অনলাইন ডেস্ক: ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের ভ্রাতৃপ্রতীম সংগঠন ছাত্রলীগের ২৯তম জাতীয় সম্মেলনের পাঁচ মাস পার হলেও পূর্ণাঙ্গ হয়নি কমিটি। সেপ্টেম্বরের মধ্যে কমিটি করার ঘোষণা দিয়েও তা বাস্তবায়ন করেনি সংগঠনটির দুই শীর্ষ নেতৃত্ব। আগামী জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে কমিটি গঠনে দৃশ্যমান তৎপরতা দেখা যাচ্ছে না। এ অবস্থায় প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সাক্ষাতের পর পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠনে তৎপরতা দৃশ্যমান হয়েছে। আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে কমিটি হবে বলে জানিয়েছেন ছাত্রলীগ সভাপতি রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভন।
ছাত্রলীগ সূত্র বলছে, এরই মধ্যে আওয়ামী লীগের হাইকমান্ডের নির্দেশনায় কমিটি নিয়ে দফায় দফায় বৈঠক করেছেন সংগঠনটির শীর্ষ নেতারা। সার্বিক প্রস্তুতি সম্পন্ন করে শুক্রবার গণভবনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে যেতে পারেন ছাত্রলীগ সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক। পরবর্তী সময়ে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা অনুযায়ী কমিটি পূর্ণাঙ্গ করবেন তাঁরা। তবে কমিটির আকার, পদপ্রত্যাশীদের সর্বোচ্চ বয়স নির্ধারণ, এলাকাভিত্তিক সমীকরণসহ কিছু বিষয় নিয়ে এখনও ছাত্রলীগের পক্ষ থেকে সুস্পষ্ট বক্তব্য পাওয়া যায়নি। ফলে তৃণমূল নেতাকর্মীদের মধ্যেও এসব বিষয় নিয়ে এক ধরনের অস্পষ্টতা তৈরি হয়েছে।
চলতি বছরের ১১ ও ১২ মে ছাত্রলীগের ২৯তম জাতীয় সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। এর পর ৩১ জুলাই ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের নাম ঘোষণা করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এই কমিটি দায়িত্ব গ্রহণের পর ৯০ দিন পার করলেও কেন্দ্রীয় কমিটি পূর্ণাঙ্গ করতে পারেনি। পদপ্রত্যাশীদের কাছ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে নেওয়া হয়নি জীবন বৃত্তান্ত। এর আগে ছাত্রলীগের শীর্ষ নেতৃত্বে আসতে যে জীবন বৃত্তান্ত জমা দেওয়া হয়েছে, সেখান থেকেই পূর্ণাঙ্গ কমিটির জন্য যাচাই-বাছাই করে পদ দেওয়া হবে- ছাত্রলীগের শীর্ষ নেতাদের পক্ষ থেকে এমন বক্তব্য আসলেও তা নিয়ে রয়েছে নানা সমালোচনা। নেতাকর্মীরা বলছেন, ‘তাহলে কি পদপ্রত্যাশী ছাড়া অন্যরা কেন্দ্রে পদ পাবেন না?
এর আগে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) সাংবাদিক সমিতির সঙ্গে এক মতবিনিসময় সভায় ছাত্রলীগ সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানী বলেছিলেন, ‘আমরা আপার (শেখ হাসিনা) সঙ্গে কথা বলে সেপ্টম্বর মাসের মধ্যেই পূর্ণাঙ্গ কমিটি দেব। এই বক্তব্যের আড়াই মাস অতিবাহিত হলেও কোনো কমিটি গঠন করতে পারেনি ছাত্রলীগ। বরং এই বক্তব্যের নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে তৃণমূলে।
অনেকেই আশঙ্কা করছেন, কমিটি নিয়ে এ ধরনের ‘টালবাহানা’ তাঁদের যথাযথ মূল্যায়নের ক্ষেত্রে অন্তরায় হতে পারে।
ছাত্রলীগ সূত্র জানায়, এরই মধ্যে ছাত্রলীগের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদককে কমিটি পূর্ণাঙ্গ করতে প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা একাধিকবার নির্দেশ দিয়েছেন। এরপরে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে একাধিকবার কথা বলেন এই দুই শীর্ষ নেতা। এর বাইরে কয়েক সপ্তাহ আগে ওবায়দুল কাদেরের সঙ্গে ছাত্রলীগের শীর্ষ দুই নেতা ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঁচটি ছাত্রী হলের সভাপতি-সম্পাদক, ইডেন কলেজের সভাপতি-সম্পাদক ও গার্হস্থ্য অর্থনীতি কলেজের সভাপতি-সম্পাদক বৈঠক করেন বলে জানা যায়। সেখানে ছোট আকারের কমিটি গঠনসহ নানা দিক নিয়ে আলোচনা হয়।
এদিকে কমিটির আকার ও পদ নিয়ে ছাত্রলীগের বিভিন্ন পর্যায়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে। কমিটির আকার ছোট হতে পারে- এ ধরনের খবরে অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন অনেকেই। তারা বলছেন, এর আগে যারা গুরুত্বপূর্ণ পদে ছিলেন তাদেরকে পদে না রেখে নিজেদের পছন্দের লোকদের পদায়ন করতেই এমন কৌশল অবলম্বন করা হচ্ছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক গত কমিটির অন্তত দশজন বলেন, কমিটির আকার বেশি ছোট হলে সদ্য সাবেক অনেক কেন্দ্রীয় নেতাকেই পদহীন হতে হবে। যার ফলে তৃণমূলে বড় ধরনের প্রভাব পড়বে।
অন্যদিকে ছাত্রলীগের পর্ণাঙ্গ কমিটিতে স্থান পেতে অপরাধীদের তৎপরতাও দেখা যাচ্ছে। পদ পেতে মরিয়া হয়ে আছেন বিভিন্ন সময়ের বিতর্কিত ও বহিষ্কৃত নেতারাও। মাঠ পর্যায়ে ক্লিন ইমেজের নেতারা বলছেন, এ ধরনের নেতাদের পদে আনলে সংগঠনের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন হবে। এর প্রভাব পড়বে আসন্ন জাতীয় নির্বাচনেও। তাছাড়া, আওয়ামী লীগ শীর্ষ নেতারা অপরাধীদের পদে না আনার নির্দেশ দিয়েছেন। ছাত্রলীগ শীর্ষ নেতারাও অপরাধীদের বিরুদ্ধে কঠোর বলে অবস্থানে আছেন বলে বিভিন্ন সময় বক্তব্য দেন।
এদিকে পূর্ণাঙ্গ কমিটির বিষয়ে বৃহস্পতিবার রাতেও ছাত্রলীগ সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক আলোচনায় বসেছেন বলে জানা যায়। সার্বিক বিষয়ে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভন বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনায় আমরা কাজ করছি। তার নির্দেশনা অনুযায়ী সব হবে। আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে কমিটি দেওয়ার চেষ্টা চলছে।’