খেলার খবর: জিম্বাবুয়ে বোলারদের ভেলকিতে কুপোকাত বাংলাদেশি ব্যাটসম্যানরা। একের পর এক আসছেন আর যাচ্ছেন। যে উইকেটে দেদারসে রান ওঠার কথা, সেখানে টিকে থাকতেই হাপিত্যেশ করে মরছেন। সবশেষ সাজঘরের পথ ধরলেন তাইজুল ইসলাম। সিকান্দার রাজার বলে রেজিস চাকাভাকে ক্যাচ দিয়ে ফিরেছেন তিনি। শেষ খবর পর্যন্ত ১৩১ রানে ৮ উইকেট হারিয়ে গুটিয়ে যাওয়ার অপেক্ষায় টাইগাররা।
নিজেদের প্রথম ইনিংসের শুরুতেই অশুভ ভূত চেপে বসে বাংলাদেশের ঘাড়ে। একের পর এক বেখেয়ালি শট খেলে ফেরেন টপঅর্ডারের ব্যাটসম্যানরা। সূচনালগ্নেই ফিরে যান ইনফর্ম ইমরুল কায়েস। টেন্ডাই চাতারার অফস্টাম্পের বাইরের বল ব্যাট দিয়ে টেনে নিয়ে এসে নিজের স্টাম্প ভাঙেন তিনি। খানিক বাদে কাইল জার্ভিসের বলটি অফস্টাম্পের বাইরে দিয়ে বের হয়ে যাচ্ছিল। তাতে খোঁচা মেরে উইকেটের পেছনে রেজিস চাকাভাকে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন লিটন দাস। দলীয় ১৪ রানে ২ ওপেনার হারিয়ে শুরুতেই ধাক্কা খায় স্বাগতিকরা।
সেই ধাক্কা আরও বড় হয়ে আসে কয়েক মিনিটের ব্যবধানে অযাচিত শট খেলতে গিয়ে নাজমুল হোসেন শান্ত এবং মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ ফিরলে। নিশ্চিতভাবেই চাতারার বলটি অফস্টাম্পের বাইরে দিয়ে বের হয়ে যেত। তবে তর সইনি শান্তর। সেই বলে ব্যাট ছুঁইয়ে চাকাভাকে ক্যাচ দিয়ে আসেন তিনি। এরপর সাজঘরে ফেরেন মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। তার আউটের ধরণটিও ভীষণ দৃষ্টিকটু এবং প্রায় ইমরুলের মতো। চাতারার অফস্টাম্পের বাইরের বল ব্যাট দিয়ে টেনে নিয়ে এসে নিজের স্টাম্প ভাঙেন ভারপ্রাপ্ত অধিনায়ক।
সেই বিপর্যয়ের মধ্যে একটু চেষ্টা করেন মুমিনুল হক। তবে তার প্রচেষ্টাও থামে। সিকান্দার রাজার বলে স্লিপে হ্যামিল্টন মাসাকাদজাকে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন তিনি। এতে পুরোপুরি পথচ্যুত হয় বাংলাদেশ। এ পরিস্থিতিতে লড়তে রোবটের মতো চেষ্টা করেন মুশফিকুর রহিম। কিন্তু বিধিবাম! তাকেও হার মানতে হয়। জার্ভিসের বলে চাকাভার গ্লাভসবন্দি হয়ে ফেরেন তিনি। ফেরার আগে ৫ চারে ৩১ রান করে মিস্টার ডিপেন্ডেবল।
এদিন শুরু থেকেই পথহারা বাংলাদেশ। কোনোভাবে কক্ষপথে ফিরতে পারেননি স্বাগতিক ব্যাটসম্যানরা। যেন প্রথা মেনেই সাজঘরে ফেরেন মেহেদী হাসান মিরাজ (২১)। শন উইলিয়ামসের কট অ্যান্ড বোল্ড হয়ে ফেরেন তিনি।
এর আগে আগের দিনের ৫ উইকেটে ২৩৬ রান নিয়ে দ্বিতীয় দিনে ব্যাট করতে নামে জিম্বাবুয়ে। পিটার মুর ৩৭ ও রেজিস চাকাভা ২০ রান নিয়ে খেলা শুরু করেন। যত দ্রুত সম্ভব সফরকারীদের গুটিয়ে দেয়ার প্রত্যয় নিয়ে মাঠে নামে বাংলাদেশ। চেষ্টাও চালান টাইগাররা। কিন্তু শুরুতে সাফল্য আসছিল না। তাদের পথে বাধা হয়ে দাঁড়ান মুর ও চাকাভা। ছন্দময় ব্যাটিং করেন তারা। বুক চিতিয়ে লড়তে থাকেন এ জুটি। তবে হঠাৎই ছন্দপতন। খেই হারান চাকাভা (২৮)। শর্ট লেগে নাজমুল হোসেন শান্তকে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন তিনি। দলীয় ২৬১ রানে তার বিদায়ে ভাঙে ৬০ রানের জমাট বেঁধে যাওয়া জুটি। প্রথম দিনের মতো দ্বিতীয় দিনেও স্বাগতিকদের প্রথম সাফল্য এনে দেন তাইজুল ইসলাম।
চাকাভা ফিরতেই পথ হারায় জিম্বাবুয়ে। যাওয়া-আসার মিছিলে যোগ দেন একের পর এক ব্যাটসম্যান। খানিক পরই মুশফিকুর রহিমের গ্লাভসবন্দি হয়ে ফেরেন ওয়েলিংটন মাসাকাদজা। আবারো শিকারী সেই তাইজুল। এরপর সাজঘরের পথ ধরেন ব্রেন্ডন মাভুতা। এবার প্রতিপক্ষ শিবিরে ছোবল মারেন নাগিনখ্যাত নাজমুল ইসলাম অপু। এলবিডব্লিউর ফাঁদে ফেলে তাকে ফেরান তিনি। পরের দৃশ্যপটে ফের তাইজুল। মেহেদি হাসান মিরাজের ক্যাচ বানিয়ে কাইল জার্ভিসকে ফেরান তিনি। এ নিয়ে ক্যারিয়ারে চতুর্থবার ৫ উইকেট শিকারের কীর্তি গড়েন বাঁহাতি স্পিনার।
এদিন তাইজুলের স্পিন বিষে নীল হয়েছে জিম্বাবুয়ে। তার ঘূর্ণি কোনোভাবেই পড়তে পারেননি প্রতিপক্ষ ব্যাটসম্যানরা। রোডেশিয়ানদের সবশেষ ব্যাটসম্যান হিসেবে সাজঘরের পথ ধরেন টেন্ডাই চাতারা। সেটিও শিকার এ বাঁহাতি স্পিনারের। লিটন দাসের তালুবন্দি করে তাকে ফেরান তিনি। এতে পরীক্ষিত এ সৈনিকের শিকার দাঁড়ায় ৬ উইকেট। এ পথে তাকে যোগ্য সহযোদ্ধার সমর্থন দেন অপু। তিনি ঝুলিতে ভরেন ২ উইকেট।
শেষ পর্যন্ত ২৮২ রান তুলতেই গুটিয়ে যায় লালচাঁদ রাজপুতের দল। সবাই এলে-গেলে শেষ পর্যন্ত থেকে যান মুর। এ পথে ক্যারিয়ারে চতুর্থ টেস্ট ফিফটি (৬৩) তুলে নেন তিনি। শেষদিকে তার লড়াকু ব্যাটেই এ সংগ্রহ পেয়েছে সফরকারীরা।