দেশের খবর: এ দফায় মন্ত্রী হওয়ার পর থেকে গত ১০ বছরের সম্পদের হিসাব দিলেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত; তাতে দেখা গেছে, এই সময়ে তার সম্পদ আগের দ্বিগুণ হয়েছে।
সোমবার সচিবালয়ে বসে অনলাইনে আয়কর বিবরণী দাখিলের পর সাংবাদিকদের কাছে নিজের সম্পদের হিসাব তুলে ধরেন মন্ত্রী হিসেবে বিদায় নিতে যাওয়া মুহিত।
এইচ এম এরশাদের সামরিক সরকারে অর্থমন্ত্রীর দায়িত্ব পালনকারী মুহিত ২০০৮ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের টিকিটে জয়ী হয়ে শেখ হাসিনার সরকারে অর্থমন্ত্রী হন।
দুই মেয়াদে একটানা ১০ বছর অর্থমন্ত্রীর দায়িত্ব পালনের পর এবার অবসরে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন মুহিত। সিলেট-১ আসন ভাইকে ছেড়ে দিয়েছেন তিনি, মন্ত্রীও আর হবেন না বলে জানিয়েছেন তিনি।
সম্পদের হিসাব দিয়ে অর্থমন্ত্রী বলেন, “অ্যাসেটটা বলি, ১০ বছরের হিসাবটা করে দিয়েছে। ১০ বছর আগে আমি যখন মন্ত্রী হই, তখন আমার অ্যাসেট ছিল এক কোটি ১৪ লাখ ৮৩ হাজার ৩৬ টাকা, আর আজকে মানে ৩০ জুন এটা হয়েছে ২ কোটি ২৮ লাখ ১৫ হাজার ৪৯৭ টাকা। এক কোটি ১৩ লাখ টাকা, যত ছিল ঠিক ততটাই বেড়ে গেছে এ ১০ বছরে।”
গত ১০ বছরের আয়ের হিসাব তুলে ধরে তিনি বলেন, “১০ বছরের টোটাল ইনকাম ২০০৮ থেকে ২০১৮ পর্যন্ত ৩ কোটি ৬৮ লাখ ২৯ হাজার ৬৫০, আর এতে অ্যাসেট ইনক্রিজ হয়েছে এক কোটি ১৩ লাখ ৩২ হাজার ৪৬১ টাকা। এক্সপেনডেচার আছে।”
গত ১০ বছর ধরে আয়কর বিবরণী প্রকাশ্যে জমা দেওয়ার কথা জানিয়ে এবারের করের হিসাব দিয়ে মুহিত বলেন, “টোটাল ১৭ লাখ ৯৭ হাজার ৩৪৮ ট্যাক্সেবল ইনকাম। নন ট্যাক্সেবল ১৬ লাখ ৩০ হাজার ৯৯৩ টাকা। টোটাল ইনকাম ৩৪ লাখ ২৮ হাজার ৩৪১।
“এখন দিচ্ছি টোটাল ট্যাক্স দুই লাখ ২৭ হাজার ৯২১ টাকা, এর মধ্যে এক লাখ ৫৪ হাজার ৪০০ টাকা দেওয়া হয়ে গেছে, আজকের চেকটা হচ্ছে ৬২ হাজার ৪৭৮ টাকার।”
কর কম হওয়ার কারণ ব্যাখ্যা করে তিনি বলেন, “আমার ট্যাক্স রিটার্ন খুব কম, তার কারণ হল আমার ইনভেস্টমেন্ট আছে। সেখান থেকে যথেষ্ট লেস ট্যাক্স দিই।”
গত ১০ বছরে আয়কর নিয়ে জনসচেতনতা বাড়ায় নিজের সন্তুষ্টির কথা জানান মুহিত।
“এ বিষয়ে সাইকোলজিক্যাল চেইঞ্জ হয়েছে। ২০০৭ বা ২০০৮ সালে ট্যাক্স অফিসারকে পছন্দ করত না। এ ধারণার ড্রামাটিক চেইঞ্জ হয়েছে। এখন তারা মনে করেন একটি সেবা দিচ্ছে এবং খুশি হয়ে দেশের জন্য কিছু দিচ্ছে। আমার খুব ভাল লাগে ট্যাক্স মেলাগুলো। তিন বছর আগে ১৫ লাখ ট্যাক্স দিত, এখন ৩৮ লাখ দেয়। আশা করি এক কোটি হতে বেশি দেরি হবে না।”
অন্যান্য মন্ত্রী ও সংসদ সদস্যরা প্রকাশ্যে আয়কর বিবরণী দিলে সেটা ভাল হত কি না- সাংবাদিকদের প্রশ্নে অর্থমন্ত্রী বলেন, “মন্ত্রীরা তাদের হিসাব প্রধানমন্ত্রীকে দেয়, সুতরাং তাদের অ্যাকাউনটিটবিলি আছে, আমার ধারণা কেউ যদি জানতে চান তাহলে ইজিলি জানতে পারবেন। প্রধানমন্ত্রীর কাছে রিটার্ন জানতে পারবেন। সাধারণ মানুষ রাইট টু ইনফরমেশনে দাবি করবে।
“তবে ট্যাক্স রিটার্ন খুব প্রাইভেট। নিয়ম হচ্ছে, আমারটা কেউ জানবে না, এটা ইনডিভিজুয়াল ইচ্ছা।”
আসন্ন নির্বাচন নিয়ে ভাবনার বিষয়ে মুহিত বলেন, “নির্বাচন তো আমি করছি না। আমার একটা রিলাক্স পিরিয়ড যাচ্ছে। কদিন পর আমার বয়স ৮৫ হবে, দিস ইজ গুড টাইম টু রিটায়ার।
‘কয়জন আছে আমার বয়স পর্যন্ত চাকরি করে’- প্রশ্ন করে নিজেই উত্তর দেন, “হ্যাঁ, মাহাথির সাহেব আছে।”
আওয়ামী লীগ আবার সরকার গঠন করলে অর্থমন্ত্রী কে হতে পারেন- সাংবাদিকদের প্রশ্নে মুহিত বলেন, “এটা প্রধানমন্ত্রীর সিদ্ধান্ত।”