অস্ত্রধারীদের গ্রেপ্তারে অভিযান পরিচালনা করা হবে। এক পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, একসময় চিহ্নিত সন্ত্রাসী ও তাদের সাঙ্গোপাঙ্গরা অবৈধ অস্ত্র ব্যবহার করত। এখন আধিপত্য বিস্তার বা প্রতিপক্ষ দমন করার জন্যও অবৈধ অস্ত্র ব্যবহার করতে দেখা যায়।
পুলিশ সদর দপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৭ সাল পর্যন্ত সারা দেশে সাড়ে পাঁচ হাজার অস্ত্র উদ্ধার করা হয়েছে। এসব অস্ত্র উদ্ধারের বিপরীতে দুই হাজার ২০৮টি মামলা দায়ের হয়। তবে উদ্ধার বা আটকের বেশির ভাগ মামলাই বিচারাধীন। সূত্র বলছে, আইনের দীর্ঘসূত্রতার কারণে মামলার বিচারে ধীরগতি এবং সাক্ষ্য-প্রমাণের অভাবে অবৈধ অস্ত্রধারীদের বিচার হচ্ছে না।
গোয়েন্দা সূত্র বলছে, যারা মাদক ব্যবসায়ী বিশেষ করে ইয়াবা চোরাচালানে জড়িত, তাদের অনেকেই অস্ত্র ব্যবসায়ও জড়িত। নির্বিঘ্নে মাদক ব্যবসা করতে অবৈধভাবে অস্ত্র দখলে রেখেছে তারা।